• সমগ্র বাংলা

চাটমোহরে লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া

  • সমগ্র বাংলা
  • ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২২:২৬:৫৬

ছবিঃ সিএনআই

তোফাজ্জল হোসেন বাবু,পাবনাঃ নৌকাই তাদের এক মাত্র ভরসা। হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, শ্মশান-কবরস্থান যেখানেই যেতে চান না কেন; এই দুই গ্রামের মানুষকে নদী পার হতেই হবে। গ্রামের এক পাশে নয়, চার পাশেই মরা করতোয়া নদী।

উজান থেকে প্রবাহিত হয়ে চাটমোহরের চিনাভাতকুর গ্রামের ভাটিতে এসে মরা করতোয়ার একটি শাখা উত্তর দিকে চলে গেছে। গ্রাম দুটোর পশ্চিম দিয়ে উত্তর দিক ঘুরে পূর্বপাশ দিয়ে মরা করতোয়ার এ শাখাটি গুমানী নদীতে পরেছে। অপর শাখা চিনাভাতকুর গোরস্থানের নিকট থেকে বহরমপুর গ্রামের দক্ষিণ দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গুমানী নদীতে পরেছে।

চারপাশে নদীবেষ্টিত এ দুই গ্রামের মানুষের বাড়ির পাশের নদীর ঘাটে সাড়ি সাড়ি নৌকা বাধা। প্রায় অর্ধেক পরিবারের নৌকা থাকলেও বাকি অর্ধেক পরিবারের মানুষকে অন্যের নৌকায় নদী পারাপার হতে হয়। এতে অনেক সময় বিড়ম্বনার শিকার হন তারা।গ্রামের মানুষ অসুস্থ, মুমূর্ষু রোগী, সন্তানসম্ভবা প্রসুতি মাকে দ্রুত হাসপাতালে নিবেন তার কোনো উপায় নেই। 

গ্রাম দুটোতে এক ইঞ্চিও পাকা রাস্তা নেই। কোনো ধরণের যানবাহন চলাচল করেনা। গ্রামের মধ্যকার জীর্ণ শীর্ণ রাস্তায় সারা বছর পায়ে হেটেই যাতায়াত করেন তারা। তাই পাবনার চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের বহরমপুর ও বেলগাছি এ দুই গ্রামের মানুষের মনে অনেক কষ্ট। তবে এ কষ্ট দেখা, জানা ও শোনার যেন কেউ নেই।

চাটমোহর উপজেলা সদর থেকে আনুমানিক সাত কিলোমিটার উত্তর-পূর্বদিকে বহরমপুর ও বেলগাছি গ্রাম দুটির অবস্থান। বহরমপুর গ্রামের লোক সংখ্যা প্রায় এক হাজার তিনশ আর বেলগাছি গ্রামে প্রায় আরো তিনশত মানুষের বসবাস। এ এলাকায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে যেখানে পড়াশুনা করে এ দুই গ্রামের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বহরমপুর গ্রামে দুটি ও বেলগাছি গ্রামে একটি মন্দির রয়েছে। একটি মসজিদে নামাজ পরেন দুই গ্রামের মানুষ। প্রায় ৩০টি হিন্দু পরিবার রয়েছে দুই গ্রাম মিলে। তাদের মধ্যে অধিকাংশই গরীব। ২০টি পরিবারের জীবন জীবিকার উৎস মৃৎশিল্প। বিভিন্ন ধরণের প্রতিমা, মাটির হাড়ি, পাতিল, বাসন-কোসন তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন তারা।

নদীর পূর্বপাড়ে নিমাইচড়া ইউনিয়ন পরিষদ, মির্জাপুর ডিগ্রি কলেজ, মির্জাপুর উচ্চ বিদ্যালয়, মির্জাপুর দাখিল মাদরাসা ও মির্জাপুর হাট। বেলগাছি ও বহরমপুর গ্রামের হিন্দু-মুসলমান উভয় ধর্মের মানুষ সম্প্রীতির সাথে বসবাস করে আসছেন বহুকাল ধরে। অধিকাংশ পরিবার কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল। এ দুই গ্রামে নেই কোনো কবরস্থান ও শ্মশান। হিন্দু বা মুসলমান যে কোনো ধর্মের মানুষের মৃত্যু হলে তাকে দাহ করতে অথবা কবর দিতে নৌকায় নদী পাড় হয়ে চলে যেতে হবে পশ্চিম-দক্ষিণ পাড়ের চিনাভাতকুর গ্রামের কবরস্থান বা শ্মশানে।

 বহরমপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রশীদ জানান, গ্রামের চারপাশে নদী থাকায় আমাদের জীবন মানের উন্নয়ন হচ্ছে না। পাকা রাস্তা না থাকায় পায়ে হেটে কাদা গায়ে মেখে আমরা চলাচল করি। কোনো রকম যানবাহন চলেনা এই দুটি গ্রামে। আমাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে হাটে নিতে কষ্ট হয়। ছেলে-মেয়েরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার সময় নৌকায় নদী পাড় করে দিতে হয়। ফিরে এসে যখন ওপাড় থেকে ডাকে তখন পার করে আনতে হয়। 

তিনি বলেন, বহরমপুর এলাকায় নদী পাড়াপারের খেয়াঘাট থাকলেও বেলগাছির মানুষকে অনেক কষ্ট করে সেখানে পৌঁছতে হয়। মির্জাপুর কলেজের পাশ দিয়ে অথবা হাটের পাশে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হলে এবং গ্রাম দুটোর রাস্তা পাকা করা হলে আমাদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে।

এ গ্রামের অপর বাসিন্দা এহিয়া জানান, সারাবছরই আমাদের নদী পাড় হতে হয়। কখনো শুকনো নদী কখনোবা ভরা। বছরের প্রায় সাত মাস নৌকাই যেন আমাদের একমাত্র ভরসা। 

বেলগাছি গ্রামের মৃৎশিল্পীরা জানান, রাস্তা ও ব্রিজ না থাকায় তাদের উৎপাদিত পণ্য খুব কষ্ট করে কাঁধে পরিবহন করতে হয় তাদের।

এ ব্যাপারে নিমাইচড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরজাহান মুক্তি জানান, সত্যিই গ্রাম দুটি খুবই অবহেলিত। বৃষ্টি হলে তারা বাড়ি থেকে বেরুতেই পারে না। চারপাশে নদী থাকায় এবং পাকা রাস্তা না থাকায় এ দুই গ্রামের মানুষকে খুব কষ্ট করতে হয়। আমি সম্প্রতি রাস্তায় কিছু মাটি ফেলেছি। এ দুই গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন জরুরি। 

এ ব্যাপারে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ মহল জানান, আমি অল্পদিন হলো চাটমোহরে এসেছি। বিষয়টি আমার জানা ছিলোনা। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চেষ্টা করবো।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo