• বিশেষ প্রতিবেদন

বাবা-মা স্বপ্ন দেখছে এই সিয়ামকে নিয়েই

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ২০ নভেম্বর, ২০২৩ ১১:১০:২০

ছবিঃ সিএনআই

গাজীপুর: জন্ম থেকেই সাইমুর রহমান সিয়ামের (৮) দুই হাত ও দুই পা নেই। বাবা-মায়ের আদর যত্নে এভাবেই বড় হয়ে উঠছে সে। তবে থেমে নেই সিয়ামও। লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ থেকে বাবা-মায়ের কোলে চড়েই স্কুলে যাওয়া আসা করছে সে। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ছে সিয়াম। স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই প্রতিটি শ্রেণিতে প্রথম স্থানটা তার। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ব্রাইট স্কলার মাদরাসার শিক্ষার্থী সিয়াম। সাথে হেফজ করার জন্য প্রাথমিক ক্লাসের শিক্ষার্থী (নুরানী)। বাবা মো. মুহিবুল্লাহ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তাদের বাড়ি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলায় গুনাকরকাটি গ্রামে।

বাবার চাকরির সূত্র ধরেই তাদের বসবাস গাজীপুরের শ্রীপুরের জৈনা বাজারে। বাবার স্বপ্ন ছেলেকে ইসলামিক স্কলার হিসেবে গড়ে তোলার। মো. মুহিবুল্লাহ-মর্জিনা বেগমের প্রথম সন্তান সিয়াম। তাদের সামিয়া (৩) নামের আরও একটি সন্তান রয়েছে। মুহিবুল্লাহ বলেন, আমরা সীমিত আয়ের মানুষ। কোনোমতে সংসার চালাই। জন্মের পর থেকেই ছেলেকে বিশেষভাবে বড় করে তুলেছি। হাত-পা না থাকায় অনেকে অনেক কথা বলে।

সব কিছু সহ্য করে মেনে নিয়েই জীবন চালিয়ে নিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় ছেলে আমার বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন হিসেবে জন্ম নিয়েছে। হাত-পা না থাকলেও ছোটকালেই লেখাপড়ার প্রতি তার বিশেষ ঝোঁক তৈরি হয়। দুই হাতের বিশেষ অংশ মুখের সঙ্গে লাগিয়ে সে লেখা শেখে ফেলে। পরে তার ইচ্ছায় আমরা তাকে ব্রাইট স্কলার মাদরাসায় ভর্তি করিয়ে দেই।

আমরা স্বামী-স্ত্রী মিলে ছেলেকে প্রতিষ্ঠানে আনা নেওয়ার কাজ করি। বাসা কাছে হওয়ায় এখন পর্যন্ত কোলে করেই তাকে আনা নেওয়া করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, সিয়াম আমাদের মাদরাসায় ভর্তি হয়েছে ৪ বছর হলো। প্লে থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বরাবরই প্রথম স্থান অধিকার করে আসছে সে। তার সহপাঠীরা তাকে খুব ভালোবাসে। সিয়াম যে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু কেউ তাকে বুঝতেই দেয় না।

সিয়াম জানায়, সে বড় হয়ে কোরআনের হাফেজ হয়ে ইসলামিক স্কলারও হতে চায়। এজন্য সে সবার কাছে দোয়া প্রার্থী। তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ড সদস্য তারেক হাসান বাচ্চু বলেন, দুই হাত ও দুই পা না থাকার পরও তার লেখাপড়ার যে প্রচেষ্টা তা আমাদের সমাজকে পথ দেখাচ্ছে এখন আর বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন কেউ পিছিয়ে থাকতে রাজি নয়। তারাও পারে।

তবে শিশুটির মা ও বাবা সন্তানকে নিয়ে যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তারাও বিশেষ কৃতিত্বের দাবিদার। সবকিছুর পরও আমাদের প্রত্যাশা সিয়াম ভালো করুক এবং তার বাবা ও মায়ের প্রত্যাশা পূরণ করুক। শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তরিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের সরকার সমাজের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পাশে থেকে নানাভাবে সহায়তা করে যাচ্ছে। আমাদের আশা তারা যেন কোনোভাবেই পিছিয়ে না থাকে। এ শিশুটির পরিবার যদি সহায়তার প্রয়োজন হয় তাহলে আবেদন করলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo