• শিক্ষা

অভিযোগ-অসন্তুষ্টিতে ১৯, প্রত্যাশায় ২০২০

  • শিক্ষা
  • ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১১:০৮:০০

সিএনআই ডেস্ক:  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বর্তমান অবস্থা নিয়ে অসন্তুষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী। অধিক সেমিস্টার ফি, শিক্ষার বিরূপ পরিবেশ, যানজট, অনিরাপদ ক্যাম্পাস, আবাসন সমস্যা, শিক্ষা বাণিজ্যসহ বিবিধ কারণ এবং ঘটনায় উত্তপ্ত ছিল ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ। দেখতে দেখতে চলে গেলো আরও একটি বছর। সামনে ২০২০। নতুন বছরে সুন্দর, শিক্ষার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সম্বলিত একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যাশা করছেন শিক্ষার্থীরা। ২০২০ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেমন দেখতে চান শিক্ষার্থীরা  সেই প্রত্যাশা ও আশার কথা তুলে ধরেন । বেশিদিন আগের কথা নয়, গত ১৯ ডিসেম্বর ‘আইইউবি অ্যাসেনশন- ২০১৯’ আন্তর্জাতিক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় উন্মুক্ত ক্যাটাগরিতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী (আইবিএ) সাজিদ খন্দকার ও সৌরদিপ পল। এই বিতর্কের প্রধান লক্ষ্য ও তর্কের বিষয় ছিলো সারা বিশ্বে চলমান অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে যুক্তিপূর্ণ বাগ্মিতার অপরিসীম গুরুত্ব তুলে ধরা। এই বিজয়ে পুরো দেশের প্রশংসায় ভাসছিলো প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। টানা তিন দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অভিনন্দন জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আবেগ ঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এর ঠিক ৩ দিন পরে অর্থাৎ ২২ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ আস্থার স্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (ডাকসু) হামলা চালায় একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে পুরো বাংলাদেশ ভুলে যায় মাত্র তিন দিন আগের সেই অর্জন। পুরো বাংলাদেশ নিন্দার ঝড় ওঠে। আর এভাবেই একেকটা অপরাধের পেছনে ঢেকে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারও অর্জন। ১৯২১ সালে যাত্রা শুরু করা প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষে পা দিতে চলেছে। বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে এটি সমগ্র বিশ্বে সুপরিচিত ও স্বনামধন্য। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল অতীত ও ঐতিহ্যিক ইতিহাস। পৃথিবীর সব দেশই নিজস্ব ও বৈশ্বিক প্রয়োজনে উচ্চশিক্ষার পাদপীঠ হিসেবে গড়ে তোলে নামকরা সব বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ ক্ষেত্রে অনন্য সাধারণ ঐতিহ্যের অধিকারী; একটি জাতিরাষ্ট্রের জন্মদানে গৌরবময় ভূমিকা পালনকারী পৃথিবীর একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এটি স্বতন্ত্র মর্যাদায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ১৯২১ সালের ১ জুলাই তিনটি অনুষদ, ১২টি বিভাগ, ৬০ জন শিক্ষক আর ৮৭৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। এরপর রজতজয়ন্তী, সুবর্ণজয়ন্তী, হীরক জয়ন্তী, প্লাটিনাম জয়ন্তী শেষে এ বিশ্ববিদ্যালয় দুর্বার গতিতে ছুটে চলেছে তার শতবর্ষ জয়ন্তীর দিকে। আর মাত্র এক বছরান্তেই সমুপস্থিত হবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ; এক শতাব্দীকালের সাক্ষী আর ইতিহাসের তিন অধ্যায়ের (ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও স্বাধীন বাংলাদেশ) পর্যবেক্ষক হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদার এক অনন্য রূপ পরিগ্রহ করবে এই বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয় এক হাজার ৯৯৯ জন শিক্ষক, চার হাজার ৪৫৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ৪৩ হাজার ৩৮৫ জন শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখর ১৩টি অনুষদ, ৮৪টি বিভাগ, ১৩টি ইনস্টিটিউট, ৬০টি গবেষণা কেন্দ্র, ১৯টি আবাসিক হল ও চারটি ছাত্রাবাস নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহত্তর পরিবার। অধিভুক্ত ও উপাদানকল্প কলেজ ও ইনস্টিটিউটের সংখ্যা ১৩৮টি। এরই সঙ্গে সম্প্রতি দেশের বিখ্যাত সাতটি সরকারি কলেজ, এক হাজার ১৫৮ জন শিক্ষক, ৮১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী আর প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়েছে। তাই এ বিশ্ববিদ্যালয় শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও অন্যতম বৃহত্তম শিক্ষায়তন হিসেবে পরিগণিত। বাস্তবিক অর্থে এ বিশ্ববিদ্যালয় আজ আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য বিনির্মাণ ও ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন অভিযাত্রার সক্রিয় ও গর্বিত অংশীদার। শুধু পরিসংখ্যান আর কলেবরেই নয়, শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রেও বৈশ্বিক মানদণ্ডে এক অনন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বীকৃত। আসছে ২০২০ সাল। কেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে চান শিক্ষার্থীরা? ২০২০ এর একটি প্রবাদ আছে। যখন কেউ চোখে নির্ভুল দেখতে পারে, সেটাকে টুয়েন্টি টুয়েন্টি ভিশন বলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ২০২০ সালকে একটি নির্ভুল ও সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে দেখতে চায়। চলুন জেনে নেই শিক্ষার্থীদের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা। তাসফিয়া তাজরীন প্রিথা : আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। আমি মনে করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ দিন দিন নষ্ট হচ্ছে। অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো দিন দিন বেড়ে চলেছে। এতে প্রশাসন সুন্দরভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিচালনা করতে পারছে না বলে আমি মনে করি। এছাড়া দিন দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে যানজট সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দর পরিবেশ নষ্ট করছে। ২০২০ সালে আমি এ সকল সমস্যা মুক্ত সুন্দর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে চাই। সাদিক মিয়া : আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে হওয়া উচিত গবেষণাধর্মী, মুক্ত মত চর্চার স্থান। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে আবাসন সমস্যা অন্যতম। অথচ আমাদের প্রশাসন বাণিজ্যিক চিন্তা নিয়ে ব্যস্ত। রাষ্ট্রপতির অনুরোধের পর এখনও ইভনিং কোর্সগুলো চালু রয়েছে। অথচ শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে গড়ে উঠেছে গণরুম। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ শিক্ষার্থীদের দিনের পর দিন থাকতে হচ্ছে। অথচ এই সমস্যার সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কোনো মাথা ব্যথা নেই। এই সুযোগে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত। এমন কি আমাদের ডাকসুর ভিপি এর সঙ্গে যুক্ত। তিনি শিক্ষার্থীদের এই সমস্যার সমাধানের কথা চিন্তা না করে গণরুম বন্ধের আন্দোলন করেন। তাহলে আমরা থাকবো কোথায়? ২০২০ সালে আমি এ সকল সমস্যা মুক্ত সুন্দর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে চাই। এছাড়া দিন দিন বিশ্ববিদ্যালয় বাণিজ্যিক রূপ ধারণ করছে দাবি করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিভাগ দিন দিন বাণিজ্যিক হয়ে উঠছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের সেমিস্টার ফি অস্বাভাবিক হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী সেমিস্টার ফি পরিশোধ করতে পারেনা। ফলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এ বিষয়ে বার বার ডাকসুর ভিপি, জিএস ও এজিএসের কাছে যাওয়া হলেও তারা এর সমাধান করতে পারেনি। ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর কোনো বিভাগ যেন এমন না থাকে, সেই প্রত্যাশার কথাও জানান তিনি। এছাড়া, নতুন বছরে মুক্ত রাজনীতির ক্যাম্পাস প্রত্যাশা করেন শিক্ষার্থীরা। লেখাপড়ার ও গবেষণার পর্যাপ্ত পরিবেশ না থাকলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষার জায়গাটা অপূর্ণই থেকে যাবে বলে মনে করে তারা। ২০২০ সালে সকল সমস্যার সমাধান করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসাম্প্রদায়িক, মুক্ত চিন্তা ও চেতনা, নিরাপত্তা নিশ্চিত, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যুগ যুগ ধরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে, এমনটাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা। লেখক : শিক্ষার্থী, টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo