নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেছেন"আমাদের সাধারণ ছাত্রদের কাঁধের উপর বন্দুক দিয়ে জামাত বিএনপি এই গেইমটা খেলছে। ছাত্ররা যদি তাদের থেকে সরে যেতো, ছাত্র নামটা যদি না থাকতো, তাহলে তাদের সাথে মোকাবেলা করা আমার কাছে ১ ঘন্টার ব্যাপার। ছাত্রদের সব দাবি তো পূরণ করা হয়েছে, আমাদের দল থেকে কিছু ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আওয়ামী লীগেরও কিন্তু মোশতাক ছিলো, সামনেও থাকবে। আমার ৩ তারিখের মিটিং ক্যান্সেল, আপনারা যার যার এলাকায় অবস্থান নেন। অবশ্য আপনারা নিজেরাই টের পাবেন। কিন্তু এমন ভাবে অবস্থান নিবেন না যেখানে আপনাদের ক্ষতি হয়ে যাবে। তবে কেউ যদি বঙ্গবন্ধুর সৈনিকদের আঘাত করতে আসে, সেই হাত নিয়ে যাতে ফেরৎ না যায়। বিএনপি জামাতের চলমান সহিংসতা প্রতিরোধে নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি ওয়ার্ডে নেতাকর্মীদের পাহারায় থাকতে হবে।মুখে মুখে হেডাম দেখিয়ে লাভ নেই।বাস্তবে প্রমাণ করুণ। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সন্ধায় নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাব ভবনে জেলা আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে কর্মী সভায় তিনি এ কথা বলেন।
এমপি শামীম ওসমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছি। তিনি নারায়ণগঞ্জের বিষয়ে অবগত আছেন। তিনি নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতাদের জন্য ম্যাসেজ দিয়েছেন, এটা সরকারি কোন ম্যাসেজ না। ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমাদের মা বোনের সম্ভ্রম নিয়েছে ও ত্রিশ লাখ শহীদকে হত্যা করেছে। তাদের আবার উত্থান ঘটেছে। যার প্রমাণ হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ। আন্দোলন হবে, মারামারি হবে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু এখানে নারীদের বিবস্ত্র করা হয়েছে ও হায়নার মতো ছিড়ে ফেলা হয়েছে। ঠিক ৭১ সালে যেটা ওরা করেছিলো। আমাদের নারায়ণগঞ্জ না সারা দেশেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আমার আফসোস আমি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ থাকতে পারি নাই। অসুস্থ থাকার কারণে, এখনো আছি কিছুটা।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জামায়াত এবং শিবিরকে বাংলাদেশে ব্যান করা হবে। এটা আসলে অনেক আগেই করা উচিৎ ছিলো। গতকাল আমাদের আওয়ামী লীগের এক নেতাকে গলা কেটে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। ওরা ওদের মরণ কামড় দেয়ার চেষ্টা করবে। তবে আল্লাহর উসিলায় জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা আগেও ক্ষমতায় ছিলেন, এখনো আছে, সামনেও থাকবে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে শামীম ওসমান বলেন, কয়েকটা দিন আপনারা কেউ ফাঁকিবাজি করবেন না। এটা করলে নিজেই বাঁচবেন না। আমার সমাবেশ করার কথা নেত্রীকে বলেছি, তিনি বলেছেন ‘এখন না। তুমি নেতাকর্মীদের বলে দাও যার যার এলাকায় ও ওলি গলিতে তারা যাতে পাহারায় বসে। স্বাধীনতা বিরোধী জঙ্গি যাতে রাস্তায় না নামতে পারে। অনেক হাইব্রীড ঘরে বসে আছে।
তিনি বলেন, সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনেন আজকের রাত স্বাভাবিক রাত না। সাইনবোড, চিটাগংরোড ওইসব এলাকায় যারা আছেন, আপনারা সবাই প্রস্তুত থাকবেন। মরার জন্য কিন্তু কেউ প্রস্তুত থাকবেন না। আমরা অলরেডি কিন্তু আক্রান্ত হয়েছি। আমরা কাউকে আঘাত করি নাই, হামলা করি নাই, আগুন দেই নাই, কোন বোনের গাঁয়ে হাত দেই নাই। আমরা অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছি। আর এটা শুধু জামাত-শিবির ও বিএনপির কাজ না, ডক্টরসাব থেকে শুরু করে সাদা-কালা অনেকে জড়িত হয়ে গেছে। ধরে নিলাম প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় থাকবে না, তাহলে কে থাকবে! যারা রাস্তার মধ্যে মেয়েদের উলঙ্গ করে কাপড় খুলে নিয়ে হাত দিয়ে ছিন্ন বিছিন্ন করে তারা? যারা মেট্রোরেলে আগুন দিচ্ছে তারা?।
আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ্য করে শামীম ওসমান বলেন, জালকুড়ি, সাইনবোর্ড, চিটাগংরোড কেনো আমরা ইফেক্টেট হইলাম। আমরা আপনাদের কাছে বিশ্লেষণ চাইবো। এখানে ৯০ ভাগ লোক ছিলেন বাহিরের থেকে আসা, আর ১০ ভাগ ছিলো আমাদের এলাকার লোক। যারা তাদের পথ দেখিয়েছে, এরা কারা আমরা তাদের নাম জানতে চাই। যদি সেই এলাকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের নাম প্রকাশ না করেন, তাহলে আমাদের ধরে নিতে হবে আপনারা তাদের সাথেই ছিলেন। তাদের সাথেই এলাইয়েন্স করেছেন।
শামীম ওসমান বলেন, যারা আমার শীতল বাস পুড়িয়েছেন, শাহ নিজামের পার্ক পুড়িয়েছেন, আওয়ামী লীগ অফিস পুড়িয়েছেন, দোকানপাট লুট করেছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই। আপনাদের বাড়ি-ঘড়, ব্যবসা-বাণিজ্য সব ঠিকানা আমাদের নেয়া হয়ে গেছে। আমরা কিন্তু আঘাত করি নাই, করার দরকারও নাই। জনগণ যদি ক্ষিপ্ত হয়ে আপনাদের বাড়ি ঘরে আঘাত করে আমরা কিন্তু জনগণের বিপক্ষে যেতে পারবো না। নারায়ণগঞ্জে এখন আর কেউ রাস্তায় নামার সাহস দেখিয়েন না। বাহিরের লোকদের শেল্টার দেয়ার সাহস দেখিয়েন না। কারণ আজকের পরে কালকের দিনে কিন্তু আবার সূর্য উঠবে। আমাদের মারবেন আমাদের নেক্সট প্রজন্ম আছেন।
তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ আপনারা সবাই মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকেন। মহিলা আওয়ামী লীগ ওয়াচ করে খবর নেন কোথায় কি হচ্ছে। আমরা সবাই প্রস্তত, আপনারা বলবেন কখন দাওয়াত খেতে আসতে হবে। এমন দাওয়াত খামু যাতে জীবনে আর দাওয়াত না দেয়। আমরা কাউকে কোন ক্ষতি করতে চাই না। সাধারণ ছাত্ররা আমাদের সন্তান। শেখ হাসিনা না থাকলে বাংলাদেশ আফগানিস্তানের থেকেও বেশী খারাপ হবে।
এমপি শামীম ওসমান বলেন, আজকে যে মেয়েরা রাস্তায় দাড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছে, সেই মেয়েদের লেখা পড়াও বন্ধ হয়ে যাবে, রাস্তায় বের হতে পারবে না। বাংলাদেশকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্র বানানো চেষ্টা করা হবে, এই চেষ্টা আন্তর্জাতিক ভাবে হচ্ছে। নয়তো মমতা ব্যানার্জি বলে না যে, বাংলার দরজা খোলা আছে, তোমরা নক করলে আমরা আশ্রয় দেবো। নয়তো ড. সাব ফ্রান্সে বসে বলে না যে, আগামী নির্বাচনে দিতে হবে ইউনুসের মতো সুদ খোর লোকদের। সমস্ত শক্তি এক হয়েছে জাতির পিতার কণ্যার বিরুদ্ধে। ৭১ সালে বহু বড় বড় শক্তি এসেছিলো। আমাদের মুক্তিযোদ্ধা ভায়েরা তখন বন্দুকও দেখে নাই। কিছু ক্ষয়ক্ষতি হবে, কিন্তু বিন্দু পরিমান টেনশন করবেন না। শেখ হাসিনাকে এক চুল সরানো ক্ষমতা এদের বাবারও নাই। আমরা প্রস্তুত থাকি যাতে ঢাকা পর্যন্ত যেতে পারি। মুখে মুখে হেডাম দেখাবেন না, অরজিনাল যদি হেডাম ওয়ালা হয়ে থাকেন তাহলে প্রমাণ করেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. আবু হাসনাত মো. শহিদ বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সাজনু, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শওকত আলী, সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি এহসানুল হাসান নিপু, শেখ সাফায়েত আলম সানি, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. হাসান ফেরদৌস জুয়েলসহ নেতৃবৃন্দ।
মন্তব্য ( ০)