• আন্তর্জাতিক

আমদানি শুল্ক কমাল বাংলাদেশ, ভারতে এবার চালের দাম বাড়ল ১০ শতাংশ

  • আন্তর্জাতিক
  • ২৭ জুন, ২০২২ ১৫:৩১:৫১

ছবিঃ সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ বাংলাদেশ আমদানি শুল্ক সাড়ে ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার পর গত পাঁচ দিনে ভারতের চালের দাম দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। এর ফলে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে রপ্তানি চুক্তির তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে। মঙ্গলবার ভারতের ইংরেজি দৈনিক ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, গত ২২ জুন বাংলাদেশ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাসমতি ছাড়া অন্যান্য চাল আমদানি করা যাবে। ভারত চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে আশঙ্কায় এবারই প্রথম বাংলাদেশ এত আগেই প্রতিবেশী দেশটি থেকে চাল আমদানি শুরু করেছে।

সাধারণত প্রত্যেক বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ চাল আমদানি শুরু করে। কয়েক মাস ধরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ভারতের গম রপ্তানি নিষিদ্ধ করার পর বাংলাদেশে প্রধান এই খাবারের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি গম আমদানিও কমে গেছে বাংলাদেশের। এছাড়া চলতি বছর বন্যার কারণে দেশে ধান চাষও ব্যাহত হয়েছে।

ভারতের চাল রপ্তানিকারকদের সংগঠন রাইস এক্সপোর্টারস এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট বি ভি কৃষ্ণ রাও বলেছেন, গত পাঁচ দিনে বিশ্ব বাজারে ভারতীয় অ-বাসমতি চালের মূল্য প্রতি টন ৩৫০ ডলার থেকে বেড়ে ৩৬০ ডলারে পৌঁছেছে। আর এটা ঘটেছে বাংলাদেশ থেকে শুল্ক কমানোর খবর আসার পর।

গমের মূল্য বৃদ্ধি এবং আমদানি কমে যাওয়ায় বাংলাদেশে আটার দাম বেড়েছে। এর ফলে চালের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়েছে। এছাড়া আগাম বন্যা, ঝড় এবং ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বাংলাদেশে ধান চাষ ব্যাহত হয়েছে। যে কারণে চালের দাম আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ভারতের চাল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান তিরুপাতি এগ্রি ট্রেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুরাজ আগারওয়াল বলেছেন, চালের দাম ইতোমধ্যে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এখনও বাড়ছে। বাংলাদেশ সাধারণত পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশ এবং বিহার থেকে চাল কিনে থাকে। ভারতের এই তিন রাজ্যে সাধারণ চালের দাম ইতোমধ্যে ২০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এই তিন রাজ্যে চালের দাম বৃদ্ধি দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও প্রভাব ফেলেছে। ফলে ভারতের দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম ১০ শতাংশ বেড়েছে।

২০২১ অর্থ বছরে ভারত থেকে এক কোটি ৩৫ লাখ ৯০ হাজার টন চাল আমদানি করেছে বাংলাদেশ। অ-বাসমতি চাল বাংলাদেশ আগাম ক্রয় করায় ভারতীয় চাল রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব কমার্শিয়াল ইনটেলিজেন্স অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিকসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৬ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলারের অ-বাসমতি চাল রপ্তানি করেছে ভারত। আর আগের অর্থবছরে ভারতের এই চাল রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের।

বিশ্বে চীনের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের ভোক্তা ভারত। এছাড়া বিশ্ব বাজারে ভারতের চাল রপ্তানির পরিমাণ ৪০ শতাংশের বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশে চাল রপ্তানি করেছে ভারত।

বিশ্বের অনেক অংশের মানুষের অন্যতম প্রধান খাদ্য শস্য চাল; যা বিশ্ব খাদ্য সংকট পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়া থেকে রক্ষায় সাহায্য করছে। যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে গম এবং ভুট্টার প্রধান রপ্তানিকারক দুই দেশ ইউক্রেন-রাশিয়ার সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। যে কারণে এই দুই খাদ্যশস্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গম-ভুট্টার দাম বাড়লেও প্রচুর উৎপাদন এবং পর্যাপ্ত মজুতের কারণে বিশ্বে চালের দাম তেমন বৃদ্ধি পায়নি।

কিন্তু ভারত রপ্তানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলে চালের দামের সেই চিত্র বদলে যেতে পারে। তখন ভারতের মতো অন্যান্য দেশও চাল রপ্তানি বন্ধ করতে পারে, যা ২০০৮ সালে বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের সময় দেখা গেছে। ওই সময় ভারত চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরপরই ভিয়েতনামও চালের রপ্তানি বন্ধ করে।

চালের ৯০ শতাংশ উৎপাদন এবং ব্যবহার হয় এশিয়ায়। এছাড়া বিশ্ববাজারে রপ্তানি হওয়া মোট চালের প্রায় ৪০ শতাংশ যায় ভারত থেকে।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo