• সমগ্র বাংলা

রায় না মানায় মারধর করে ফাঁকা ষ্টাম্পে স্বাক্ষর নিলেন ইউপি চেয়ারম্যান

  • সমগ্র বাংলা
  • ০১ জুলাই, ২০২২ ১৫:১৭:৩১

ছবিঃ সিএনআই

মোস্তাফিজুর রহমান, লালমনিরহাটঃ বিচারের রায় মানতে দেরি হওয়ায় ঘুমন্ত কৃষককে বাড়ি থেকে জোর করে তুলে এনে ইউনিয়ন পরিষদের রুমে দরজা -জানালা বন্ধ করে নির্মম নির্যাতনসহ ফাঁকা স্টাম্পে স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগ উঠেছে বড়খাতা ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।

ক্ষমতার দাপটে একাধিক বার ঔ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ঘটায় বলে  এলাকাবাশি জানান  এবং একনায়ক তন্ত্র কায়েম করেছে । এ ঘটনায়  ইউপি চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামী করে সাথে আরও ৪ জন গ্রাম পুলিশের নাম উল্লেখ করে স্থানীয় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন নির্যাতিত জহুরুল হক।

গতকাল (২৯ জুন) সকালে হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়ন পরিষদে এ ঘটনা ঘটে।জহুরুল হক ওই ইউনিয়নের পশ্চিম সারডুবী এলাকার ২নং ওয়ার্ডের জামাল উদ্দিনের ছেলে ।অভিযুক্ত চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা জামাল সোহেল ১নং বড়খাতা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাবেক চেয়ারম্যান আজগর আলীর ছেলে ।

লিখিত অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, ওই উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড পশ্চিম সারডুবি এলাকার আপন ভাই জহুরুল হকের সাথে নজরুল ইসলামের জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলছিলো । এবিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান এক পক্ষ নিয়ে নজরুল ইসলামের পক্ষে রায় দেয়। বর্ষাকালের কারণে সেই বিচারের রায় মানতে দেরি হয় জহুরুল হকের। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ৪-৫ জন গ্রাম পুলিশ দিয়ে বাড়ী থেকে ঘুমন্ত অবস্থায় জহুরুল হককে জোর করে তুলে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসেন ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল ।

গ্রাম পুলিশের সঙ্গে আসতে অস্বীকৃতি জানালে বাড়ির উঠানে জহুরুল হককে চড়থাপ্পড় মারেন দু'জন গ্রাম পুলিশ। পরে ঐদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে তাকে ঢুকিয়ে দরজা -জানালা বন্ধ করে দিয়ে বাঁশের লাঠি দিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করেন ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল। এসময় বাঁশের লাঠি দিয়ে জহুরুল হককে পঙ্গু করে দেয়ার জন্য তার হাত ও পায়ের নক, আঙ্গুলসহ বিভিন্ন স্থানে নির্যাতন করা হয় বলে দাবী করেন ভুক্তভুগি । এতে প্রায় জ্ঞান হারার উপক্রম হয়ে পরেন ভুক্তভুগি জহুরুল হক।

এসময় জহুরুল হক কান্নাকাটি করলে ওই ইউপি চেয়ারম্যান প্রাণনাশসহ বিভিন্ন প্রকার হুমকি দিয়ে নিজের দোষ ঢেকে রাখতে জোরপূর্বক ফাঁকা স্টাম্পে স্বাক্ষর নেয়। সেখানে থেকে মুক্তি পেলে, অসুস্থ জহুরুলকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করায় পরিবারের লোকজন।ওই দিন রাতে ছেলের মাধ্যমে ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা জামাল সোহেলকে প্রাধান আসামী করে আরও চারজনের নাম উল্লেখ করে স্থানীয় থানায় লিখিত অভিযোগ দেয় জহুরুল হক।নির্যাতনের স্বীকার জহুরুল হক সাংবাদিকদের সামনে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমি চোর নই, ডাকাত নই, মাদক ব্যবসায়ী নই অথচ বিনা অপরাধে ঘুম থেকে তুলে এনে আমাকে পাশবিকভাবে নির্যাতন করেছে ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল এবং ৪ জন গ্রাম পুলিশ। এটা কোন দেশ, এখানে কি কোন আইনকানুন নেই। 

এ সময় চেয়ারম্যানসহ ঐ গ্রাম পুলিশদের উপযুক্ত শান্তির দাবী করেন ভুক্তভুগি। 

তবে এবিষয়ে অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা জামাল সোহেল বলেন, আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানিনা। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি স্টাম্পে স্বাক্ষর নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।

এর আগেও গত বছরের জুলাই মাসে, ওই উপজেলার ফকিরপাড়া ইউনিয়নের দালালপাড়া গ্রামের তরিমুদ্দিনের পূত্র এমদাদুল হককে বড়খাতা বাজারের একটি চায়ের দোকান থেকে ইউপি চেয়ারম্যান সোহেলের হুকুমে শফিকুল ইসলামসহ ৩ জন গ্রাম পুলিশ ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যায়। পরে চেয়ারম্যান ও গ্রাম পুলিশ তাকে মারপিট করে ১০টি জমির দলিলে (স্ট্যাম্প) স্বাক্ষর নেয় এবং বড়খাতা বাজারে ব্যবসা করতে দিবে না বলে প্রকাশ্যে হুমকি দেয়। 

হাতীবান্ধা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এরশাদুল আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে  বলেন, বড়খাতা ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা জামাল সোহেলের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি । বিষয়টি তদন্ত পুর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo