• সমগ্র বাংলা

তেঁতুলিয়ায় স্বপ্নের বাড়িতে ৪৫০ ভূমি-গৃহহীন পরিবার

  • সমগ্র বাংলা
  • ০৫ জুলাই, ২০২২ ১৩:০৩:৫৯

ছবিঃ সিএনআই

এসকে দোয়েল, তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়): ছিলো না কোন স্থায়ী ঠিকানা। ছিলো না নিজের কোন জমি ও থাকার মতো ঘর। কারো ঘর থাকলেও ছিলো জীর্ণ কুটিরে কষ্টের দিন-রাত্রি। এখন আর সেই জীর্ণ কুটিরে দূর্ভোগ পোহাতে হবে না গৃহ-হীন মানুষগুলোর। শুধু ঘর নয়, নিজের নামে ২শতক জমির মালিকানা হয়েছে তাদের। পূরণ হয়েছে অপ্রত্যাশিত স্বপ্ন।

এ কুরবানী ঈদে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৪৫০ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার স্বপ্নের বাড়িতে উঠেছে। সেই সাথে দেশের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড় শতভাগ ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত জেলা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, তৃতীয় পর্যায় সাড়ে ৪শ গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবার পাচ্ছেন সুদৃর্শ্য পাকা ঘর। এসব উপকারভোগীদের বাড়ির চাবি ও জমির দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে। এসব উপকারভোগীদের জন্য নির্মিত আবাসন স্থাপনায় রয়েছে মান সম্মত টয়লেট, জানালা, দু’কক্ষ বিশিষ্ট থাকার কক্ষ, রান্না ঘর, নিরাপদ পানির ব্যবস্থা, বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা আর সুন্দর বারান্দা। দেয়া হয়েছে বিদ্যুত সংযোগ ও ইন্টারনেট সুবিধা। সবুজ শ্যামল পরিবেশে বাড়িগুলো করা হয়েছে বসবাসের নিরাপদ ঠিকানা।  প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক ও নৃগোষ্ঠীসহ ছিন্নমূল, আশ্রয়হীন ও দুর্ভোগ পোহানো মানুষগুলো উঠেছেন প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এসব স্বপ্নের বাড়িতে। এর আগে উপজেলায় ১ম পর্যায়ে ১৪২ টি ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৩৫ দেয়া হয়েছিল।

উপকারভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যারা ঘর পেয়েছেন তারা জীবন সংগ্রামে অসহায় ও মানবেতর দিন যাপন করতেন। প্রধানমন্ত্রীর উপহার এসব বাড়ি পেয়ে দূর্বীষহ জীবনের ইতি টেনে নতুন জীবনের সঞ্চার হয়েছে। কল্পনাও করেননি এরকম রঙিন টিনের পাকা ঘর পাবেন। যেখানে জীবন কেটেছে অন্য বাড়ির বারান্দায় কিংবা মেঝেতে। আজ উঠেছেন পাকা ঘরে। আকাশ কুসুম কল্পনার বাস্তবায়ন ঘটেছে তাদের। ঘর পেয়ে নিজেদের মতো সাজিয়ে নিচ্ছেন এসব ঘর। নতুন বাড়িতে অনেকেই গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, সবজি চাষ করে সুন্দর জীবনের গল্প বুনছেন তারা।

সদর ইউনিয়নের তেলিপাড়া গ্রামে আশ্রয়নের ঘর পাওয়া পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সী পারুল জানান, ‘খুব কষ্টে ছিলাম ভাই। নিজের কোন ঘর ছিলো না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতো সুন্দর ঘর দিবে, কখনো কল্পনাও করিনাই। একই কথা বলেন, শালবাহান ইউনিয়নের আলেমা খাতুন ও সালমা। তারা বলেন, আমাগো ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল সাহেব ইউএনও স্যারের মাধ্যমে ঘর কইরা দিছে। ঘরের সঙ্গে টয়লেট, টিউবওয়েল ও কারেন্ট দিয়েছে। এরকম পাকা ঘর পামু কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই প্রধানমন্ত্রীকে।

উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু বলেন, আওয়ামীলীগ সরকার আমলে শহরের আদলে গ্রাম শহরে রুপান্তরিত হচ্ছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে সারাদেশের মতো তেঁতুলিয়ায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের সুদৃশ্য ঘর নির্মাণের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশ গড়ার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আর নারীর নারীর ক্ষমতায়নে নতুন মাইলফলক সৃষ্টি হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দক্ষ হাতে দেশ পরিচালনায় আমাদের বাংলাদেশ আরও উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে। আমরা চেষ্টা করছি, যেসব গৃহহীন ও ভূমিহীনরা ঘর পেয়েছেন, তাদের আত্মকর্মসংস্থান তৈরি পথ সৃষ্টি করণে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদ পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, উপজেলায় তৃতীয় পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর মুজিববর্ষে উপহার হিসেবে ৪৫০ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার ঘর পাচ্ছেন। তৃতীয় ধাপে এসব গৃহহীনকে মালিকানা হস্তান্তর করে বাড়িতে উঠিয়ে দেয়ার সমস্ত কাজ সম্পন্ন করেছি। এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অসহায়দের গৃহহীনদের জন্য ঈদ উপহার। স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে মানুষের মৌলিক চাহিদা ও কর্মসংস্থানের বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারগুলোর দীর্ঘদিনের দুঃখ-কষ্ট লাঘব হবে। এ পর্যায়ে যারা ঘর পেয়েছেন নতুন বাড়ির সাথে ঈদের আনন্দে উচ্ছশিত হচ্ছেন। আমরা চেষ্টা করেছি, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ভালো থাকার নিশ্চয়তা তৈরি করতে। এজন্য সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদেরও স্থায়ী নিরাপদ ঠিকানা তৈরি করে দেয়া হয়েছে। 

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo