নেতা ও নেত্রীর পাল্টা পাল্টি সংবাদ সম্মেলন বিচার না পেলে আত্মহত্যার হুমকি নেত্রীর

ছবিঃ সিএনআই

রবিউল আলম ইভান,কুষ্টিয়াঃ জেলার শীর্ষ ছাত্রলীগ নেতাসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১ টায় কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন জেলা ছাত্রলীগ। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক ও সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ। 
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক বলেন, ঐ ছাত্রীর এসব অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক। 

সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ বলেন, ‘যে সকল নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেছে তা  সঠিক নয়। কথিত ওই নেত্রী আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। ছাত্রলীগের নেতাদেরও ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। এঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ’ তিনি আরও বলেন, কথিত ওই নেত্রী বিবাহিত, অনেকের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক ও মাদকের সাথে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এবং বিভিন্ন পুরুষের সাথে তার অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। সেসব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। কে বা কারা ছড়িয়েছে তা আমাদের জানা নেই। 

শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ দাবি করেন, ‘প্রকৃত অর্থে কুষ্টিয়া জেলা শাখার পূর্নাঙ্গ কমিটি করার আগে বাচাই-বাছাই করতে গিয়ে ওই ছাত্রীর বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ পেয়েছিলাম। বিয়ে করে মামলা দিয়ে জোর করে অর্থ আদায়, অনৈতিক কাজের সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছে। যার প্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটিতে তার নাম দেয়া হয়নি বলেই ওই ছাত্রী এসব কুৎসা রটনা করছে।’

অপরদিকে, “থানায় জিডি করে, পুলিশের কাছে লিখিত ভাবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার না পাওয়ার প্রতিবাদ ও কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ এর বিরুদ্ধে কু-প্রস্তাবের অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জেলা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক পদধারী ছাত্রলীগ নেত্রী নওরিন রহমান।” বুধবার (২১ সেপ্টম্বর) বেলা ১১ টায় কুষ্টিয়া শহরের বড়বাজারের একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তিনি।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ এর হাত ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করি। তখন থেকে তার বাসায় আমাকে বিভিন্ন কারণে ডাকতো। একদিন তার সাথে দল করতে হলে তার যে কোন শর্তে রাজি হতে বলে। আমি তার প্রস্তাব এড়িয়ে যায়, কিন্ত আমার এক দাদার সাথে টি-শার্ট পরা একটি পারসোনাল ছবি চ্যালেঞ্জ কোন ভাবে হাতে পায়। পরে তার বাসায় ডেকে ছবিটি দেখিয়ে আমাকে বø্যাকমেইল করে কু-প্রস্তাব দেয়। আমি তার প্রস্তাবে রাজি না হলে ঐ ছবি ভাইরাল করার ভয় দেখায়। বাট আমি ভয় পেয়ে তাকে খারাপ মানুষ বলে চলে আসি আর নিজেকে একা রাখার চেষ্টা করি। এই অপমানের প্রতিশোধ নিতে চ্যালেঞ্জ তার ছোটভাইদের ঐ ছবি এবং আমার কিছু এডিট করা ছবি ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে বাজে ভাষায় ক্যাপসন দিয়ে প্রচার করে। রাস্তায় দেখা হলে চ্যালেঞ্জ এর সহযোগিরা আজেবাজে কথাবার্তাসহ নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছে। দিন দিন এর মাত্রা বেড়ে যাওয়া আমি কোন উপায় না পেয়ে গত ১৯ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু তিনদিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো চ্যালেঞ্জসহ তার সহযোগিরা আমাকে নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছে। এমনকি তার পর থেকে বিভিন্ন নামে ফেসবুক আইডি খুলে আমার চরিত্র ও সম্মানহানিকর আজেবাজে লেখা পোস্ট করে সুস্থ্য সামাজিক ও পারিবারিক নিরাপত্তা রক্ষা করে আমার বেঁচে থাকাকে দুর্বিসহ করে তুলেছে। এঘটনার ন্যায় বিচার চেয়ে বার বার পুলিশকে জানালেও কোন প্রতিকার পাচ্ছি না।” নিজের সম্মান সভ্রম মর্যাদা ও নিরাপদ জীবনকে প্রতিনিয়ত চরম হুমকির কোন প্রতিকার না পেলে সর্বশেষ আত্মহননের পথ বেছে নেয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প থাকবেনা বলেও জানান এই ছাত্রলীগ নেত্রী।

তিনি আরো বলেন, আমি মঙ্গলবার এসপি আফিসে গিয়েছিলাম, তিনি অফিসে ছিলেন না । আমি এই বিষয়টা জেলা নেতাদের জানিয়েছি, তারা এর কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না । তারা শুধু আমাকে আশ্বাস দিচ্ছেন যে, হ্যাঁ তোমার ব্যবস্থা আমরা করবো। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও পুলিশ প্রধানের কাছে হস্তক্ষেপ কামনা করেন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে। এঘটনায় তিনি কুষ্টিয়া মডেল থানায় ২০ সেপ্টেম্বর জেলা ছাত্রলীগের ৬ নেতার নাম উল্লেখ করে একটি এজাহার দেন। 

তবে এই পাল্টা পাল্টি অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, ‘নওরিন রহমান নামে এক ছাত্রলীগ নেত্রীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের সত্যতা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আইনের কাছে সবাই সমান। কাউকে কম বা বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না পুলিশ। ঘটনার সত্যতা পেলে অবশ্যই জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’