• অপরাধ ও দুর্নীতি

সিনহা হত্যা : রুদ্ধধার কক্ষে গণশুনানি সম্পন্ন ৯ জন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য গ্রহণ তদন্ত কমিটি

  • অপরাধ ও দুর্নীতি
  • ১৬ আগস্ট, ২০২০ ২০:৫৬:৪১

ছবিঃ সিএনআই

কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানকে হত্যার ঘটনায় টেকনাফের শামলাপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির গণশুনানি সম্পন্ন করেছেন।  কড়া নিরাপত্তায় রুদ্ধধার কক্ষে এ গণশুনানি নিয়ে অনেকে তির্যক মন্তব্যও করেছেন।     

১৬ আগস্ট সকাল ১০ টায় শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে সকাল সাড়ে  ১১ টায় আনুষ্ঠানিকভাবে বাহারছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ে নিদিষ্ট   ১১ জন  প্রত্যক্ষদর্শী শুনানিতে অংশ নেন। তাদেরকে গণশুনানীর নির্দিষ্ট কক্ষে নিয়ে নেয় তদন্ত দল। তাদের কাছ থেকে তদন্তকারী দলের সদস্যরা সাক্ষ্য নিয়েছেন। তবে তাদের নাম- পরিচয় জানায়নি তদন্তদল।

জানা গেছে- গত ৩১ জুলাই শামলাপুর মেরিন ড্রাইভের পুলিশের চেকপোস্টে সিনহা নিহত হয়েছে সেই সময় বিভিন্নভাবে যেসব প্রত্যক্ষদর্শী ঘটনা দেখেছিলেন তারা সাক্ষী প্রদান করেছে। এ  চেকপোস্টের পাশাপাশি অবস্থিত হেফজখানার কয়েকজন শিক্ষার্থী যারা মসজিদের ছাঁদ থেকে সেইদিনের সংঘঠিত ঘটনা দেখেছে সেটার বর্ননা প্রদান করেন গণমাধ্যমের কাছে।

গণশুনানী উপলক্ষে মেরিন ড্রাইভের লাগোয়া সকাল থেকেই কড়া র‌্যাব, পুলিশ ও সেনাসদস্যরা এখানে অবস্থান নেন। শুনানীতে তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মনোনীত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের লে. কর্ণেল সাজ্জাদ, চট্টগ্রামের ডিআইজি’র মনোনীত অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেন এবং কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাজাহান আলি উপস্থিত ছিলেন। 

শুনানি শেষে তদন্তদলের প্রধান সাংবাদিকের জানান- গত ৩ আগস্ট থেকে তদন্ত কাজ শুরু করা হয়। এ পর্যন্ত  এ ঘটনায় ৬০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ  করা হয়েছে। আজকে ১১ জন নিবন্ধন হলেও  ৯ জনের সাক্ষ্য  নেয়া হয়েছে এবং ২ জনকে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে রাখা হয়েছে।  তিনি আরো বলেন, টেকনাফ মডেল থানার পুলিশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্র ও চেকপোস্টের এপিবিএন সদস্যদের জিজ্ঞেসাবাদ  করা হয়েছে । ওসি ও   

 পুলিশ বহনকারী গাড়ি চালক, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহাকে বহনকারী গাড়ি চালক,  সুরতহাল প্রতিবেদন দাখিলকারী ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট  সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছি।  শুধু তাই নয়,  মারিশবনিয়া এলাকার মইন্না পাহাড়,  নিহতের ঘটনাস্হল পরিদর্শন,  মানচিত্র তৈরি সহ তদন্ত সম্পর্কৃত সব কিছু সম্পন্ন করেছি। এ বিষয়ে এখানে কিছু বলা যাবে না।  আগামী ২৩ আগস্ট সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমরা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিল করবো।  এরপরই সবকিছু জানা যাবে।                       

এদিকে গণশুনানিকে কেন্দ্র করে শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইনচার্জ কার্যালয়ের আশপাশে শত শত উৎসুক জনতা ভিড় করেছেন। ঘটনাস্থলে বিপুল পরিমাণ গণমাধ্যমকর্মীও ছিলেন । আশপাশে তাদের যাতায়াত  অবাধ থাকলেও শুনানী কক্ষে গণমাধ্যমের কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। 

তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিনহা হত্যাকান্ডে বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করছেন তারা। এর মাঝে এ হত্যাকান্ড পরিকল্পিত কিনা, নাকি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটেছে। কার নির্দেশে সিনহাকে গুলি করেছিলেন লিয়াকত। ঘটনার সময় আদৌ সিনহার হাতে অস্ত্র ছিল কি না, এসব অতি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মতে, এসব প্রশ্নের জবাব মিললেই ঘটনার সবকিছু স্পষ্ট হবে।

এর আগে ১২ আগস্ট তদন্ত কমিটির সদস্য কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহজাহান আলী একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন। এতে তিনি বলেন, ৩১ জুলাই আনুমানিক রাত ৯টায় পুলিশের গুলিবর্ষণে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান নিহত হন। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে কমিটি গণশুনানির আয়োজন করেছে।

গত শুক্রবার সিনহা হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে। জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার খায়রুল ইসলাম তদন্তের দায়িত্বভার পেয়েছেন। এর আগে মামলাটি তদন্ত করেন সহকারী পুলিশ সুপার জামিলুল হক।

সিনহা হত্যা মামলার আসামি চার পুলিশসহ সাত জনকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে র‌্যাব। গত শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে র‌্যাবের একটি গাড়ি কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে সাত আসামিকে নিয়ে যায়। আসামিরা হলেন- কনস্টেবল সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া এবং পুলিশের মামলার তিন সাক্ষী টেকনাফের মারিশবনিয়া গ্রামের মো. আয়াস, নুরুল আমিন ও নাজিম উদ্দিন।

গত বুধবার কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এই সাত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত ৩ জুলাই সিনহা মো. রাশেদ খানের সঙ্গে শিপ্রা দেবনাথ, সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও তাহসিন রিফাত নুর কক্সবাজার আসেন ভ্রমণবিষয়ক ভিডিওচিত্র ধারণ করতে। ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা। এ সময় পুলিশ সিনহার সঙ্গে থাকা সিফাতকে আটক করে কারাগারে পাঠায়। পরে রিসোর্ট থেকে শিপ্রাকে আটক করা হয়। বর্তমানে তারা জামিনে আছেন। 

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo