
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ সম্প্রতি সংঘটিত ১২ দিনের যুদ্ধে অংশ নেওয়ার সময় ইরানের আকাশসীমার গভীরে গিয়ে ইসরায়েলের একটি এফ-১৫ যুদ্ধবিমানের জ্বালানি ট্যাংকে ত্রুটি ধরা পড়ে। সামনে তখন মাত্র দুটি পথ খোলা- জরুরি অবতরণ কিংবা মাঝ আকাশে রিফুয়েলিং। সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছিল, পাইলটের সামনে দাঁড়িয়ে ভয়াবহ এক সিদ্ধান্তের মুহূর্ত।
কঠিন সে পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্তটিই নিতে সক্ষম হন ইসরায়েলি সেই পাইলট। শেষ মুহূর্তে জরুরি রিফুয়েলিংয়ের মাধ্যমে বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় বিমানটি। সেদিন ঠিক কী ঘটেছিল তা এবার প্রকাশ্যে আনল ইসরায়েলি গণমাধ্যম।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিমানটি ইরানের রাজধানী তেহরানের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময়েই এর পাইলট জ্বালানি ট্যাংকে সমস্যার বিষয়টি টের পান এবং তাৎক্ষণিকভাবে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন।
যেহেতু অভিযানে কোনো অ্যারিাল রিফুয়েলিং (আকাশে জ্বালানি সরবরাহকারী) বিমান সঙ্গে ছিল না, তাই জরুরি ভিত্তিতে একটি রিফুয়েলিং প্লেন পাঠানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। একইসঙ্গে বিকল্প পরিকল্পনা হিসেবে একটি প্রতিবেশী দেশে জরুরি অবতরণ করার প্রস্তুতিও রাখা হয়েছিল, যাতে যুদ্ধবিমানটি ইরানের মাটিতে নামতে না হয়।
তবে শেষ পর্যন্ত জ্বালানি সরবরাহকারী বিমান সময়মতো পৌঁছাতে সক্ষম হয় এবং যুদ্ধবিমানটিকে মিশন থেকে ফিরিয়ে না এনে পুনরায় কার্যক্রমে যুক্ত রাখা সম্ভব হয়।
চ্যানেল ১২-এর দাবি অনুযায়ী, মিশনটি সফলভাবেই সম্পন্ন হয়েছে এবং আর কোনো জটিলতা ঘটেনি।
চ্যানেল ১২ আরও জানায়, গত ১৩ জুন ইসরায়েলের ইরানে আকস্মিক হামলার আগে ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর প্রধান টোমার বার একটি অভ্যন্তরীণ বৈঠকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে, হামলার প্রথম ৭২ ঘণ্টায় ১০টি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হতে পারে। তবে তার এ পূর্বাভাস ভুল প্রমাণিত হয়েছে। পুরো যুদ্ধে ইসরায়েলের কোনো বিমান ভূপাতিত হয়নি।
এদিকে, ইরানি রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম দাবি করেছিল, তারা দুইটি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে এবং এক পাইলটকে আটক করেছে। তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর আরবি মুখপাত্র কর্নেল আভিখাই আদ্রেয়ি এ দাবিকে "ভুয়া এবং ভিত্তিহীন" বলে উড়িয়ে দেন।
ইসরায়েল দাবি করেছে, তাদের এই ব্যাপক হামলার লক্ষ্য ছিল ইরানের শীর্ষ সামরিক নেতা, পরমাণু বিজ্ঞানী, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি। তারা বলেছে, ইরান যাতে ইসরায়েল ধ্বংসের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে না পারে, সে জন্যই এই হামলা চালানো হয়।
ইরান পরমাণু অস্ত্র অর্জনের অভিপ্রায় অস্বীকার করলেও, দেশটি শান্তিপূর্ণ প্রয়োগের বাইরে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে, আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের কার্যক্রমে বাধা দিয়েছে এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা বাড়িয়েছে। ইসরায়েলের দাবি, ইরান সম্প্রতি অস্ত্রায়নের দিকে অগ্রসর হয়েছে।
ইসরায়েলের এই হামলার জবাবে ইরান ৫০০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং প্রায় ১,১০০ ড্রোন ছুড়ে। ইসরায়েলি স্বাস্থ্য বিভাগ ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, এ হামলায় ২৮ জন নিহত ও তিন হাজারের বেশি মানুষ আহত হন।
সবমিলিয়ে ইসরায়েলে ৩৬টি ক্ষেপণাস্ত্র এবং একটি ড্রোন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় আঘাত হানে, যার ফলে ২৪০টি ভবনের ২,৩০৫টি বাসা, দুইটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ১৩,০০০-এরও বেশি ইসরায়েলি নাগরিক বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
মন্তব্য (০)