• জাতীয়

শুধু প্রকল্প গ্রহণ করলেই হবে না,অগ্রগতি ও সমন্বয় জরুরি

  • জাতীয়
  • ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০১:৫৫:৪২

ছবিঃ সিএনআই

নিউজ ডেস্কঃ ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ), বিআরটিএ, সিটি কর্পোরেশন, মন্ত্রণালয় মিলে সড়ক ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রকল্পে পর প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কিন্তু আশানুরূপ ফল আসে না। প্রকল্পের অগ্রগতি আদৌ হচ্ছে কি না খবর রাখা হয় না। যেকারণে ইতোপূর্বে অধিকাংশ প্রকল্প দেখেনি আলোর মুখ। এর দায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর মধ্যকার সমন্বয়হীনতা।

বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সভাকক্ষে ‘ট্রাফিক সার্কুলেশন সেবা’ বিষয়ক গণশুনানির আয়োজন করা হয়। সেখানে অংশীজনদের পক্ষ থেকে এসব বক্তব্য উঠে আসে।

ডিটিসিএ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১২ এর আওতায় ডিটিসিএ অধিভুক্ত এলাকায় পরিবহন ব্যবস্থাকে সুষ্ঠু, পরিকল্পিত, সমন্বিত ও আধুনিকীকরণ করার লক্ষ্যে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর এবং নরসিংদী জেলাকে অন্তর্ভুক্ত করে ‘ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)’ প্রতিষ্ঠা করা হয়।

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ আইন-২০১২ এর ধারা (৯) এর উপধারা (চ) অনুসারে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) অধিভুক্ত এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণ ও আবাসিক প্রকল্প গ্রহণের পূর্বে ডিটিসিএ হতে যানবাহন প্রবেশ-নির্গমন ও চলাচল (Traffic Circulation) সংক্রান্ত নকশা অনুমোদন ও ছাড়পত্র গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

ডিটিসিএ হতে ট্রাফিক সার্কুলেশন সংক্রান্ত ছাড়পত্র গ্রহণ ও নকশা অনুমোদন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, দপ্তর, সংস্থার পরামর্শ ও মতামত গ্রহণের উদ্দেশ্যেই মূলত আজকে ডিটিসিএ-এর নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সাবিহা পারভীনের সভাপতিত্বে এই গণশুনানির আয়োজন করা হয়।

গণশুনানির শুরুতে ট্রাফিক সার্কুলেশন ছাড়পত্র সংক্রান্ত খসড়া নির্দেশিকার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন ডিটিসিএ -এর ডেপুটি আর্কিটেক্ট সৈয়দ মাহফুজ-উল-ইসলাম।

তিনি সাম্প্রতিক সময়ে ব্লকভিত্তিক ডেভেলপমেন্টের প্রসারের কারণে অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স ও অন্যান্য বৃহৎ প্রকল্পের নির্মাণ প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রেজেন্টেশন তুলে ধরে বলেন, অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স ডিজাইন করার সময় পার্কিং সংখ্যা নির্ধারণে অবশ্যই জনঘনত্ব বা অ্যাপার্টমেন্ট সংখ্যা বা বিএনবিসি-২০২০ অনুসরণে করতে হবে।

এছাড়াও ‘ট্রাফিক সার্কুলেশন সংক্রান্ত নকশা’ প্রস্তুতকরণে ঢাকা মহানগর এলাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা, বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড, অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ বিধিমালা-২০১৪, বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা-২০১৫, ঢাকা মহানগর ইমারত (নির্মাণ, উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও অপসারণ) বিধিমালা-২০০৮ ও মহাসড়ক আইন ২০২১ সহ এ সংক্রান্ত আইন, বিধিমালা, নীতিমালা ও গাইডলাইন অনুসরণ করতে হবে।

‘ইমারত’ প্রকল্প বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ইমারত’ প্রকল্পসমূহে যেখানে গাড়ির ট্রিপ সংখ্যা ১০০ এর বেশি সে সমস্ত প্রকল্পের অভ্যন্তরে যথাযথভাবে প্রস্তাবিত নকশায় সন্নিবেশিত করতে হবে।

গণশুনানিতে অংশীজনদের মধ্যে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের আরবান প্লানার সানজিদা হক বলেন, ঢাকাকে কেন্দ্র করেই কেন বার বার প্রকল্প করতে হবে। ইতোপূর্বে অনেক প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। প্রকল্প শুধু করলেই হবে না এটা ফলপ্রসূ হচ্ছে কি না, বাস্তবতাসম্মত কি না এবং সমন্বয় থাকছে কি না তা দেখতে হবে। ঢাকার যে অবস্থা তাতে নতুন করে ঢাকাকে গোছানোর মতো প্রকল্প এখানে টেকসই হবে না। প্রকল্প নিতে হবে ঢাকার বাইরে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কপোর্রেশনের পক্ষ থেকে আসা কর্মকর্তা বলেন, ঢাকার সব অঞ্চলের জন্য একই নির্দেশনা বা নিয়ম প্রযোজ্য নয়। কারণ ঢাকার মধ্যে সবচেয়ে মেগা অঞ্চল পুরান ঢাকা। এরমধ্যে সূত্রাপুর অন্যতম। এখন আপনি যদি ধানমন্ডি কিংবা গুলশানের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন বা সূত্রাপুর এলাকার ওপর একই নির্দেশনা বা নিয়ম চাপিয়ে দেন তা কিন্তু সঠিক হবে না।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এখানে নতুন নতুন ইমারত গড়ার ক্ষেত্রে এই নিয়ম হয়তো প্রযোজ্য হবে। কিন্তু সার্বিকভাবে সব ইমারত ভেঙে ডিটিসিএ এর নির্দেশনা বাস্তবায়ন কিন্তু অসম্ভব।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের প্রতিনিধি তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঢাকা শহরে সড়ক ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত যতো সিদ্ধান্ত বা প্রকল্প হয় এর বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অধিকাংশ প্রকল্প করার ক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশের কাউকে রাখা হয় না, পরামর্শ বা সুপারিশ চাওয়া হয় না, চাইলেও তা মানতে দেখা যায়নি।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ঢাকায় অনেকগুলো ইউটার্ন করেছে ডিএনসিসি। আমরা তখন বার বার বলেছি এসব করলে আরও যানজট বাড়বে। কিন্তু আমাদের কথা শোনা হয়নি। ইউটার্ন পয়েন্ট তৈরি করা হয়। সেখানে রাস্তা সরু হলো। যানজট বেড়ে গেল। গালিগালাজ শুনতে হয় ট্রাফিক পুলিশকে। বাধ্য হয়ে কিন্তু যানজট ঠেকাতে সেসবের বেশ কয়েকটি বন্ধ বা অকার্যকর করতে হয়েছে পুলিশকেই।

তিনি বলেন, আমরা অনেক সিদ্ধান্তই নিই কিন্তু তা বাস্তবসম্মত না। যেই প্রকল্পই নিই না কেন, মাঠ পর্যায়ে কিন্তু সরাসরি কাজ করে ট্রাফিক পুলিশ। প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যদি সংশ্লিষ্টরা পুলিশের কথা শুনতো, কিংবা পরামর্শ চাইতো তাহলে অনেক প্রকল্পই ব্যর্থ না হয়ে সফল হতো। ডিটিসিএ এর ট্রাফিক সার্কুলেশন সেবা বিষয়ক যে কোনো প্রকল্প গ্রহণে বা নীতিগত কোনো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ডিএমপির পরামর্শ বা সুপালিশ জানতে চাওয়া হলে আমরা লিখিতভাবে তা জানাবো।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সেক্রেটারি ওসমান আলী বলেন, ঢাকার ফুটপাত দখলে। রাস্তায় চলার অবস্থা থাকে না। পুরো ঢাকা শহরে মাত্র দুটি স্থানে বাস বে নির্মাণ করা হয়েছে। তাহলে বাসটা দাঁড়াবে কোথায়? বাস কোথাও না কোথাও দাঁড়াবে নাকি? আগে যেসব প্রকল্প গ্রহণ করা হলো তার ফল কী?

তিনি বলেন, এসি রুমে বসে প্রকল্প করলেই শুধু হবে না, বাস্তবতা বুঝতে হবে। নিজেদের মধ্যেই তো আপনাদের সমন্বয় নেই। প্রকল্প করে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করলে তা সফল হয় না সেজন্যই। যদি যেনতেনভাবেই সব করেন বা আমাদের পরামর্শ না নিয়ে করেন তাহলে আমাদের আর ডাকার দরকার কী। নিজেরা বা নীতি-নির্ধারকরা সিদ্ধান্ত নিয়ে জানিয়ে দিলেই তো হয়ে যায়। খালি খালি সময় নষ্ট করে ডাকার দরকার কী?

তিনি বলেন, রাজউক করবে নাকি, ডিএনসিসি বা ডিএসসিসি করবে? নিজেরা সিদ্ধান্ত নেন। অনুমতি কে দেবে? পুলিশ নাকি সিটি কর্পোরেশন। কাজের কাজটা তো করেন। পুরান ফাইলগুলো ঘেটে দেখেন। অনেক কিছু বুঝতে পারবেন। মানুষ চলাচল কেন করতে পারে না, ঢাকায় কেন এতো যানজট, টের পাবেন। আমরা মতামত দিই সেটা যদি না রাখেন। তাহলে আর ডাকার দরকার নাই।

গণশুনানিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নতুন করে ভুল করা যাবে না। খরচা করে প্রকল্প নষ্ট করা যাবে না। সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। অনেক রাস্তা হচ্ছে, সংস্কার হচ্ছে। কিন্তু রাস্তায় যানজট থেকেই যাচ্ছে। এখান থেকে আমাদের পরিত্রাণের পথ খুঁজতে হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটির অনেক সড়ক কিন্তু প্রশস্ত হয়েছে। সরকার যে আইন করেছে সেসব মেনে নতুন নতুন ইমারত গড়ার ক্ষেত্রে মানা হলে বদলে যেতো ঢাকা।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo