আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ১২৫ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস পরিচালিত ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি তিন মাস ধরে চলতে থাকা যুদ্ধে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার মাধ্যমে যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সূত্রপাত হয় এবং মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে তার লাগাম টানতে অঞ্চলটিতে জরুরি সফর শুরু করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এ ব্যাপারে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানান, সফরে ব্লিঙ্কেন গাজায় জরুরি ভিত্তিতে মানবিক সহায়তা সামগ্রী পাঠানোর লক্ষ্যে ইসরায়েলি নেতাদের সঙ্গে জটিল আলোচনায় অংশ নেবেন। খবর এএফপির।
ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘আমরা মনে করছি না, এই সফরে প্রতিটি আলোচনাই সহজ হবে। এ প্রসঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তু বেশ জটিল এবং সিদ্ধান্ত নেওয়াটাও হবে বেশ কঠিন।’
ইসলামপন্থি সশস্ত্র সংগঠনগুলোকে ধ্বংসের উদ্দেশে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হওয়া গাজা শহরে হামলা অব্যাহত রেখেছে। হামলা চালানো হচ্ছে ভূখণ্ডের দক্ষিণে সবচেয়ে বড় শহর খান ইউনিসেও। ইসারায়েলি হামলায় গাজা উপত্যকায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ২২ হাজার ৪৩৮ জনে দাঁড়িয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা খান ইউনিস এলাকার ‘সন্ত্রাসীদের অবকাঠামোগুলো’তে ব্যাপক হামলা অব্যাহত রেখেছে। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টার হামলায় ভূখণ্ডটিতে ১২৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। বোমাবর্ষণ করা হয়েছে দেইর আল-বালাহ ও আল-মাগহাজি আশ্রয় শিবিরেও।
ভূখণ্ডের একজন অধিবাসী ইব্রাহিম আল ঘিমরি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘লোকজন তাদের বাড়িতে নিরাপদেই ছিল, বাড়িটি শিশুতে ভর্তি ছিল। সেখানে প্রায় ৩০ জন শিশু ছিল। হঠাৎ তাদের ওপর সবকিছু ভেঙে পড়ে বোমার আঘাতে। কী দোষ করেছিল শিশুগুলো?’
চতুর্থ মাসের দিকে এগিয়ে যাওয়া যুদ্ধে ইসরায়েল তার সামরিক লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে, হামাসকে নির্মূল করা যাবে কি না তা নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট সংশয়।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, ‘ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামাসের হামলা চালানোর সক্ষমতা নস্যাৎ করে দিতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী যে লক্ষ্যস্থির করেছে, তা অর্জন করা সম্ভব।’
এদিকে, লেবাননে ইসরায়েলে হামলার পর গোটা মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত মঙ্গলবার বৈরুতে এক ড্রোন হামলায় হামাসের উপপ্রধান সালেহ আল-আরুরিকে হত্যা করে ইসরায়েল। বৃহস্পতিবার তার দাফন সম্পন্ন হয়।
লেবাননে সক্রিয় হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশটির অভ্যন্তরে ইসরায়েলি হামলায় আল-আরুরিসহ ছয়জন হামাস যোদ্ধার মৃত্যুর বিষয়ে তারা ছেড়ে কথা বলবে না। হামলার ঘটনাকে তারা লেবাননের ওপর চরম আঘাত হিসেবে বর্ণনা করে বলেছে, এর প্রতিশোধ নেওয়া হবে। হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ সর্বাত্মক যুদ্ধের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি সেনাপ্রধান হারজি হালেভি লেবানন সীমান্ত পরিদর্শন করে বলেন, সৈন্যরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াভ গালান্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন, তিনি সীমান্ত সংঘর্ষের বিষয়ে রাজনৈতিক সমাধানের প্রসঙ্গটিকে অগ্রাধিকার দেবেন।
মন্তব্য ( ০)