• অপরাধ ও দুর্নীতি

রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে আরসা কমান্ডারসহ আটক ৪

  • অপরাধ ও দুর্নীতি
  • ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১৮:১৩:৪০

ছবিঃ সিএনআই

কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) শীর্ষ সন্ত্রাসী ও গান কমান্ডার রহিমুল্লাহ ওরফে মুছাসহ চারজনকে আটক করেছে র‍্যাব-১৫। ২৬ সেপ্টেম্বর  মঙ্গলবার রাতে উখিয়া উপজেলার  তেলখোলা-বরইতলী গহীন পাহাড়ী এলাকা থেকে বিস্ফোরক, দেশী-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদসহ গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

র‍্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আবু সালাম চৌধুরী জানান, উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডস্থ তেলখোলা-বরইতলী পাহাড়ের রাস্তার মুখোমুখি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উখিয়া উপজেলার  মোঃ জাফর আলম"র ছেলে মোঃ শফিক (২৮) ও  মৃত আব্দুস সালাম"র ছেলে  মোঃ সিরাজ (৩০)কে ৬ কেজি ৫৩০ গ্রাম বিস্ফোরক দ্রব্যসহ গ্রেফতার করা হয়।

পরবর্তীতে তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার  পালংখালী ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডস্থ তেলখোলা-বরইতলী গহীন পাহাড়ে অভিযান পরিচালনা করে সন্ত্রাসী সংগঠন ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’ (আরসা) এর শীর্ষ সন্ত্রাসী ও বালুখালী রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প-১৮ এর অন্যতম কমান্ডার ও আরসার জিম্মাদার হাফেজ আহমেদ"র ছেলে রহিমুল্লাহ প্রকাশ মুছা (২৭) ও ক্যাম্প-৪ এর আরসার অন্যতম কমান্ডার মৃত বদি আলম"র ছেলে শামছুল আলম প্রকাশ মাস্টার শামসু (২৯)’কে গ্রেফতার করা হয়।

তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৩৬ কেজি ৭৮০ গ্রাম বিস্ফোরক’সহ মোট ৪৩ কেজি ৩১০ গ্রাম বিস্ফোরক দ্রব্য, ১টি বিদেশী পিস্তল, ২টি ওয়ানশুটারগান,  ৪টি পিস্তলের বুলেট, ৩টি ওয়ানশুটারগানের বুলেট এবং ২টি বাটন মোবাইল ফোন। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি। এদিক র‍্যাব-১৫ কক্সবাজার অফিস সূত্রে আরো জানা যায়,  প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা উদ্ধারকৃত বিস্ফোরক সংক্রান্ত এবং সন্ত্রাসী সংগঠন ‘আরসা’র সাথে সংশ্লিষ্ট থেকে খুন, অপহরণসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত থাকার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃতদের ২ জন জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক এবং পার্শ্ববর্তী দেশের সন্ত্রাসী সংগঠন ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’ (আরসা) এর শীর্ষ নেতা ও ২ জন বাংলাদেশের নাগরিক। গ্রেফতারকৃত আরসা’র শীর্ষ নেতারা বালুখালী শরণার্থী ক্যাম্প ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহে খুন, অপহরণ, ডাকাতি, মাদক, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য তারা পার্শ্ববর্তী দেশ হতে দূর্গম সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য চোরাচালান করতো বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত স্হানীয় বাংলাদেশী শফিক ও সিরাজ উদ্ধারকৃত বিস্ফোরক দ্রব্য কৌশলে সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে নিয়ে এসে নিজেদের কাছে সংরক্ষণ করতো এবং সুবিধাজনক সময়ে আরসা’র সন্ত্রাসীদের নিকট সরবরাহ করে । উদ্ধারকৃত বিস্ফোরক দ্রব্যে ক্লোরেটস, ব্রোমেটস, পটাশিয়াম ও হেক্সামিথাইলিন টেট্রামাইন জাতীয় রাসায়নিক উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া গেছে যা গান পাউডার বা উচ্চ বিস্ফোরক হিসেবে ব্যবহার হতে দেখা যায়।

উপাদানসমূহ বিস্ফোরনের সময় সহায়ক হিসেবে অতি অল্প সময়ে বড় ধরণের অগ্নিকান্ড সংঘঠিত করতে সক্ষম। বিস্ফোরক দ্রব্যের মাধ্যমে বোমা প্রস্তুত করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য শরণার্থী শিবিরে হামলা, অগ্নিসংযোগ এর উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতো বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃত রহিমুল্লাহ তার দলের সদস্যদের মাধ্যমে শরণার্থী শিবির ও স্থানীয় জনগণের নিকট হতে খুন, অপহরণ ও গুমের ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবি করতো।

চাঁদার অর্থ না পেলে ভিকটিমকে অপহরণপূর্বক শারীরিক ও পাশবিক নির্যাতনসহ মুক্তিপণ আদায় করত। মুক্তিপণ না পেলে তারা ভিকটিমকে খুন করে গহীন পাহাড়ে অথবা জঙ্গলে লাশ গুম করতো বলে জানা যায়। সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরণের মাদক বাংলাদেশে পরিবহণ এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির ও সংলগ্ন এলাকাসমূহে সংরক্ষণের কাজে মাদক ব্যবসায়ীদের নির্দিষ্ট চাঁদার বিনিময়ে এই সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্যরা সহযোগিতা করতো বলে জানা যায়।

তারা সন্ত্রাসী কার্যক্রম শেষে পাহাড়ে গহীন জঙ্গলে আত্মগোপনে চলে যেত। তাদের অত্যাচারে শরণার্থী শিবিরের শরণার্থীরা সবসময় ভীত সন্ত্রস্ত থাকতো। কেউ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে তারা তাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করতো বা অপহরণের পর লাশ গুম করতো বলে জানা যায়। তারা বেশ কয়েকদিন ধরে আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে উখিয়ার তেলখোলা-বরইতলী গহীন পাহাড়ে অবস্থান করছিল বলে জানা যায়।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo