
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করায় গাজায় আটক থাকা জিম্মিদের মুক্তি ‘অনির্দিষ্টকালের’ জন্য স্থগিত করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এরপরই গাজায় ফের যুদ্ধ শুরুর হুমকি দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
এমনকি হামাস চূড়ান্তভাবে পরাজিত না হওয়া পর্যন্ত ইসরাইলি বাহিনী যুদ্ধ করবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। খবর আলজাজিরার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি শনিবারের মধ্যে হামাস সেখানে আটক থাকা জিম্মিদের মুক্তি না দেয় তাহলে গাজায় যুদ্ধ আবার শুরু হবে বলে নেতানিয়াহু হুমকি দিয়েছেন।
গাজায় গত ১৯ জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। তিন-পর্যায়ের এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যে বন্দি বিনিময় এবং স্থায়ী শান্তি, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরাইলি বাহিনী প্রত্যাহারের লক্ষ্যমাত্রাও রয়েছে। তবে ইসরাইল এই চুক্তির মূল বিধান লঙ্ঘন করেছে বলে হামাস অভিযোগ তোলার পর চলমান যুদ্ধবিরতির ধারাবাহিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে শনিবার গাজায় আটক থাকা তিন বন্দির মুক্তি লাভের কথা রয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে নেতানিয়াহু বলেছেন, যদি শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে হামাস আমাদের বন্দিদের ফিরিয়ে না দেয়, তাহলে যুদ্ধবিরতি শেষ হয়ে যাবে এবং হামাস শেষ পর্যন্ত পরাজিত না হওয়া পর্যন্ত (ইসরাইলি সেনাবাহিনী) তীব্র লড়াইয়ে ফিরে যাবে।
হামাস বলেছে, ইসরাইলি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে এটি নিয়ে আর দর কষাকষির সুযোগ নেই এবং ইসরাইলি বন্দিদের আসন্ন মুক্তি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করছে তারা। সোমবার হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবেইদা বলেছেন, প্রতিরোধ নেতৃত্ব শত্রুপক্ষের চুক্তি লঙ্ঘন এবং চুক্তির শর্তাবলীর প্রতি তাদের অসম্মতির বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছে। এদিকে হামাস তার সমস্ত বাধ্যবাধকতা পূরণ করে চলেছে।
হামাস বলেছে, ইসরাইল সব বাধ্যবাধকতা ঠিক মতো মেনে চললে বন্দি বিনিময়ের দরজা খোলা থাকবে। হামাসের এই মুখপাত্র উত্তর গাজায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের ফেরাতে বিলম্ব করা, মানুষের ওপর গুলি চালানো এবং মানবিক সহায়তা অনুমোদনে ব্যর্থতার অভিযোগ করেছেন ইসরাইলের বিরুদ্ধে।
এরপর নেতানিয়াহু মঙ্গলবার একের পর এক টুইট বার্তায় হামাসকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জন্য দোষারোপ করেন এবং বলেন, তিনি ইসরাইলি সেনাবাহিনীকে গাজা উপত্যকার অভ্যন্তরে এবং চারপাশে বাহিনী জড়ো করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এ পর্যন্ত চুক্তির অংশ হিসাবে হামাস ইসরাইলি কারাগারে বন্দি শত শত ফিলিস্তিনিদের বিনিময়ের ধারাবাহিকতায় ২১ বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। মূলত গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি শুরুর পর ১৬ ইসরাইলি ও পাঁচ থাই বন্দি মুক্তি পেয়েছেন। বিনিময়ে ইসরাইলের কারাগার থেকে ৫৬৬ জন বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
তিন সপ্তাহের মধ্যে যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে মোট ৩৩ বন্দি ও ১৯০০ বন্দি বিনিময় হওয়ার কথা রয়েছে। ইসরাইল জানিয়েছে, ৩৩ জনের মধ্যে আটজন আর জীবিত নেই। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরাইলে নজিরবিহীন হামলার সময় হামাস মোট ২৫১ জনকে আটক করেছিল।
জবাবে ইসরাইল গাজা ভূখণ্ডে ব্যাপক আগ্রাসন চালায় এবং এতে মোট ৪৮ হাজার ফিলিস্তিনি মারা গেছেন বলে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
মন্তব্য (০)