• আন্তর্জাতিক

 নারীর প্রতি সহিংসতা রোধের দাবিতে এবার লাতিন আমেরিকাজুড়ে বিক্ষোভ

  • আন্তর্জাতিক
  • ২৬ নভেম্বর, ২০২২ ১৬:০২:৫০

ছবিঃ সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স এইরেস থেকে কলম্বিয়ার বোগাটা হয়ে মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটি পর্যন্ত সমগ্র লাতিন আমেরিকা জুড়ে বিক্ষোভ হয়েছে শুক্রবার। লাখ লাখ নারী-পুরুষ এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন; অনেক শহরে পরিস্থিতি শান্ত রাখতে পুলিশও মোতায়েন করতে হয়েছে।

২৫ নভেম্বরকে নারী প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। এই দিবসকে গুরুত্ব দিয়েই শুক্রবার বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে পুরো লাতিন আমেরিকায় নারীর প্রতি নির্যাতন ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে।

মেক্সিকোর রাজনৈতিক নেত্রী ক্লডিয়া শেইনবাউম, যিনি বর্তমানে দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিকদের মধ্যে অন্যতম এবং আগামী ২০২৪ সালের নির্বাচনে দেশের প্রেসিডেন্ট হতে পারেন বলে দেশটির অধিকাংশ রাজনীতি বিশ্লেষকের বিশ্বাস—শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালনে জনগণকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। গত বুধবার এই আহ্বান জানান তিনি।

কিন্তু শুক্রবার রাজধানী মেক্সিকো সিটিসহ দেশটির ছোট-বড় অনেক শহরে শত শত মানুষ বিক্ষোভে নেমে আসেন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বসানো হয় লাউড স্পিকার, সেখানে ধর্ষণের শিকার নারী এবং ধর্ষণ ও তারপর খুনের শিকার হওয়া নারী ও মেয়েদের আত্মীয় স্বজনরা ন্যায়বিচারের দাবি জানান।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, মেক্সিকোতে প্রতিদিন ২০ জন নারী হত্যার শিকার হন। কিন্তু সব হত্যার ঘটনা আদালতে মামলা আকারে পৌঁছাতে পারে না। যেসব ঘটনায় মামলা হয়, সেসবের বিচার হতে অনেক সময় লাগে এবং অনেকক্ষেত্রেই বাদিপক্ষ ন্যায়বিচার পান না।

মেক্সিকোর বাসিন্দা লরেনা গুতিয়েরেজ তার ১২ বছরের মেয়ের হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভে এসেছেন। রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘দেশজুড়ে নারী ও মেয়েদের নিখোঁজ হয়ে যাওয়া এখনও অব্যাহত আছে। আমরা আর চুপ করে বসে থাকতে পারি না।’

জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, লাতিন আমেকিার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নারী হত্যার ঘটনা ঘটে হন্ডুরাসে। তারপর এই তালিকায় রয়েছে ডমিনিকান রিপাবলিক, এল সাভাদর, বলিভিয়া এবং ব্রাজিল।

জাতিসংঘের মধ্য ও দক্ষিণ আমেকিা শাখার কর্মকর্তা জোসে ম্যানুয়েল সালাজার রয়টার্সকে বলেন, ‘আমাদের অঞ্চলের নারী ও মেয়েরা সহিংসতার ঝুঁকিমুক্ত জীবন কাটাবে এবং তাদের  তাদের প্রাপ্য অধিকার ভোগ করবে— যদি সত্যিই আমরা এমন চাই, সেক্ষেত্রে আমাদের বর্তমান প্রচেষ্টায় কোনো কাজ হবে না, এর হার দ্বিগুণ করতে হবে।’

মেক্সিকোতে নারীর প্রতি বিদ্বেষ ও সহিংসতা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। মঙ্গলবার দেশটির সরকার থেকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে— কেবল নারী হওয়ার কারণে গত অক্টোবরে মেক্সিকোতে খুন হয়েছেন ৮০ জন নারী ও মেয়ে।

মেক্সিকোর মোরেলস প্রদেশ থেকে বিক্ষোভে আসা জোসে অ্যাঞ্জেল ত্রেজো রয়টার্সকে জানান, গত আগস্টে তার মেয়ে মেলানি ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, হত্যাকারী এখনও মুক্ত অবস্থায় ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে এ ব্যাপারে তিনি যোগাযোগ করলে বাহিনীর সদস্যরা তাকে কোনো পাত্তাই দিতে চাননি।

‘আমরা চাই, তাদের কানে আমাদের আওয়াজ প্রবেশ করুক,’ রয়টার্সকে বলেন জোসে অ্যাঞ্জেল ত্রেজো।

মেক্সিকোতে নির্যাতনের শিকার নারী ও তার পরিবারে সদস্যদের সরকারিভাবে আইনী সহায়তা দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের ফেডারেল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ডিফেন্স (আইএফডিপি) নামের একটি সংস্থা এই সহায়তা দিয়ে থাকে।

আইএফডিপির কর্মকর্তা গ্যাব্রিয়লা কাস্টিল্লো রয়টার্সকে বলেন, ‘নারীহত্যা ও নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগগুলো খুবই বাজে ভাবে তদন্ত করার যে অভিযোগ উঠেছে, তা সত্য এবং আমি মনে করি, এই অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা প্রয়োজন।’

‘আর এজন্য প্রেয়োজন সবার সহযোগিতা ও সচেতনতা।’

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo