• আন্তর্জাতিক

খাবার ঘরে ক্ষেপণাস্ত্র, স্ত্রী-সন্তানসহ ইয়াদের মর্মান্তিক মৃত্যু!

  • আন্তর্জাতিক
  • ২০ মে, ২০২১ ১৭:৪৯:৪২

ছবিঃ সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ দুপুরে খাবার খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ৩৩ বছরের ইয়াদ সালহা। হুইলচেয়ারে বসা সমবয়সী স্বামী ইয়াদকে নিয়ে তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আমানি ও তাদের তিন বছরের কন্যা নাঘামও প্রস্তুত। আচমকা তাদের বাড়িতে আঘাত হানে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র। মুহূর্তেই সবকিছু বদলে যায়। গোটা বাড়ি পরিণত হয় ধ্বংসস্তুপে। ইয়াদ সালহা তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও তিন বছরের নিষ্পাপ শিশু নাঘামের প্রাণহানি ঘটে।        

ইসরায়েল দশ দিন ধরে লাগাতার ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় হামলা চালাচ্ছে। সেই গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকায় ভূমধ্যসাগরের পাড়ে তিন কক্ষের একটি বাড়িতে স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে থাকতেন ইয়াদ। কিন্তু ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারেনি তারা। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বাড়ির তিনটি কক্ষ লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। ধ্বংসস্তুপের ভেতর পড়ে রয়েছে তিনটি লাশ।

অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও ছোট কন্যাসন্তানকে নিয়ে যে ঘরটিতে ইয়াদ সালেহ বসবাস করতেন সেই ঘরের সবকিছু সম্পূর্ণ ভেঙেচুরে গেছে। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে পড়ে ছিল ছোট্ট মেয়েটির দুমড়েমুচড়ে যাওয়া লাল রঙের খেলনা সাইকেল। দুপুরের খাবারের জন্য যে ফ্রিজ থেকে তারা খাবার বের করছিলেন, ভেঙে গেছে সেই ফ্রিজ। ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে গেছে টমেটো ভরা বাটিটিও।

ইসরায়েলি হামলার পর বাড়িটি থেকে মরদেহগুলো পাশের একটি হাসপাতালের মর্গে নিয়ে রাখে গাজার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। সেই মর্গের সামনে অন্যান্য স্বজনদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ইয়াদ সালহার ৩১ বছর বয়সী ছোট ভাই ওমর সালহা বলেন, তার ভাই ইয়াদ সালগা গত ১৪ বছর ধরে হাঁটতে পারে না। হুইলচেয়ারে বসেই তার দিনাতিপাত করতে হয়। তিনি কখনো ফিলিস্তিনের হয়ে অস্ত্র নিয়ে প্রতিরোধ সংগ্রামও করতে নামেননি। অথচ তাকেও প্রাণ দিতে হলো।   

বার্তা সংস্থা এএফপিকে ওমর সালহা বলেন, ‘আমার ভাই কি দোষ করেছিল? তার তো দিনই কাটে হুইলচেয়ারে বসে। আর তার নিষ্পাপ ছোট শিশুটি বা কী অপরাধ করেছিল? কী করেছিল তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী? তারা তো সবাই মিলে দুপুরের খাবর খেতে প্রস্তুত হচ্ছিল। কিন্তু সেটাও খেতে পারলো না তারা।’

ওমর সালহা আরও বলেন, শারীরিকভাবে অক্ষম তার ভাই একজন বেকার মানুষ। মা ও অপর তিনজন ভাইয়ের সঙ্গে একটি ফ্ল্যাটে ভাগাভাগি করে বসবাস করতেন। তারা জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। প্রতিবাদ কিংবা অস্ত্র হাতে না নিলেও আজ সপরিবারে প্রাণ গেল তার। 

গত ১০ মে থেকে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় যে লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তাতে এখন পর্যন্ত ৬৪ শিশুসহ যে ২২৭ জন ফিলিস্তিনির প্রাণহানি হয়েছে তাদের মধ্যে ইয়াদ, আমানি ও নিষ্পাপ নাঘামের মতো অনেক মানুষ রয়েছেন যারা নিরাপরাধ।

গাজার উপস্বাস্থ্যমন্ত্রী ইউসেফ আবু আল রশিদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ঘরের মধ্যে নির্দোষ ব্যক্তিদের হত্যা করা বড় অপরাধ। আর কত মৃত্যু হলে বিশ্বের বিবেক জেগে উঠবে?’ 

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo