• জাতীয়

ফেনীতে মায়ের সামনে মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ১৯ বছর পর ফাঁসির আসামি গ্রেফতার

  • জাতীয়
  • ১৮ অক্টোবর, ২০২২ ১৪:৩৬:১৫

ছবিঃ সিএনআই

নিউজ ডেস্কঃ ফেনীর সোনাগাজীতে ২০০৩ সালে মাকে বেঁধে মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি লাতু মিয়াকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৩)। আসামি ১৯ বছর ধরে আত্মগোপনে ছিলেন।

মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানী কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। সোমবার (১৭ অক্টোবর) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বাড্ডা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

র‌্যাব জানায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য নানা অপকর্ম করতেন লাতু মিয়া। ভুক্তভোগীর বাবা মারা যাওয়ায় তার মাকে এবং তাকে বিভিন্ন সময় কু-প্রস্তাব দিত। তারা কু-প্রস্তাব রাজি না হওয়ায় লাতু দলবল নিয়ে ২০০৩ সালের ১৩ মে ভুক্তভোগীর বাড়িতে গিয়ে হামলা করে। ঘরের দরজা ভেঙে বিধবা মাকে অস্ত্রের মুখে বেঁধে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে তারা।

তিনি বলেন, ২০০৩ সালে ১৩ মে গভীর রাতে সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের একটি বাড়িতে ঘরের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে লাতু মিয়া, ফারুক, জাহাঙ্গীর আলম ও কাশেম। পরে তারা বিধবা মাকে অস্ত্রের মুখে বেঁধে তার সামনে ১৩ বছরের মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা ১৩ মে সোনাগাজী থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করেন।

লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে ২০০৩ সালের ১৩ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে মামলার বিচার কাজ শেষে চলতি বছরের ১৪ জুলাই জাহাঙ্গীর লম, আবুল কাশেম ও মো. লাতু মিয়াসহ অভিযুক্ত তিন আসামির বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন এবং মো. ফারুকের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস দেন আদালত।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে লাতু র‌্যাবকে জানায়, ঘটনার সময়ে সোনাগাজী এলাকায় মো. ফারুকের নেতৃত্বে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারসহ নানা অপকর্ম করতো। এছাড়ার বিভিন্ন সময় নারীদের উত্যক্ত করতো।

ভুক্তভোগীর বাবা শিশুকালে মারা যাওয়ার পর বিধবা মা অতি কষ্টে দিন যাপন করছিলেন। তারা বিভিন্ন সময়ে মেয়ে ও মাকে কুপ্রস্তাব দিত। কিন্তু কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ২০০৩ সালের ১৩ মে গভীর রাতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। পরে ঘটনাটি সারাদেশে আলোচিত হলে লাতু আত্মগোপনে চলে যায়।

ঘটনার পর পর লাতু ও তার সহযোগীরা একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছিল। পরে জামিনে বের হয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। জামিনে বের হওয়ার পর মামলা তুলে নেওয়ার জন্য তারা ভুক্তভোগী ও ভুক্তভোগীর মাকে ভয় ভীতি প্রদর্শন করে।

লাতুর পলাতক জীবন

র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, ২০০৩ সালে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার পর তার পলাতক জীবন শুরু হয়। এ ঘটনার পর তিনি চট্টগ্রামে গিয়ে রিকশাচালক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ শুরু করে। কিন্তু কোনো কায়িক পরিশ্রম তার ভালো লাগত না। তারপর চুরি ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়েন। একটি ডাকাতির ঘটনায় লাতু মিয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হতে গ্রেফতার হয়ে জেল খাটে। জামিনে বের হয়ে গোপনে তার বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাসায় অতিথি হিসেবে জীবন-যাপন করত।

লাতু মিয়া মাঝে মাঝে তার নিজ বাড়িতে এসে গোপনে তার স্ত্রী সন্তানের সঙ্গে দেখা করত এবং তাদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে যেত। তারপর তিনি কিছুদিন সিলেটে মাজার এলাকায় ঘুরে বেড়ান। একপর‍্যায়ে ঢাকায় এসে হকার হিসেবে ফুটপাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিক্রি করতেন। পেশায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে পড়ার আশঙ্কা থেকে তিনি দারোয়ানের চাকরি নেয়। পলাতক সময়ে তিনি নিজেকে অলি নবী হিসেবে পরিচয় দিতেন। মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হওয়ার পর ঢাকায় একটি মাজারে আত্মগোপন করে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বা যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত পলাতক আসামির সংখ্যা কত, এমন কোনো তালিকা র‌্যাবের কাছে আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২৫ থেকে ৩০ বছর আগের মামলায় আসামিদের নথি পাওয়া যায় না। তথ্য সংগ্রহ করা অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়।

চলতি বছরে ২৬৪ জন বিভিন্ন মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩। বর্তমানে আমাদের হাতে বেশ পুরোনো ২০ থেকে ২৫টি মামলা রয়েছে। আমরা কাজ করছি আশা করছি এসব মামলায় পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।

দীর্ঘদিন ধরে পলাতক আসামিদের ধরতে না পারার কারণ কী?

পুরোনো মামলাগুলোর ক্ষেত্রে আসামিদের তথ্য পাওয়া কঠিন। আসামিদের সিডিআর অনেক সময় থানা থেকে পাওয়া যায় না। পুরোনো ঘটনার তথ্য-উপাত্ত পাওয়া দূরহ ব্যাপার হয়ে যায়। তারপরও আমরা নানাভাবে চেষ্টা করি তথ্য সংগ্রহ করে আসামিদের গ্রেফতার করতে। বর্তমানে সিডিআর ডিজিটাল। আগে ছিল অ্যানালগ। থানা পুলিশের গাফিলতি নেই। তারাও অনেক সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেফতার করছে। তবে আসামিদের তথ্য সংগ্রহ বেগ পেতে হয়।

মন্তব্য ( ১৩১)





image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
image
  • company_logo