• রাজনীতি

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবার যেভাবে ঘুরে দাঁড়াল জামায়াত

  • রাজনীতি

ফাইল ছবি

নিউজ ডেস্ক : স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে যে দলগুলো সবচেয়ে বেশি দমন-পীড়নের শিকার হয়েছিল,তাদের মধ্যে ওপরের দিকেই থাকবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নাম। গেল বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগের পতনের পর থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইসলামপন্থি দলটি দ্রুতই প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেয়েছে। এখানেই শেষ নয়, দীর্ঘ নিষ্পেষণের পর দলটি মাথা তুলে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে শক্ত অবস্থানও তৈরি করেছে। সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে বিষয়টি তুলে ধরেছে দ্য ডিপ্লোম্যাট। 

স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, জামায়াত এখন বাংলাদেশের ক্ষমতাধারী গোষ্ঠীর একটি হয়ে উঠেছে। দলটির সদস্যরা বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্বের জায়গায় চলে এসেছে। 

জামায়াতের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র ছিল বিএনপি। তাদেরকে ছেড়ে এখন জামায়াত হাসিনা বিরোধী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের গড়া নতুন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে সমঝোত করে চলছে। জামায়াত এনসিপির এই মিত্রতা এখন বিএনপি থেকে আলাদা অবস্থান নিয়েছে দেশের রাজনীতিতে। সঙ্গে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার এজেন্ডাকে নিজেদের অনুকূলে নিতে চাইছে।

গত মে মাসে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছিল, জামায়াত ও এনসিপি রাস্তায় নেমে এই দাবি তুলেছিল। পরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের দাবি মেনে নিয়ে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত করে। হাসিনা সরকারের সময় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের অনেককেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, আবার তাদের অনেকে কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। এদের মধ্যে গোলাম আযম, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, দেলাওয়ার হোসেইন সাঈদী, কামারুজ্জামানসহ আরও অনেকেই ছিলেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ ট্রাইব্যুনালের প্রক্রিয়াগত ত্রুটি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছিল বিগত সময়ে। 

২০১৩ সালে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়। এরপর নানা সময় নিষিদ্ধের দাবি উঠলেও এই দল আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ হয় গেল বছরের আগস্টে এসে। এর ফলে অনেক জামায়াতকর্মী নিজেদের পরিচয় লুকিয়ে আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগে প্রবেশ করেন। কেউ কেউ সরকারি চাকরিতেও ঢুকে পড়েন।

জামায়াত একটি ইসলামি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানায়। স্থানীয় পর্যায়ে দলটি ধর্মীয়, সামাজিক, খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে এমন শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। 

তবে সমালোচকরা বলেন, নারী ও সংখ্যালঘুদের সমঅধিকারে দলটির ওপর আস্থা রাখা যায় না মোটেও। শেষ কিছু দিনে জামায়াত নারী ও সংখ্যালঘুবান্ধব কিছু বক্তব্য দিয়েছে। তবে সমালোচকরা একে কৌশলগত রূপান্তর বলে মনে করছেন। তাদের অভিমত, দলটিতে মৌলিক আদর্শগত পরিবর্তন হয়নি।

দলটির সংবিধানে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর নির্দেশনা অনুযায়ীই নীতি প্রণয়ন করা হবে।’ দলটির প্রশিক্ষণ সিলেবাস ও ওয়েবসাইটে প্রতিষ্ঠাতা আবুল আ’লা মওদুদীর বই বিদ্যমান। মওদুদীকে অনেকে চরমপন্থী মনে করেন। তবে কিছু গবেষক বলেন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক দমননীতি প্রেক্ষাপটে তার চিন্তাভাবনা বোঝা উচিত। 

বর্তমানে অনলাইন কর্মীদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করছে জামায়াত। বিএনপিবিরোধী বক্তব্যকেও মূলধারায় আনতে পেরেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দলটি তাদের পরিচয় গোপন করে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। 

সম্প্রতি সেখানে জুলাই আন্দোলন নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে জামায়াতসম্পৃক্ত সংগঠনগুলো সেখানে। তাতে সাবেক এক মার্কিন কূটনীতিকও অংশ নিয়েছেন। তবে তাদের অনেকেই জানতেন না এটি জামায়াতের আয়োজন।

এনসিপির সঙ্গে জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির সমন্বয় করার ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের উপস্থিতি কমে গেছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতার দায়ে বহুদিন কলঙ্কিত হয়ে এসেছে জামায়াত। তবে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দেড় দশকে ‘৭১-এর চেতনা’র ব্যবহারের ফলে জামায়াতের এই বিষয়টি এখন সাধারণ ভোটারদের কাছে আগের মতো প্রভাব বিস্তার করছে না।

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামও সম্প্রতি বলেছেন, ‘কে ’৭১-এর পক্ষে আর কে বিপক্ষে- এই রাজনীতি দেশের জন্য পুরনো কাঠামো।’ জামায়াত কেবল এনসিপি নয়, খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এমনকি হেফাজতে ইসলামসহ অন্য ইসলামি সংগঠনগুলোর সঙ্গেও জোট গড়ার চেষ্টা করছে। যার ফলে বাংলাদেশের মূলধারার রাজনীতি ডানদিকে সরে যেতে পারে। এদিকে বিএনপি, যারা ঐতিহ্যগতভাবে মধ্যডানপন্থি দল, তারা এখন অপেক্ষাকৃতভাবে মধ্যপন্থার দিকে সরে যাচ্ছে।

ভোটের রাজনীতিতে এককভাবে জামায়াত বড় শক্তি নয়। সে কারণে এনসিপির সঙ্গে থেকে রাজনৈতিক মঞ্চে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করছে তারা। 

এর পাশাপাশি তারা নির্বাচনী পদ্ধতিতে সংস্কারের দাবিও তুলছে। বর্তমান ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট (এফপিটিপি) পদ্ধতি বাদ দিয়ে অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি চালুর প্রস্তাব করছে। এতে ছোট দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব বাড়বে। যদিও বিএনপি এই সংস্কারের বিপক্ষেই অবস্থান নিচ্ছে। 

বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতের এই পুনরুত্থান শুধু দেশীয় রাজনীতিই নয়, বৈশ্বিক ইসলামি রাজনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বাংলাদেশে জামায়াতসহ রক্ষণশীল শক্তিগুলোর ওপর তুরস্ক আর্থিক ও কৌশলগত প্রভাব বাড়িয়ে দিয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব আরও কমে পেতে পারে।

মন্তব্য (০)





image

নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি এখনও উপযোগী নয়: তারেক রহমান

নিউজ ডেস্কঃ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্র...

image

একাত্তরকে ভুলিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে: মির্জা ফখরুল

নিউজ ডেস্কঃ দেশে একাত্তরকে ভুলিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে মন্তব...

image

জুলাই সনদে বিএনপির ৩ বিষয়ে আপত্তি

নিউজ ডেস্ক : জুলাই জাতীয় সনদকে সংবিধানের ওপর প্রাধান্য দেওয়ার পক্ষপাতী ন...

image

জুলাই সনদ নিয়ে দলীয় মতামত জমা দিয়েছে বিএনপি

নিউজ ডেস্ক : জুলাই সনদ নিয়ে দলীয় মতামত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে জমা দিয়...

image

জুলাই সনদের ভিত্তিতে আসন্ন সংসদ নির্বাচন চায় এবি পার্টি

নিউজ ডেস্ক : জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পাঠানো জুলাই জাতীয় সনদ ২০...

  • company_logo