
নিউজ ডেস্ক : চট্টগ্রামে ফের ঊর্ধ্বমুখী চালের বাজার। জুলাই মাসের শুরুতে একদফা চালের দাম বেড়েছিল। মাসের মাঝামাঝি এসে দাম কিছুটা স্থিতিশীল হয়। এখন আবার দাম বেড়েছে। সব ধরনের চালের বস্তায় দাম বেড়েছে ২৫০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। উপজেলাগুলোতে দাম আরও বেশি।
ব্যবসায়ীদের দাবি, বোরো মৌসুম শেষ হওয়ায় বাজারে চালের সরবরাহ কমেছে। কিছু অসাধু মিলমালিক ও ব্যবসায়ী চাল বেপরোয়াভাবে মজুত করছেন। এসব কারণে মূলত চালের দাম হু হু করে বাড়ছে। এছাড়া কিছু কিছু করপোরেট হাউজ সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে বিপুল পরিমাণ চাল মজুত করে রাখছে। এ কারণে দিন দিন চালের বাজার অস্থির হচ্ছে। দাম বাড়ার এ তালিকায় রয়েছে সয়াবিন তেল, পামঅয়েল, মসুর ডাল, মুগ ডাল ও পেঁয়াজ।
জেলা প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বাজারে অভিযান পরিচালনা করেও চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এদিকে কোনো কারণ ছাড়াই বেড়েছে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম। মৌসুমে চালের অতিরিক্ত দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে অস্বস্তি বিরাজ করছে। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ চাল মজুতদারদের বিরুদ্ধে নগরীর চাক্তাই চালপট্টিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে ও বাজারের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে অতিরিক্ত চাল মজুত করে রেখেছেন। অভিযানে অতিরিক্ত চাল মজুত রাখায় ও ফুড গ্রেইন লাইসেন্স না থাকায় দুটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়। এছাড়া বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা হয়। এরপর প্রতিনিয়ত অভিযান চালানো হচ্ছে। তারপরও চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।
নগরীর চাক্তাই চালপট্টি ঘুরে দেখা যায়, সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। পাইকারী বাজারে মোটা সিদ্ধ চালের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ৩০০ টাকা বেড়ে মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকায়। একইভাবে প্রতি বস্তায় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়ে মানভেদে মিনিকেট আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার ৩০০ টাকা। দিনাজপুরী পাইজাম ৪ হাজার ৪০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা। যা আগে ছিল ৩ হাজার ৯০০ টাকার কাছাকাছি। কাটারিভোগ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৪০০ টাকার বেশি দামে।
স্বর্ণা সিদ্ধ চাল প্রতি বস্তা ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা আগে ছিল ৩ হাজার ১০০ টাকা। নাজিরশাইল সিদ্ধ ৩ হাজার ৭০০ থেকে ৪ হাজার ১০০ টাকা। যা আগে ছিল ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ১০০ টাকা। পাইজাম সিদ্ধ ৪ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার ৪০০ টাকা। যা আগে ছিল ৩ হাজার ৫০০ টাকা। চিনিগুঁড়া চাল বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৬ হাজার টাকা দরে। তবে মানভেদে ২০০ টাকা কমবেশি রয়েছে।
খুচরা বাজারে জাত ও মানভেদে চিকন নাজিরশাইল চাল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, মিনিকেট ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর মাঝারি মানের বিআর ২৮ ও ২৯ চাল ৬২ থেকে ৬৫ টাকা এবং গুটি, স্বর্ণা, চায়না ইরিসহ মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৫৮ টাকায়। যা আগে প্রতি কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত কম ছিল।
চালের পাশাপাশি খুচরা বাজারে গত দুদিনের ব্যবধানে সয়াবিন ও পামঅয়েলের দাম বেড়েছে। প্রতি কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে মাঝারি দানার মসুর ডাল ১০৫ থেকে ১২৫ টাকা ও ছোট দানা মসুর ডাল ১৩০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মসুরের পাশাপাশি মুগ ও অ্যাংকর ডালের দামও বাড়তি। একদিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি মুগ ডালে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল বাজারে প্রতি কেজি মুগ ডাল মানভেদে ১২০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়; যা একদিন আগে ১১০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর অ্যাংকর ডালের কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে তা ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি দুই লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলে পাঁচ টাকা বেড়ে ৩৭৫ থেকে ৩৭৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার খোলা পামঅয়েলে দুই টাকা বেড়ে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা ও সুপার পামঅয়েলে ২ টাকা বেড়ে ১৫২ থেকে ১৬২ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বেড়েছে মসুর ডালের দাম। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। তবে মানভেদে ৫ টাকা কমবেশি রয়েছে।
এছাড়া মাষকলাই ডাল ১৮০ টাকা, ডাবলি ৬০, ছোলা ১১০, কাজু বাদাম এক হাজার ৭০০, পেস্তা বাদাম দুই হাজার ৭০০, কাঠ বাদাম এক হাজার ২২০, কিশমিশ ৬০০ থেকে ৭০০, দারুচিনি ৫২০, লবঙ্গ এক হাজার ৪০০, কালো গোলমরিচ এক হাজার ৩০০, সাদা গোলমরিচ এক হাজার ৬০০, জিরা ৬০০, প্যাকেট পোলাও চাল ১৩০ থেকে ১৫০, খোলা পোলাও চাল মানভেদে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
টানা বর্ষণের প্রভাবে চট্টগ্রামে বেড়েছে সবজির দাম। তবে কিছুটা কমেছে কাঁচা মরিচের দাম। সবজির মধ্যে পটোল ৫০ টাকা, করল্লা ৬০ থেকে ৮০, বরবটি ৭০ থেকে ৮০, ঝিঙা, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৭০, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০, টমেটো ১২০ থেকে ১৩০, কাঁকরোল ৬০ থেকে ৭০, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সবজির মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে শসার দাম। কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে হাইব্রিড শসা ৭০ থেকে ৮০ টাকা ও দেশি শসায় ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে তা ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর কাঁচামরিচ মানভেদে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গতকাল খুচরা বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। কেজিতে পাঁচ টাকা কমে তা ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে বিভিন্ন ধরনের চাষের মাছের মধ্যে কই ২০০ থেকে ২৩০ টাকা, শিং ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, রুই, কাতল ৩০০ থেকে ৪৫০, পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা, চিংড়ি ৬০০ থেকে ৯৫০ টাকা, পাবদা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ইলিশ মাছের দাম নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের নাগালের বাইরে।
মন্তব্য (০)