
নিউজ ডেস্কঃ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাবার নামে ইস্যু হওয়া ঠিকাদারি লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) এই সংক্রান্ত আদেশ জারি করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
এতে সই করেন এলজিইডির কুমিল্লা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল মতিন। আদেশের অনুলিপি, এলজিইডি ঢাকার প্রধান প্রকৌশলী, কুমিল্লা অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, মেসার্স ইসরাত এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর বিল্লাল হোসেনের কাছেও পাঠানো হয়েছে।
আদেশে বলা হয়, মেসার্স ইসরাত এন্টারপ্রাইজ, প্রো. মো. বিল্লাল হোসেন, গ্রাম আকবপুর, ডাকঘর গাজীপুর, উপজেলা মুরাদনগর, জেলা কুমিল্লা। তিনি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের অধীনে সীমিত দরপত্র পদ্ধতিতে তালিকাভুক্ত ঠিকাদার। এই ঠিকাদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার লাইসেন্সের কার্যকারিতা বাতিল করা হলো। লাইসেন্সের মূল কপি এলজিইডির কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
এদিকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের ফেসবুক পোস্টের পর বিষয়টি আলোচনায় আসে। এরপর বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আসিফ মাহমুদ নিজের ফেসবুক পেইজে একটি পোস্ট দিয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন এবং বাবার ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
আরও পড়ুন: বাবার ভুলের জন্য ক্ষমা চাইলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া পোস্টটি তুলে দেওয়া হলো: “প্রথমেই আমার বাবার ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
গতকাল রাত ৯ টার দিকে একজন সাংবাদিক কল দিয়ে আমার বাবার নামে ইস্যুকৃত ঠিকাদারি লাইসেন্সের বিষয়ে জানতে চাইলেন। বাবার সাথে কথা বলে নিশ্চিত হলাম তিনি জেলা পর্যায়ের (জেলা নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার এর কার্যালয় থেকে ইস্যুকৃত) একটি লাইসেন্স করেছেন। বিষয়টি উক্ত সাংবাদিককে নিশ্চিত করলাম। তিনি পোস্ট করলেন, নিউজও হলো গণমাধ্যমে। নানা আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে তাই ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজনবোধ করলাম। আমার বাবা একজন স্কুল শিক্ষক। আকুবপুর ইয়াকুব আলী ভুঁইয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। স্থানীয় একজন ঠিকাদার কাজ পাওয়ার সুবিধার্থে বাবার পরিচয় ব্যবহার করার জন্য বাবাকে লাইসেন্স করার পরামর্শ দেন। বাবাও তার কথায় জেলা নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার থেকে একটি ঠিকাদারি লাইসেন্স করেন। রাষ্ট্রের যেকোন ব্যক্তি ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে যেকোন লাইসেন্স করতেই পারে। তবে আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় বাবার ঠিকাদারি ব্যবসায় জড়ানো স্পষ্টভাবেই কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট। বিষয়টি বোঝানোর পর আজ বাবার আবেদনের প্রেক্ষিতে লাইসেন্সটি বাতিল করা হয়েছে।
বাবা হয়তো কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের বিষয়টি বুঝতে পারেন নি, সেজন্য বাবার পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
উল্লেখ্য, মধ্যবর্তী সময়ে উক্ত লাইসেন্স ব্যবহার করে কোন কাজের জন্য আবেদন করা হয়নি।”
পোস্টের সঙ্গে লাইসেন্স বাতিলের আদেশের কপিও সংযুক্ত করে দিয়েছেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া।
এর আগে গতকাল রাতে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিযেছিলেন সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের। এতে তিনি লিখেছিলেন— “স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পিতা জনাব বিল্লাল হোসেনের প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের 'ঠিকাদার তালিকাভুক্তি' কপি হাতে এসেছে।
যাচাই করে দেখা যায় এ বছরের ১৬ মার্চ নির্বাহী প্রকৌশলী, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (কুমিল্লা), উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পিতার প্রতিষ্ঠানটি তালিকাভুক্ত করেন।
এ বিষয়ে জানতে আমি উপদেষ্টা জনাব আসিফ মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করি। তিনি প্রথমে এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান ও কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে বলেন। তিনি সময় নিয়ে যাচাই করে জানান লাইসেন্স ও তালিকাভুক্তির বিষয়টি সঠিক, কিন্তু এটা তাঁর জ্ঞাতসারে করা হয়নি। স্থানীয় জনৈক ঠিকাদার তাঁর শিক্ষক পিতাকে ঠিকাদারি লাইসেন্সটি করতে এবং তালিকাভুক্ত করতে প্ররোচিত করেন। তিনি আরো জানান এই লাইসেন্স ও তালিকাভুক্তির ব্যবহার করে কোন ধরনের কাজ করা হয়নি। ”
মন্তব্য (০)