নজরুল ইসলাম রাজু,রংপুর ব্যুরোঃ সহায় সম্বলহীন রংপুরের ৮২বছরের বৃদ্ধা মনিজা বেওয়া পাশে দাড়িয়েছে বাংলাদেশ নারী কল্যাণ সমিতি-পুনাক।উপহার হিসেবে দিয়েছে সাড়ে ১৭ শতক জমি এবং এক মাসের খাবার।এসময় তার সাথে পুলিশ কর্মকর্তা স্ত্রীরা ছিলেন।
সোমবার সকালে রংপুর পুলিশ অফিসার্স মেসে মনিজা বেওয়ার হাতে উপহার তুলে দেন পুনাকের সভানেত্রী ও আইজিপির স্ত্রী জীশান মির্জা।উপহার সামগ্রী ও জমি পেয়ে অনেক খুশি মনিজা বেওয়া।রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি মোহা:আবদুল আলীম মাহমুদ বিপিএম ও রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো:নুরেআলম মিনাসহ পুলিশ কর্মকর্তারা ছিলেন এ সময়।আইজিপি’র সহযোগিতায় সত্তরোর্ধ্ব মনিজা বেওয়ার মুখে তৃপ্তির হাসি রংপুর'র মনিজা বেওয়া।
সত্তরোর্ধ্ব এ গৃহহীন বৃদ্ধার একেকটি দিন যেন কাটে চরম দুর্দশায়।জীবনের পড়ন্তবেলায় এখন যার একমাত্র ভরসা নাতনি আখিঁ আক্তার।মনিজা বেওয়ার স্বামী-সন্তান কেউই বেঁচে নেই।স্বামীকে হারিয়েছেন প্রায় ২০ বছর আগে।নাতনি আঁখি আক্তারও বিধবা।নানি-নাতনির কষ্ট আর দুর্দশা যেন সিনেমার গল্পকেও হার মানায়।
রংপুরের মিঠাপুকুর থানার অন্তর্গত দৌলতপুরে ছিল মনিজা বেওয়ার সুখের সংসার।স্বামী আফছার আলী অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করে সংসার চালালেও জীবনে তৃপ্তি ছিল,আস্থা আর পরষ্পরের প্রতি অগাধ ভালবাসা।চলে যাচ্ছিল জীবন সংসার। হঠাৎ ছন্দপতন। মনিজা বেওয়া তার জীবনসঙ্গিকে হারান প্রায় ২০ বছর আগে। বেঁচে ছিলেন একমাত্র মেয়ে। তিনিও সন্তান প্রসবের সময় মারা গেছেন।
সরকার থেকে বয়স্কভাতা পেলেও সেই টাকা দিয়ে বিধবা নানি-নাতনির সংসার চালানো দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে।কোথায় থাকবে, সেই ঠিকানা নিশ্চিত ছিল না।ভিক্ষাবৃত্তিতে কোনো রকমে দিনপার হলেও রাতে মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল অন্যের রান্নাঘরে।দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী এক ভাতিজার আশ্রয়ে রান্নাঘরে নাতনিকে নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করেছেন মনিজা বেওয়া।ঘরে থাকার মতো পরিবেশ ছিল না। ভাঙা-চোরা টিন দিয়ে তৈরি ঘরটি। নেই দরজা-জানালা।মাঝে মধ্যে ওই ঘরে গরু রাখা হয়।কখনো খেয়ে বা না খেয়ে কোনো মতে বৃদ্ধা ও তার নাতনির জীবন কাটছিল নিদারুণ কষ্টে। সরকার থেকে বয়স্কভাতা পেলেও সেই টাকা দিয়ে বিধবা নানি-নাতনির সংসার চালানো দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
গত ০৮ আগস্ট, ২০২২ খ্রিঃ একটি পত্রিকায় মনিজা বেওয়া ও আখিঁ আক্তারকে নিয়ে ‘বিধবা নাতি-নাতনির মানবেতর জীবন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তা নজরে আসে বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) এর সভানেত্রী জীশান মীর্জার।পুনাকের সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেবার পর অসংখ্য অসহায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি।এবারও বাদ পড়েনি মনিজা বেওয়া। তিনি বিষয়টি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড.বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) এর নজরে আনলে সহযোগিতার ব্যবস্থা করে দেন তিনি।
মনিজা বেওয়ার জন্য ০৩(তিন)বছর মেয়াদে সাড়ে ১৭ শতক জমি বন্ধকের ব্যবস্থা করেছেন।সে লক্ষ্যে জমি বন্ধকের টাকা প্রদান করেছেন আইজিপি।এখন নানি-নাতনি জমিটিকে কাজে লাগিয়ে আয়ের সংস্থান করতে পারবেন।মনিজা বেওয়ার মুখে এখন হাসি ফুটেছে।পেয়েছেন নির্ভরতার জায়গা, স্বস্তি আর ভরসা।
পুনাক সভানেত্রী জীশান মীর্জা রংপুরে গিয়ে মনিজা বেওয়ার হাতে তুলে দিয়েছেন জমির বন্ধক নামার দলিল।ভালো থাকুক মনিজা বেওয়া, সুখে থাকুক তার নাতনি আঁখি আক্তার।
মনিজা বেওয়া বলেন,জমি ও খাদ্য সামগ্রী পেয়ে অত্যন্ত খুশি।তিনি জানান আল্লাহর কাছে দোয়া করি এরকম ভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ায় পুলিশ।অনেক কষ্টে দিন যায় আমার।থাকার বাসস্থান ও বাড়িঘর নেই আমার।আমি ভিক্ষা করে থাই।দুইদিন না খেয়ে দিন যায় অনেক সময়।আল্লাহ আজ একজন মানুষকে আমার কাছে পাঠিয়েছে।আমি তাদের জন্য দেওয়া করি।
পুনাকের সভানেত্রী জীশান মির্জা বলেন, অসহায় মানুষদের পাশে সবসময় থাকতে চায় তার সংগঠন।এর আগেও নানাভাবে খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান দিয়ে দরিদ্রদের সহযোগিতা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।মানুষের পাশে থেকে মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই পুনাকের লক্ষ্য উদ্দেশ্য বলেও জানান জীশান মির্জা।
এদিকে বাসস্থান ও খাদ্য সামগ্রী পেয়ে খুশি মনিজা বেওয়ার মুখেচোখে আনন্দে কান্না করছে।এখন আর কারো কাছে হাত পাততে হবেনা বলে জানান এই বৃদ্ধা।এর আগে মনিজা বেওয়ার ও তার পরিবারের সদস্যদের খোঁজ খবর নেন পুনাক সভানেত্রী জীশান মির্জা।পুলিশের স্ত্রী হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ালেন এটি প্রশংসনীয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।তবে এসময় পুলিশের কর্মকর্তারা আইজিপির স্ত্রীকে ফুলের শুভোচ্ছে জানানে হয়।অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুনাক নেতৃবৃন্দ ও রংপুর পুলিশ কর্মকর্তাদের স্ত্রীরা।
মন্তব্য ( ০)