• আন্তর্জাতিক

পাকিস্তানে এবার সিলিন্ডারের বদলে প্লাস্টিকের ব্যাগে গ্যাস

  • আন্তর্জাতিক
  • ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৯:৪০:০৯

ছবিঃ সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ আর্থিক সঙ্কটে ধুঁকতে থাকা পাকিস্তান থেকে উঠে এল ভয়াবহ দৃশ্য। সিলিন্ডারের অভাবে প্লাস্টিকের ব্যাগেই রান্নার গ্যাস ভরে বিক্রি করা হচ্ছে সেখানে।

বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, প্লাস্টিকের ব্যাগের রান্নার গ্যাস ভরার দৃশ্য ধরা পড়েছে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়ায়। গত দু’বছর ধরে গ্যাসের পাইপলাইন খারাপ থাকার জন্য প্রদেশটির বিভিন্ন শহরে বাসিন্দারা রান্নার গ্যাস থেকে বঞ্চিত। তার মধ্যেই খাইবার পাখতুনখোয়া থেকে এই দৃশ্য প্রকাশ্যে আসায় অনেকেই শিউরে উঠছেন।

খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের চরসদ্দা জেলার একটি দরিদ্র এলাকায় থাকেন মধ্যবয়সী গৃহকর্মী মাসুমা বিবি৷ দুই বছর আগেও তিনি কাঠ দিয়ে রান্না করতেন, কিন্তু সেটা থেকে নির্গত ক্ষতিকারক গ্যাস ও কণাসমূহ শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা তৈরি করে৷ এখন তিনি গ্যাসের উপর নির্ভর করছেন যা সংরক্ষণ করা হয় এক ধরনের প্লাস্টিকের ব্যাগে ৷

এইসব প্লাস্টিকের ব্যাগগুলো বিশেষ ভাবে তৈরি। তাতে নজেল এবং ভাল্‌ভ লাগানো রয়েছে। গ্যাস পাইপলাইন নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত দোকানগুলোতে কম্প্রেসরের মাধ্যমে প্লাস্টিকের ব্যাগে গ্যাস ভরছেন বিক্রেতারা। এক একটি ব্যাগে ৩-৪ কেজি গ্যাস ভরা হয়।

একজন ব্যবহারকারীর মতে, ব্যাগে গ্যাস ভরতে এক ঘণ্টার মত সময় লাগে আর রান্নাঘরে গ্যাস সরবরাহ করার জন্য একটি কম্প্রেসরের দরকার হয় ৷ যদিও গ্যাসের জন্য এই ধরনের ব্যাগের ব্যবহার বাড়ছে, কিন্তু এটি জানমালের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে জানান তিনি৷

পাকিস্তানে জ্বালানির উৎসগুলোর মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস সবচেয়ে সস্তা যা ব্যাপকভাবে খাবার রান্না ও উষ্ণতার জন্য ব্যবহৃত হয়৷ কিন্তু গ্যাসের মজুদ কমে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ বাড়ি, ফিলিং স্টেশন এবং শিল্পে সরবরাহ হ্রাস করতে বাধ্য হয়েছে ৷ গ্যাস সংরক্ষণ ও পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত সিলিন্ডারগুলোর উচ্চমূল্য সমস্যাটিকে আরও জটিল করে তুলেছে ৷

নাজিবুল্লাহ খান নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, কার্বন ইস্পাত বা ইস্পাতের অ্যালয় দিয়ে তৈরি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম প্রায় ১০ হাজার পাকিস্তানি রুপি (প্রায় পাঁচ হাজার টাকা), যা অনেক পরিবার দোকানদার এবং ব্যবসার জন্য দুর্মূল্য ৷

তিনি জানান, আকারের ভিত্তিতে প্রতিটি পুনরায় ব্যবহারযোগ্য গ্যাস ব্যাগের মূল্য ৫০০ থেকে ৯০০ রুপি (২৫০ থেকে ৫০০ টাকা) এবং প্রতিটি কম্প্রেসরের দাম দেড় হাজার থেকে দুই হাজার রুপি৷ শহর ও গ্রামে মানুষ উভয়ই এগুলো ব্যবহার করে।

ইসলামাবাদভিত্তিক পাকিস্তান ইন্সটিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেসের বার্ন কেয়ার সেন্টারের মেডিকেল অফিসার ড. কুরাতুলাইন বলেন, প্রতিদিন প্রায় আটজন রোগী গ্যাস সংক্রান্ত দুর্ঘটনার শিকার হয়ে চিকিৎসা জন্য আসে, যাদের এক বা দুইজনের অবস্থা থাকে গুরুতর ৷ তিনি বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রান্নার চুলার বিস্ফোরণে নারীরা আহত হয় ৷

এদিকে সম্প্রতি গ্যাস সংরক্ষণের জন্য প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহারের বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করেছে কর্তৃপক্ষ ৷ পেশোয়ার শহরের কর্মকর্তারা চলতি মাসে ব্যাগে গ্যাস ভরে বিক্রির জন্য ১৬ জন দোকানদারকে আটক করেছে ৷ তবে অভিযানের মধ্যে জরিমানা এড়াতে এবং আটকের ভয়ে দোকানদারা আর প্রকাশ্যে ব্যাগগুলো বিক্রি না করে, গোপনে বিক্রি করা শুরু করেছে ৷ তারা কেবল সেই সব গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করে যাদেরকে তারা বিশ্বাস করে এবং পুলিশকে জানিয়ে দেবে না ৷       

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo