
বিনোদন ডেস্ক : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’র ৯০তম বছরে মুক্তি পেতে চলেছে সুমন মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’। এটি দীর্ঘ ১৫ বছর ক্যামেরাবন্দি থাকার পর মুক্তি পেতে যাচ্ছে। মুক্তির পূর্বমুহূর্তে কলকতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন সিনেমার পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায়, অভিনেতা-অভিনেত্রী, প্রেসিডেন্সির ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সুমিত চক্রবর্তী এবং বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সন্দীপকুমার মণ্ডল প্রমুখ।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ সিনেমায় কুসুম চরিত্রে অভিনয় করেছেন দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। কুসুম চরিত্রে অভিনয় প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেন, ‘বরাবর নারীকেই কামনা ও বাসনার বস্তু হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু কুসুমেরও নিজের কামনা-বাসনা রয়েছে, যা সে লুকোয় না। কুসুম একটা খোলা বইয়ের মতো।
এদিকে আলোচনাসভায় সিনেমা প্রসঙ্গে পরিচালক সুমন বলেন, ১৫ বছর পর মুক্তি পেলেও সিনেমার গল্প সমসাময়িক। সেই সময়ের সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আর এখনকার সময়ের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য খুঁজে পান না তিনি। ঠিক যেমন পর্দার ‘কুসুম’ আর বাস্তবের জয়া আহসানের মধ্যে তেমন ফারাক নেই।
তিনি বলেন, আমি চিত্রনাট্য নিয়েই কথা বললাম মূলত। উপন্যাস নিয়ে কথা অনেকেই বলেছেন। অনেক লেখালেখিও হয়েছে। ‘শরীর শরীর শরীর, তোমার মন নেই কুসুম’— এই সংলাপ নিয়েই কথা লেখা হয়েছে। এই সংলাপ কি শশীর, না কি মানিকের নিজের, তা কিন্তু উপন্যাসে স্পষ্টভাবে উঠে আসে না; কিন্তু চিত্রনাট্যে সেটি স্পষ্ট।
এ নির্মাতা বলেন, কুসুমের মন, শরীর ও আত্মা সব এক রকম। এখানেই শশীর সঙ্গে তার পার্থক্য। কুসুম কিন্তু শশীর চরিত্রকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা রাখে। সে এতটাই খোলা মনের, সতেজ একটি চরিত্র।
সুমন বলেন, কুসুমের মধ্যে কোনো জড়তা নেই। আমাদের সবার মধ্যে একটা লক্ষ্মণরেখা থাকে। এটা কুসুমের মধ্যে নেই বলেই সে এত আধুনিক। আমি নিজেও কুসুমের মতো হতে পারব না। এই গ্রামবাংলার বাউলদের কথাই যদি বলা যায়, তাদের দেহ, মন, আত্মা— সব মিলেমিশে একাকার। যাহা ভাঙে, তাহাই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে।
এর আগে ট্রেলার মুক্তির অনুষ্ঠানে ঔপন্যাসিকের বিখ্যাত সংলাপ— ‘শরীর! শরীর! তোমার মন নাই কুসুম?’-এর নানান ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন অভিনেত্রী জয়া আহসান। ‘কুসুম’ যদি শরীরকে এগিয়ে রাখে, জয়া কাকে প্রাধান্য দেন— মনকে? এমন প্রশ্ন ছিল অভিনেত্রীর কাছে। স্মিত হেসে জয়া বলেছিলেন, মন দিয়ে তো মানুষকে ছোঁয়া যায় না। শরীর দিয়ে মন ছুঁতে হয়। আমার জীবনে মন ও শরীর— উভয়ের ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ। আমার বিশ্বাস কুসুমেরও তাই।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাসকে পর্দায় ধরবেন। কিন্তু ভাবলেই তা হচ্ছে কই? কখনো তিনি মানিক বন্দোপাধ্যায়ের গল্পের স্বত্ব পাচ্ছেন না। আবার কখনো প্রযোজক। প্রযোজনা সংস্থা ক্যালাইডোস্কোপের কর্ণধার সমীরণ দাস এগিয়ে আসার পর দুই সমস্যার সমাধান যদিও বা হলো, বাধ সাধল অতিমারী।
সিনেমার প্রত্যেক চরিত্র একুশ শতকের মতোই ভাগ্যের হাতের ‘পুতুল’? জানতে চাইতেই পরিচালক বলেন, কমবেশি প্রত্যেকে। সিনেমার নায়ক শশী যেমন হাজার চেয়েও নিজের গ্রামের বাইরে পা রাখতে পারেনি। ইচ্ছা থাকলেও আমি তেমনি সিনেমা নির্মাণ করেই তার মুক্তি ঘটাতে পারিনি। যদিও এত লম্বা সময় বৃথা যায়নি।
সুমন বলেন, তিনি এই সময় নানা জায়গায় গেছেন। যে জায়গা তার ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’র শুটিংয়ের উপযুক্ত মনে হয়েছে, সেসব জায়গার ভিডিও তুলে রেখেছিলেন।
মন্তব্য (০)