থমে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন। জরুরি ভিত্তিতে কোনো থানার ওসির নম্বর চান। নম্বর সংগ্রহ করে ফোন করেন। ওসির কাছে তিনি কখনো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, কখনো পিএস পরিচয় দেন। ফোনে ওসিকে জরুরি ভিত্তিতে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানকে তার নম্বরে ফোন করতে বলেন। বিশ্বাস করে ওসিও তাদের ফোন দেন। তারা ফোন করলে একই পরিচয়ে বলেন, একটি বিকাশ অ্যাকাউন্ট নম্বর দিচ্ছি। মানবিক সমস্যা। ১৫-২০ হাজার যা পারেন পাঠান। এভাবেই লাখ টাকা পর্যন্ত দাবি করতেন মো. হাসিবুল আলম রানা (৪৫)। নিজের পরিচয় নিশ্চিত করতে একাধিক ব্যবহৃত নম্বর ট্রু-কলারে পিএস, এপিএস, এডিশনাল সেক্রেটারি ও নাম দেখানোর সব কৌশলই প্রয়োগ করতেন। তার একাধিক নম্বর ট্রু-কলারে কখনো পিএস হেলথ, এপিএস এডুকেশন লেখাও শো করত। এ কারণে অনেকেই বিশ্বাস করে তার ওই প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে দেয়া অ্যাকাউন্ট নম্বরে টাকা পাঠাতেন। পরে বুঝতে পারতেন প্রতারণার বিষয়। সর্বশেষ তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এপিএস মনির এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব/অতিরিক্ত সচিব মো. মাহাবুবুর রহমানের পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করতে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে ধরা পড়েন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের একটি টিম গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুর থানাধীন কমলাপুর আইসিডি গেট এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেফতার হাসিবুল আলম রানা বিভিন্ন সময় সরকারি চাকরিজীবীসহ, মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, ওসি, ফিশারিজ অফিসার, কলেজের অধ্যক্ষ, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের ফোন দিয়ে বদলি, পদোন্নতি, গরিব মেয়ের বিয়ে, গরিব মানুষের চিকিৎসা করানোর জন্য বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর কথা বলে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিলেন। ডিবির সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের শুটিং ইন্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন টিমের সহকারী কমিশনার (এসি) আশরাফ উল্লাহ বলেন, প্রতারণার জন্য তিনি সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের টার্গেট করেন। তাদের নম্বর সংগ্রহের লক্ষ্যে কৌশলী রানা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার ওসির নম্বর সংগ্রহ করতেন। ওসির কাছে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এপিএস মনির পরিচয় দিতেন। কখনো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মাহাবুবুর রহমানের পরিচয় দিতেন। আবার কখনো পিএ বা পিএস শিক্ষামন্ত্রী যখন যে পরিচয়টি সুবিধাজনক সেই পরিচয় দিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউএনও, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সর্বোপরি টার্গেট ব্যক্তিকে অতিসত্বর তার মোবাইলে যোগাযোগ করতে বলতেন। টার্গেটকৃত ব্যক্তি তাকে ফোন দিলে নানা মানবিক ও সৃজনশীল কাজে অংশগ্রহণ কিংবা সহযোগিতার জন্য বিকাশ নম্বর দিতেন। অধিকাংশ ব্যক্তিই বিশ্বাস করে বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতেন। এভাবে তিনি অর্ধকোটি টাকার প্রতারণা করেছেন শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে। তিনি বলেন, গ্রেফতার হাসিবুল আলম রানার কাছ থেকে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণাললের উপসচিব মো. আব্দুল মান্নান, যুগ্মসচিব শওকত আলী, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আতাউর রহমানের লেখাসহ তিনটি সিল, দুটি মোবাইল ও চারটি সচল সিম জব্দ করা হয়েছে। গ্রেফতার রানার বিরুদ্ধে শাহজাহানপুর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় (মামলা নং-১৮) আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালত দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে রোববার তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।
মন্তব্য ( ০)