• জাতীয়

ত্রাণ নয়, তিস্তার বাম তীরে বাঁধ চাই

  • জাতীয়
  • ২৩ জুলাই, ২০১৯ ২৩:৩৯:২৯

এক দশক আগেও জীবনযাত্রার মান ঠিক এমন ছিল না। অধিকাংশ গরিব মানুষেরই অবস্থা ছিল দিন আনে দিন খায় গোছের। শিক্ষা-সংস্কার নিয়েও গোড়ামি ছিল মানুষের মধ্যে। রাজনৈতিক সচেতনতা ছিল বটে, কিন্তু সে রাজনীতি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে সহায়ক হতে পারেনি। রাজনীতির হিংসায় পুড়েছে এখানকার সাধারণের ভাগ্যও। রাজনীতির হিংসা আছে এখনও। তবে দিন বদলেছে। দশ বছর আগে যে সড়কে হেঁটে চলা দায় ছিল, সেই সড়কও এখন পাকা। ব্রিজ-কালভার্ট সড়কে সড়কে। বিদ্যুৎ সংযোগ ঘরে ঘরে। যেন উন্নয়নের সুবাতাস সর্বত্রই। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা-পাটগ্রামের (লালমনিরহাট-১ আসন) দিন বদলের কারিগর স্থানীয় এমপি মোতাহার হোসেন। তার নিরন্তর প্রয়াসেই বদলে গেছে এলাকার চেহারা। লালমনিরহাট তো বটেই, গোটা উত্তরবঙ্গেরও রোল মডেল সংসদীয় এই আসনের উন্নয়ন। এমন উন্নয়নেও বিষাদের সুর বাজে বছরান্তে। তিস্তায় পানি বাড়লেই মানুষের মাঝে হাহাকার। সামান্য বন্যার পানিতেই তলিয়ে যায় এলাকার বিশাল অংশ। তিন দশক আগে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার বুকে যে তিস্তা ব্যারেজ নির্মাণ করা হয়, তাই যেন আজ মরণফাঁদে রূপ নিয়েছে লালমনিরহাটের তিস্তা অববাহিকা অংশে। তিস্তার উজান অংশে ভারত ক্রমাগতভাবে পানি প্রত্যাহার করায় শুষ্ক মৌসুমে প্রায় মরে যায় এ নদী। পানির প্রবাহ না থাকায় নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে সমতল ভূমিতে রূপ নেয় এ সময়। তিস্তার ভাটি অংশে ভরাট হয়ে যাওয়ার জন্য ব্যারেজও দায়ী অনেকাংশে। আর বর্ষা এলেই বিপত্তি। সামান্য বন্যার পানিই উপচেপড়ে ভাসিয়ে দেয় লোকালয়। আর বন্যার পরপরই চলে ভাঙনের খেলা। মূল নদী ১ কিলোমিটার না হলেও ভাঙতে ভাঙতে কোথাও কোথাও ৫ থেকে ৭ কিলোমিটারে গিয়ে ঠেকেছে। হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি চলে গেছে নদীগর্ভে। গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়েছে। তিস্তায় সর্বশান্ত হয়ে পথে বসেছে হাজারও পরিবার। মঙ্গলবার তিস্তা ব্যারেজ সংলগ্ন বেড়িবাঁধের সংস্কারে জিও ব্যাগ (বালুর বস্তা) ফেলার উদ্বোধন করেন হাতীবান্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান সোহাগ। এ সময় একই উপজেলার ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক আমিনুর রহমান, ঠিকাদার ও যুবলীগ নেতা লোকমান হোসেন এবং আনোয়ার হোসেন মণ্ডল, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান মাসুদ উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুল হাসান সোহাগ বলেন,‌ ‘সর্বনাশা তিস্তাই এখন এখানকার উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম আসনে পরপর চারবার নির্বাচিত হয়ে সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন উন্নয়নের রোল মডেল তৈরি করেছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলের সড়ক পাকা হয়েছে। বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে ঘরে ঘরে। এখানকার সাধারণ কৃষক ভুট্টা চাষ করে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটিয়েছে। অথচ বন্যার কারণে সমস্ত অর্জন যেন ভেস্তে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘তিস্তার বাম তীরে নদী রক্ষা বাঁধ সময়ের দাবী। আমরা এই দাবি আরও আগে থেকে করে আসছি। ‍এই বাঁধ তৈরি করতে পারলে এখানকার হাজার হাজার মানুষ বন্যার কবল থেকে রক্ষা পাবে। এমপি মোতাহার হোসেন আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বাঁধ নির্মাণে। সরকার বানভাসি মানুষের কথা বিবেচনা করে বিশেষ গুরুত্ব দেবে বলে বিশ্বাস করি। একই সঙ্গে ড্রেজিং করে নদীর গভীরতা বাড়ানোও জরুরি।’ উল্লেখ্য, তিস্তা সেচ প্রকল্প উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প। এটি নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ৫ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদান করে। এর কাজ শুরু হয় ১৯৭৯ সালে এবং শেষ হয় ১৯৯০ সালে। সেচ প্রকল্পটির পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। মূলত উত্তরাঞ্চল খরাপিড়িত এলাকা হওয়ায় তৎকালীন বৃটিশ আমলে ১৯৩৭ সালে তিস্তা ব্যারেজ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। তবে এর মূল পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান আমলে। ১৯৫৭ সালে নির্মাণ কাজ শুরুর পরিকল্পনা থাকলে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৯ সালে ব্যারেজ নির্মাণের কাজ শুরু হয় এবং ১৯৮৫ সালে সৌদি উন্নয়ন তহবিল ও ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং আবুধাবি উন্নয়ন তহবিলের প্রায় ২,৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা ব্যারেজসহ সেচ যোগ্য কৃষিজমি ও জলকাঠামো নির্মাণ শুরু হয়। ১৯৯০ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় এবং একই বছর ৫ আগস্ট এর কার্যক্রম চালু হয়। এর মোট নির্মাণ ব্যয়ছিল ১৫শ কোটি টাকা এবং ৫ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদান করার কথা। অথচ উজানে ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে পুরো প্রকল্পই এখন হুমকির মুখে। সেচ মৌসুমে পানি না দিলেও ভারত বর্ষা মৌসুমে অতর্কিতভাবে পানি ছেড়ে দিচ্ছে বারবার। আর এতে করেই তিস্তার অববাহিকা অঞ্চলে উপর্যুপরি বন্যা দেখা দেয়, যা থেকে নিষ্কৃতি পেতে আপাতত নদী শাসনের দাবি জানিয়ে আসছেন এই অঞ্চলের জনগণ।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo