আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ইয়েমেনের হুতি যোদ্ধারা লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় হামলা চালিয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা বুধবার বিবৃতিতে জানান, আনুমানিক ৫০টি বাণিজ্যিক জাহাজ তাদের হামলার আওতায় ছিল। মঙ্গলবার রাতে হুতিরা বাণিজ্যিক জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে এসব হামলা চালায়। লোহিত সাগরে হুতি ও মার্কিন টাস্কফোর্সের মধ্যে ভয়াবহ লড়াই চলছে। এমন সময় এ ঘটনা ঘটল, যখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন গাজা যুদ্ধ নিয়ন্ত্রণে এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা রোধ করার লক্ষ্যে মধ্যপ্রাচ্য সফর করছেন।
সিএনএন ও আলজাজিরার খবরে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের বাহিনী হুতিদের ছোড়া ২১টি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ধ্বংস করেছে। মার্কিন বাহিনী এটিকে ইরানসমর্থিত হুতিদের ‘জটিল হামলা’ বলে অভিহিত করেছে। অবশ্য এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। গত প্রায় ৫০ দিনে লোহিত সাগরে হুতিদের এটি ২৬তম হামলা বলে মার্কিন বাহিনী জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) জানিয়েছে, তারা দক্ষিণ লোহিত সাগরে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের ১৮টি ড্রোনকে গুলি করে ধ্বংস করেছে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের বাহিনীর সঙ্গে সেন্টকম দুটি জাহাজবিধ্বংসী ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও ধ্বংস করেছে।
বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস ডোয়াইট আইজেনহাওয়ার ও ক্ষেপণাস্ত্রবিধ্বংসী ইউএসএস গ্রেভলি, ইউএসএস ল্যাবুন, ইউএসএস মেসন এবং যুক্তরাজ্যের রাজকীয় নৌবাহিনীর ডেস্ট্রয়ার এইচএমএস ডায়মন্ড থেকে জঙ্গি বিমানের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে গুলি করা হয়। একজন মার্কিন কর্মকর্তা সিবিএস নিউজকে বলেন, ওই এলাকায় বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক জাহাজ থাকায় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ঠিক কী লক্ষ্যবস্তু করছে, তা স্পষ্ট নয়। অন্তত দুটি স্থানে হামলার খবর পাওয়া গেছে– ইয়েমেনের মোখা এবং হোদেইদাহের দক্ষিণ-পশ্চিমে।
গত ১৯ নভেম্বর লোহিত সাগরে তুরস্ক থেকে ভারতে যাওয়ার পথে গ্যালাক্সি লিডার নামের একটি জাহাজ ছিনতাই করে হুতিরা। গোষ্ঠীটি বলেছে, তারা গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রতিবাদে এ হামলা শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র গত মাসে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হুতিদের হামলা মোকাবিলা করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক জোট গঠন করেছে। তাদের হামলা কিছু শিপিং লাইনকে দক্ষিণ আফ্রিকার চারপাশে দীর্ঘ সমুদ্রপথ বেছে নিতে এবং লোহিত সাগরকে পুরোপুরি এড়িয়ে চলতে বাধ্য করেছে। হুতিরা বলেছে, ইসরায়েল গাজায় সংঘাত বন্ধ না করা পর্যন্ত তারা তাদের হামলা চালিয়ে যাবে।
সেন্টকম জানায়, গত ৩০ ডিসেম্বর ইউএসএস গ্রেভলি হুতিদের ছোড়া দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে গুলি করে। এটি তখন কনটেইনার জাহাজ মারস্ক হ্যাংঝোকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ওই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কেউ হতাহত হয়নি। কয়েক ঘণ্টা পর ৩১ ডিসেম্বর চারটি হুতি বোট হ্যাংঝোতে আক্রমণ করে। জবাবে মার্কিন বাহিনী গুলি চালিয়ে চারটি হুতি নৌকার মধ্যে তিনটি ডুবিয়ে দেয় এবং তাদের ক্রুদের হত্যা করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হিসাব মতে, জাহাজের পতাকাবাহী অবস্থা, ক্রুদের জাতীয়তা, জাহাজের উৎস এবং গন্তব্য বা জাহাজের মালিকানার ভিত্তিতে আক্রান্ত বাণিজ্যিক নৌযানগুলোর সঙ্গে ৫৫টি দেশের সরাসরি সংযোগ রয়েছে।
হোয়াইট হাউস গত মাসে অভিযোগ করে, লোহিত সাগরে হুতিদের হামলায় ইরান ‘গভীরভাবে জড়িত’। তবে ইরান সরকার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। হুতিদের হামলার প্রতিক্রিয়ায় জ্বালানি জায়ান্ট বিপি গত মাসে জানায়, তারা লোহিত সাগর হয়ে সব গ্যাস এবং তেলের চালান সাময়িকভাবে স্থগিত করছে। হোম ফার্নিশিং জায়ান্ট আইকিয়া বলেছে, এটি শিগগির কাঁচামালের ঘাটতির মুখোমুখি হতে পারে।
কারণ প্রধান জাহাজগুলো লোহিত সাগরকে এড়িয়ে চলতে বাধ্য হচ্ছে। লোহিত সাগর ভূমধ্যসাগর এবং ভারত মহাসাগরের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ, যা ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে সংক্ষিপ্ততম বাণিজ্য পথ। লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলার নিন্দা করে এবং গ্যালাক্সি লিডার ছিনতাইয়ের মতো কর্মকাণ্ড অবিলম্বে অবসানের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি খসড়া প্রস্তাবে বুধবার দিনশেষে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ভোট হওয়ার কথা।
মন্তব্য ( ০)