• আন্তর্জাতিক

বিক্ষোভের মুখে সংসদ ছাড়লেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট

  • আন্তর্জাতিক
  • ০৫ জুলাই, ২০২২ ২৩:৪১:০৩

ছবিঃ সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ অর্থসঙ্কটে ধুঁকতে থাকা শ্রীলঙ্কায় কোনো ধরনের উত্তেজনা কমছে না। একের পর এক সঙ্কট সামাল দিতে দিশেহারা সরকার। মানুষের আকুতি, বাচ্চাদের দুধ খাওয়ানোর মতো পয়সা নেই। এমন সঙ্কটে সংসদে এসে বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। বিরোধী আইনপ্রণেতারা তার বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ায় সংসদ ছেড়ে যেতে বাধ্য হন তিনি।

স্থানীয় গণমাধ্যম কলম্বো গ্যাজেট বলছে, বিরোধী দল এসজেবির একদল আইনপ্রণেতা প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষকে সংসদ থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করেছে।

প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহে দেশের অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে বিশেষ বিবৃতি দেওয়ার সময় সংসদে উপস্থিত হন প্রেসিডেন্ট। এরপর প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শুরু করেন বিরোধী দল এসজেবির সংসদ সদস্যরা। তাদের হাতে তখন প্ল্যাকার্ড ছিল। যেখানে লেখা ছিল, রাজাপক্ষে বাড়ি যাও।

পরে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে গেলে সংসদ কক্ষ ত্যাগ করতে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট। তাকে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন সংসদ সদস্য ঘিরে রাখেন। তাদের দেওয়া নিরাপত্তায় কক্ষ ত্যাগ করেন গোতাবায়া। এ সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষেও সংসদে উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে প্রেসিডেন্টের সংসদ ছেড়ে যাওয়ার একটি ভিডিও টুইটারে শেয়ার করেছেন দেশটির আইনপ্রণেতা হর্ষ ডি সিলভা। ভিডিওটির ক্যাপশনে লিখেছেন, “ওহ! এভাবেই শ্রীলঙ্কার সংসদে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার আগমন কয়েক মিনিট আগে শেষ হয়েছে, ‘গোতা গো হোম’। অপরিকল্পিত ও ইতিহাসে আগে এমনটা ঘটেনি। তাকে উঠে দাঁড়াতে হয়েছে ও চলে যেতে হয়েছে।”

শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা যায়, সংসদের কিছু সদস্য প্লাকার্ড উচিয়ে ধরার পাশাপাশি ‘গোতা গো’ স্লোগান শুরু করে। এরপর গোতাবায়া সহকারীর সঙ্গে কথা বলেন, উঠে দাঁড়ান ও সংসদ ছেড়ে যান।

গত সপ্তাহে আইএমএফ জানিয়ে দেয়, দেশের অর্থব্যবস্থা ঠিক রাখতে ও অর্থপ্রদানের ভারসাম্য সংকট মোকাবিলার জন্য একটি তহবিল ব্যবস্থা নিয়ে চুক্তি হওয়ার আগে এর রাজস্ব ঘাটতি মেটাতে আরও কাজ করা প্রয়োজন।

দ্বীপরাষ্ট্রটি ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঋণখেলাপি হয়েছে। দেশটি ৭০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ আর্থিক সংকটের সঙ্গে লড়াই করছে। দেশটির অপরিশোধিত ঋণের পরিমাণ ৭৮ মিলিয়ন ডলার। এর সুদ পরিশোধের মেয়াদ ১৮ মে শেষ হয়েছে। অতিরিক্ত ৩০ দিন সময়ের পরও ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। এটাকে ‘প্রি-এমপটিভ ডিফল্ট’ হিসেবে দেখছেন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর।

৫১ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ খেলাপির পর এ বছরের এপ্রিলে আইএমএফের কাছে সাহায্য চায় শ্রীলঙ্কা। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার কলম্বোতে শ্রীলঙ্কা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ১০ দিনের আলোচনা শেষ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে বিপর্যস্ত অর্থনীতি উদ্ধারের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে শ্রীলঙ্কাকে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও দুর্নীতি মোকাবেলা করার আহ্বান জানিয়েছে আইএমএফ।

দক্ষিণ এশিয়ার ২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দেশ শ্রীলঙ্কা। এই দ্বীপরাষ্ট্র ১৯৪৮ সালে স্বাধীন হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির জন্যও প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রারও ঘাটতি রয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক দুর্দশার কেন্দ্রবিন্দু হলো আমদানির ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীলতা।

এই দেশের অর্থনীতি ধসের মূলে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে রাজাপক্ষে পরিবারের ভূমিকা বেশি বলে অভিযোগ দেশের জনগণের। এছাড়া করোনা মহামারিতে এই দ্বীপরাষ্ট্রের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০১৯ সালের গির্জা বোমা হামলায় পর্যটন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনাকেও দায়ী করেছেন। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঘাটতি। প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবে ওষুধ, জ্বালানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo