• গণমাধ্যম

বকেয়া বেতন দাবিতে এখনও অবরুদ্ধ জনকণ্ঠ ভবন

  • গণমাধ্যম
  • ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮ ২০:০৪:২৮

বকেয়া বেতন-ভাতা না দেওয়ায় দৈনিক জনকণ্ঠের মালিক ও সম্পাদক আতিকুল্লাহ খান মাসুদকে শনিবার রাত ৯টা থেকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। তাদের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতাকর্মীরাও অবস্থান নিয়েছেন। নিউ ইস্কাটন রোডের জনকণ্ঠ ভবনটি অবরোধ করে রেখেছেন তারা। তাদের দাবি, বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধ না করা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ এ কর্মবিরতি চলবে। সাংবাদিকদের অভিযোগ, জনকণ্ঠের মালিক ২৬ মাস থেকে বেতন ভাতা পরিশোধ করছেন না। তিনি সিঙ্গাপুরে পালিয়ে যাবেন বলেও আশঙ্কা তাদের। কিন্তু সমুদয় পাওনা বুঝিয়ে না দিয়ে কিংবা পত্রিকা লে-অফ ঘোষণা না করে তাকে কোথাও যেতে দেয়া হবে না। রোববার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টায় রাজধানীর ইস্কাটনে জনকণ্ঠ অফিসে গিয়ে দেখা যায়, নবম তলায় সম্পাদকের কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বিক্ষোভ করছেন। তাদের দাবি, মালিক ও সম্পাদকের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব পাওনা পরিশোধ করতে হবে। তার আগে ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে পাওনার অর্ধেক পরিশোধ করলে পত্রিকার কাজ অব্যাহত থাকবে। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, জনকণ্ঠের এই পরিস্থিতি মালিক নিজেই তৈরি করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকদের টাকা আটকে রেখেছেন। সাংবাদিকরা বেতন ভাতা না পেয়ে দুঃসময় পার করছেন। বারবার লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েও তিনি কথা রাখেননি। সর্বশেষ তিনি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব পাওনা দেওয়ার লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আশা করছি, তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আপোসে বকেয়া পাওনা বুঝিয়ে দেবেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনকণ্ঠের একজন প্রতিবেদক বলেন, আজ রোববার পত্রিকা বন্ধ থাকায় সরকারের ওপর মহল থেকে বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আমরা জানতে পেরেছি, সরকারের কাছে মালিক অভিযোগ করেছেন, সাংবাদিকরাই তার পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছেন। জবাবে আমরা বলতে চাই, বকেয়া টাকা দিলেই পত্রিকা চালু হবে। সম্পাদকের কার্যালয়ে বাইরে উপস্থিত ডিএমপির তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ সালমান হাসান বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতির আলোকে আমরা এখানে এসেছি। আমরা চাই না সামনে একটা বড় ইভেন্ট আছে, সেটা বাদ দিয়ে সবাই এখানে কর্মবিরতি পালন করুক। জনকণ্ঠের একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সম্পাদক একজন আগাগোড়ায় খারাপ মানুষ। তিনি এখন সাংবাদিকদের টাকা মেরে দেওয়ার ধান্দা করছেন। তিনি পালিয়ে যাওয়ার মতলব করছেন বলে আমার আশঙ্কা। জানতে চাইলে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের জনকণ্ঠ ইউনিট চিফ রাজন ভট্টাচার্য বলেন, সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী মিলে পত্রিকাটিতে প্রায় ৩ শ মানুষ কাজ করে। প্রায় সবারই ২৬ মাসের বেতন-ভাতা বকেয়া রয়েছে। তিন দফায় সময় নিয়েও মালিকপক্ষ টাকা পরিশোধ করেনি। গত ১৫ ডিসেম্বর মালিককে একটা চিঠি দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, ২৩, ২৪ ও ২৬ ডিসেম্বর ব্যাংক খোলা থাকবে। ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের, ২৭ ডিসেম্বর ব্যাংক ক্লোজিং, ২৮ ২৯ ডিসেম্বর শুক্রবার ও শনিবার, ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের ভোট গ্রহণ ও ৩১ ডিসেম্বর ব্যাংক হলিডের জন্য সব ব্যাংক বন্ধ থাকবে। তাই ব্যাংক খোলা থাকা অবস্থায় বকেয়া পাওনা পরিশোধের জন্য বলা হয়। তিনি বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় মালিক পক্ষের সাড়া না পেয়ে সবাই কর্মবিরতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মালিক ও সম্পাদক আতিকুল্লাহ খান মাসুদ রাত দেড়টার দিকে এসে বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা দিতে পারবো না। তোমাদের যা করার ইচ্ছা তাই করো। এই বলে তিনি আবারও নবম তলায় তার কক্ষে চলে যান। তখন থেকে তিনি সেখানে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন। টাকা দিলে কর্মবিরতি প্রত্যাহার হবে। না দিলে আন্দোলন চলবে। আমরা সরকারের সাথেও যোগাযোগ করেছি। শিগগিরই সমাধান হবে বলে আশ্বাস পেয়েছি।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo