• অপরাধ ও দুর্নীতি

বিনা দোষে আড়াই মাস জেল খাটার পর মুক্তি পেলেন শ্যালক-দুলাভাই

  • অপরাধ ও দুর্নীতি
  • ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১৭:০৪:৪৫

সিএনআই ডেস্ক : ফেনসিডিল উদ্ধার মামলায় বিনা দোষে আড়াই মাস জেল খাটলেন দুলাভাই ও শ্যালক। তারা হলেন ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার সাধুপাড়া গ্রামের মো. আসাদ ও মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার বৈদ্যারগাঁও গ্রামের মুক্তার হোসেন। মিথ্যা মাদক মামলায় ঝিনাইদহ জেলা কারাগারে বন্দি ছিলেন তারা। পুলিশ সুপার মোঃ হাসানুজ্জামান পিপিএম’র হস্তক্ষেপে মুক্তি মিলেছে তাদের। কিন্তু কেন তারা কারাগারে গেলেন? তার উত্তর খুঁজতে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে থলের বিড়াল। চলতি বছরের ১৪ জুন শুক্রবার দুপুরের দিকে এ ঘটনাটি ঘটে। জানা যায়, ঘটনার দিন বাড়ি ফিরে যাওযার কথা ছিলো তাদের। আসাদ-মুক্তার বেড়াতে এসেছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার লক্ষিপুর গ্রামের কুদ্দুসের বাড়িতে। আসাদের ভায়রাভাই সে। আসাদ পেশায় মুদি দোকানদার। সে কখনো ফেন্সিডিল চোখেও দেখেনি। মুক্তার বেকার। এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। বেলা ১টা ২০ মিনিটের সময় ঝিনাইদহ বাস টার্মিনাল থেকে গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যদের হাতে আটক হন তারা। ফেন্সিডিল উদ্ধার মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয় তাদের। ঘটনার দিন জীবননগর আমের হাট থেকে ১৫০ কেজি কাঁচা আম কিনেছিলো তারা। সকাল ১১ টার দিকে জেআর পরিবহণ বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। ওই বাসে বাড়ি ফিরে যাবে তারা। আমের কাটুনটি বাসের বক্সে দেওয়া রাখা হয়। এরপর ঝিনাইদহ বাস টার্মিনালে নিজস্ব কাউন্টারের সামনে বাসটি থামে। আসাদ বাস থেকে নেমে পড়েন। দোকান থেকে সেভেন আপ কিনে বাসের গেট ধরে নীচে দাঁড়িয়ে থাকেন। অপরজন মুক্তার বাসের সিটে বসা। বেলা বাজে তখন প্রায় ১টা। ঝিনাইদহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই (নিরস্ত্র) মোঃ বদিউর রহমান, এএসআই সাদিক মোহাম্মদ ভুইয়া, এএসআই প্রদীপ কুমার দাশ, এএসআই মোঃ ওবাইদুর রহমান, কনষ্টেবল খান লিটন, মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন এবং আরাফাত ছুটে আসেন। বাসের বক্স খুলে আমের কাটুনগুলোর মালিকের খোঁজ করতে থাকেন তারা। বাসের হেল্পার আসাদকে দেখিয়ে বলে, কাটুনগুলো এদের। আসাদের ভাষায় কিছু বুঝে উঠার আগেই চটকানি (উত্তম মাধ্যম) দেওয়া শুরু হয়ে যায়। বাস থেকে নামিয়ে আনা হয় মুক্তারকে। হ্যান্ডকাপ দিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের। এরপর যা ঘটার তাই ঘটে। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের দপ্তরে চলে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ। আম কেনা রশিদ বাসের টিকিট দেখায় তারা। কোন কিছুতেই বিশ্বাস করেনা গোয়েন্দারা। এক পর্যায়ে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে মোটা অংকের টাকা দাবি করা হয় তাদের কাছে। টাকার জন্য ফোন ধরিয়ে দেওয়া হয় স্বজনদের কাছে। দেওয়া হয় বিকাশ নাম্বার। সেই নাম্বারে ওই দিন সন্ধ্যার দিকে দুই দফায় ১০ হাজার করে ২০ হাজার টাকা বিকাশ করে পাঠান আসাদের ছোট ভাই গিয়াস উদ্দিন। টাকা দিয়ে লাভ হয়নি। রাত অনুমান ৯ টার দিকে ঝিনাইদহ থানায় ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়। এসআই (নিরস্ত্র) মোঃ বদিউর রহমান বাদি হয়ে দায়ের করেন একটি মাদক মামলা। যার নাম্বার ২৬। এজাহারে বাদি উল্লেখ করেছে, আসাদ ও মুক্তারের কাছে থাকা কাটুন থেকে ২১৫ বোতল ভারতীয় ফেন্সিডিল উদ্ধার করা হয়েছে। যার বাজার মুল্য দুই লাখ পনেরো হাজার টাকা। এরা মাদক ব্যবসায়ী বলেও এজাহারে দাবি করেন বাদি। এজাহারের সাথে জব্দ তালিকা সংযুক্ত করা হয়। ঝিনাইদহ থানার এসআই মোঃ পলাসুর রহমানকে মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয়। তিনি পরের দিন অর্থাৎ ১৫ জুন শনিবার আসাদ ও মুক্তারকে সংশ্লিষ্ট আদালতে সোর্পদ করেন এবং আদালত আসামিদের ঝিনাইদহ জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। শুরুতেই ঘটনাটি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। এক পর্যায়ে চোরাকারবারিদের নাম পরিচয়ও বেরিয়ে পড়ে। গোপন সূত্রে খবর আসে জেআর পরিবহণ বাসটির ড্রাইভার ও হেল্পার মাদকপাচারকারী চক্রের সদস্য। খবর ছড়িয়ে পড়ে জীবননগর উপজেলা শহরে। প্রাপ্ত তথ্য মতে চোরাকারবারিদের সাথে চুক্তি মোতাবেক বাসচালক আব্দুল খালেক ও হেল্পার রতন মিয়া জীবননগর উপজেলার পেয়ারাতলা নামক স্থান থেকে ফেন্সিডিল ভর্তি একাধিক কাটুন বক্সে তুলে নেয়। সুকৌশলে সেগুলো রেখে দেয় আম ভর্তি কাটুনগুলোর পাশে। আসাদ ও মুক্তারের স্বজনরা ঝিনাইদহের পুলিশ সুপারের কাছে ছুটে আসেন। ধীরে ধীরে মাদক মামলার মোড় ঘুরতে থাকে। পুলিশ সুপারের নির্দেশে স্থানীয়দের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় গত ৭ জুলাই জীবননগর উপজেলার কাশিপুর মাঠপাড়ার মোঃ মানিক মিয়ার ছেলে মোঃ রতন মিয়া (বাসটির হেল্পার), জীবননগর উপজেলা শহরের, উপজেলা সড়কের ( স্থায়ী ঠিকানা ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার কুশাডাঙ্গা গ্রামে) আবুল হোসেন মাষ্টারের ছেলে আনোয়ারুজ্জামান ওরফে লেলিনকে আটক করা হয়। তারা স্বেচ্ছায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবান বন্দি দেয়। আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয় তাদের। ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান খান ও পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ এমদাদুল হক বলেন, পুলিশ সুপারের নির্দেশ মত আসল মাদক ব্যবসায়ীদের দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ড্রাইভার আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। তাকে একনও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি বলে জানান তারা। আসাদ ও মুক্তার হোসেনকে আসামির তালিকা থেকে অব্যহতির আবেদনসহ সংশ্লিষ্ট আদালতে চার্জশীট দাখিল করা হয়। গত ২৭ আগষ্ট ঝিনাইদহ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোঃ মিজানুর রহমান চার্জশীট গ্রহণ করেন এবং বাসযাত্রী নিরপরাধ মোঃ আসাদ ও মোঃ মুক্তার হোসেনকে জেলা কারাগার থেকে মুক্তির আদেশ দেন। ওই দিনই রাত ৮টার দিকে কারাগার থেকে মুক্তি পান তারা। ঘটনার বর্ণনা দেওয়ার এক পর্যায়ে তারা বলেন, মিথ্যা মাদক মামলায় প্রায় আড়াই মাস কারাগারে আটক ছিলাম আমরা। যারা মিথ্যে মাদক মামলায় জড়িয়ে জেল খাটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন তারা।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo