কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কোটা সংস্কার আন্দোলনে পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম সন্তান হারিয়ে শোকাহত কুড়িগ্রামের উলিপুর পৌর শহরের আব্দুর রশিদের পুরো পরিবার। ৪ মাস বয়সি কন্যাসন্তানকে কোলে নিয়ে কেঁদে কেঁদে স্বামী রায়হানুল ইসলাম রায়হানকে গুলি করে হত্যাকারীদের বিচার চান স্ত্রী রিতু আক্তার। এমন হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন প্রতিবেশী ও স্বজনরাও।
নিহত রায়হানুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মাত্র ৪ মাস বয়সি কন্যাসন্তান কোলে নিয়ে চোখের পানি ঝরাচ্ছেন গুলিতে নিহত রায়হানুলের স্ত্রী রিতু আক্তার। পাশে শোকে পাথর হয়ে বসে আছেন মা। কবরের পাশে দাঁড়িয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার নিরপরাধ ছেলের জন্য দোয়া করছেন বাবা।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার পৌর শহরের মুন্সিপাড়ার আব্দুর রশিদের একমাত্র সন্তান রায়হানুল ইসলাম। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ সন্তান হারিয়ে বাকরুদ্ধ প্রায়। ৪ মাসের শিশুসন্তান রাওযান মনিকে নিয়ে অসহায় নিহত রায়হানুলের স্ত্রী রিতু আক্তার। শেষবার জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে বাড়িতে এসে স্ত্রী-সন্তানকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে যান রায়হান; কিন্তু সেটা আর হয়ে ওঠেনি।
গত ১৯ জুলাই ঢাকার বাড্ডা এলাকায় জুমার নামাজ শেষে রাস্তায় বের হয়ে কোটাবিরোধী ও পুলিশের সংঘর্ষের মাঝে পড়েন রায়হান। সে সময় একটি গুলি তার ডান চোখের কাছে লেগে পেছন দিয়ে বের হয়ে যায়। ফলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। ওই দিন রাত ১০টায় রওনা দিয়ে পরদিন ২০ জুলাই সকালে গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুরে লাশ পৌঁছায়। বেলা সাড়ে ১১টায় এমএস স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে জানাজা শেষে উলিপুর কেন্দ্রীয় কবর স্থানে দাফন করা হয়।
নিহত রায়হানুল ইসলাম রায়হানের চাচা আপন আলমগীর বলেন, আমার ভাতিজা উলিপুরে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চশিক্ষা শেষ করেন। পরে ঢাকাতেই চাকরি জীবন শুরু করেন। গত ৫ বছর আগে বিয়ে করেছেন এবং তার ৪ মাস বয়সি একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করে বাসায় ফেরার পথে গুলিতে নিহত হন তিনি।
তিনি আরও বলেন, সে একটি প্রাইভেট চাকরি করত। কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। আমাদের এলাকার সবার নয়নের মণি ছিল সে। রায়হানুল যার গুলিতে নিহত হোক না কেন সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি তদন্তসাপেক্ষে হত্যাকারীর বিচারটা যেন অন্তত হয়।
নিহত রায়হানুলের বাবা আব্দুর রশিদ বলেন, আমি বাকরুদ্ধ। আমার পরিবারে সে একমাত্র উর্পাজনকারী ছিল। তার একটি চার মাস বয়সি কন্যাসন্তান আছে। একদিক দিয়ে তার স্ত্রী হলো স্বামী হারা, সন্তান হলো বাবা হারা আর আমি হলাম পুত্র হারা। সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষে হত্যাকারীর কঠোর বিচার দাবি করছি।
রায়হানুল ইসলাম রায়হানের স্ত্রী রিতু আক্তার বলেন, শুক্রবার জুমার নামাজ পড়ে বাসায় আসতে গিয়ে গুলিতে সে মারা যায়। তার ঘাড়ে জায়নামাজও ছিল। আমার নিরপরাধ স্বামীর হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তি চাই আমি।
উল্লেখ্য, ঢাকায় স্ট্রোক অ্যান্ড সিকিউরিটি কোম্পানিতে সহকারী ম্যানেজার পদে চাকরি করতেন রায়হানুল ইসলাম রায়হান।
মন্তব্য ( ০)