• জাতীয়
  • লিড নিউজ

দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নিয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী

  • জাতীয়
  • লিড নিউজ
  • ২২ জুন, ২০২২ ২১:৫১:১৮

ফাইল ছবি

নিউজ ডেস্কঃ মাওয়া-জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতু নির্মাণে যে বড় খরচ হয়েছে সেটা উঠলে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় প্রান্তে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের বিষয়ে ভাবা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (২২ জুন) বেলা ১১টা থেকে প্রধানমন্ত্রীর তেজগাঁও কার্যালয়ে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি একটি টেলিভিশনের সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পদ্মা সেতু নির্মাণে যে বড় খরচ হয়েছে, সেটা উঠলেই দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে। সারা দেশে বিভিন্ন সেতু নির্মাণ করে সংযোগ তৈরি করেছি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পরে দ্বিতীয়টার জন্য আয়োজন রয়েছে।”

দ্বিতীয় পদ্মা সেতু সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, “আগে দেখতে হবে, এটার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু? সেটা বিবেচনা করে করা হবে। এত বড় একটা কাজ শেষ করে আবার আরেকটা এখনই শুরু করতে পারব না।” 
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “জায়গাটা খুব বড় না, বড় সেতু না। কাজেই ভবিষ্যতে যখন প্রয়োজন হবে মনে করব, তখন সেটা নিয়ে ভাবা যাবে। আগেই বলেছি, কোনো প্রয়োজন হলে সেটা থেকে রিটার্ন কী আসবে, সেটাও আমাকে দেখতে হবে। সেটা দেখেই প্রকল্প নেব। আমাদের এটা মাথায় আছে। এখন এত বড় খরচ করেছি, সেটার টাকা আগে উঠুক। তারপর দ্বিতীয়টা করব।”

সরকার প্রধান বলেন, “আরিচা থেকে ফেরি যেত দৌলতদিয়া। আর পাটুরিয়ায় জায়গা ছিল। অনবরত সেখানে ড্রেজিং করতে হতো। আমারই পরামর্শে ড্রেজিংয়ের মাটি দিয়ে ওই জায়গা ভরাট করা হয়। আমাদের সরকার দৌলতদিয়া থেকে পাটুরিয়ায় সাত কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করে। যদিও সেটা উদ্বোধন করে যেতে পারিনি। রাস্তাটা করা হয়েছিল যাতে ফেরি পারাপারে সময়টা কমে আসে। পাটুরিয়ায় এটা কিন্তু আমারই করা।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দৌলতদিয়া থেকে রাজবাড়ী মোড় পর্যন্ত ৩০-৩৫ কি.মি. যেতে হয়। আর রাজবাড়ী মোড় থেকে কামারখালী ব্রিজ দিয়ে কুষ্টিয়া চলে যাওয়া যায়। পাংশা থেকেও কুমারখালী পর্যন্ত ব্রিজ করে দিয়েছি, সেদিক দিয়েও ওদিকে যোগাযোগ আছে। কাজেই এদিক থেকে (ঢাকা থেকে) অনেকভাবেই আমরা যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।”

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “পদ্মা সেতু আমাদের অহংকার, আমাদের গর্ব। প্রমত্ত পদ্মা নদী দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। আমরা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ সে কষ্টটা ভালো করে জানি। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ জানে কী ঝুঁকি নিয়ে এবং কতটা সময় ব্যয় করে আমাদের রাজধানীতে পৌঁছাতে হয়।” তিনি বলেন, “১৯৯৬ সালে আমি সরকার গঠন করে ১৯৯৭ সালে জাপান সফরে যাই। সেখানে গিয়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেছিলাম আমাদের পদ্মা নদীতে ও রূপসা নদীতে সেতু করে দিতে হবে। আমি তাদের প্রস্তাব দেই, তারা আমাদের প্রস্তাবে রাজি হয়।”

শেখ হাসিনা বলেন, “পদ্মা পৃথিবীর খরস্রোতা নদীর মধ্যে একটি। আমাজনের পরেই পদ্মা। জাপান পদ্মা নদীতে সেতু করার জন্য সমীক্ষার কাজ শুরু করে। আমি একটু এখানে স্মরণ করতে চায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে যখন জাপান সফরে গিয়েছিলেন, তখন যমুনা নদী এবং পদ্মা নদীর ওপর সেতুর কথা বলেছিলেন। তবে যমুনা নদীর সেতুর ওপরই তিনি গুরুত্ব দিয়েছিলেন এবং তখন জাপান সরকার যমুনা নদীতে সমীক্ষা করে। জাপানের সহযোগিতায় আমাদের যমুনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ হয়।”

শেখ হাসিনা আরো বলেন, “পদ্মা নদীর ওপর সেতু নিয়ে জাপান সমীক্ষা করে ২০০১ সালে আমাদের রিপোর্ট হস্তান্তর করে। তার ওপর ভিত্তি করে ওই বছরের ৪ জুলাই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। সমীক্ষায় জাপান মাওয়া প্রান্ত দিয়ে পদ্মা সেতু করার সিদ্ধান্ত নেয়। আমাদের দুর্ভাগ্য যে ২০০১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি। বিএনপি সরকার এসে সেটা বন্ধ করে দেয়। সে সময় বিএনপি নেত্রী বলেছিল যে, এটা এখান থেকে হবে না; আরিচা ঘাট থেকে হবে। তারা তখন জাপানকে আবার সমীক্ষা করতে বলে। তখন জাপান সমীক্ষা করে ২০০৩ বা ২০০৪ সালে যে রিপোর্ট দেয়, সেখানেও তারা মাওয়া থেকে এই পদ্মা সেতু করতে বলে। তখন আমরা শুনেছিলাম দুটি পদ্মা সেতু হবে। কিন্তু বিএনপি সরকার কিছুই করতে পারেনি।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা আবার ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর আবারও সেতু নির্মাণের পদক্ষেপ নেই। এরপর আমরা নকশা তৈরির জন্য নিউজিল্যান্ডভিত্তিক কোম্পানি মনসেল এ কম-কে নিয়োগ দেই। শুরুতে পদ্মার প্রকল্পে রেল চলাচলের কোনো পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু আমার ইচ্ছা ছিল এটা মাল্টিপারপাস হওয়া উচিত। কারণ, বারবার এ নদীর ওপর সেতু করা যাবে না। কারণ এটা অনেক খরস্রোতা নদী। পরে রেল সুবিধা রেখে এটির চূড়ান্ত নকশা করা হয়। ২০১০ সালের মধ্যে নকশা চূড়ান্ত হয়ে যায়। পরের বছর ডিপিবির সংশোধনী করা হয়। এতে প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়ায় ১০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। এ ব্যয় বৃদ্ধির পেছনে কয়েকটি কারণ ছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল; কিন্তু সেখানে অন্যান্য সুবিধা ছিল না। সেখানে নদীশাসন করে নদী ছোট করে পদ্মা সেতু করার কথা ছিল। কিন্তু আমি কখনোই পদ্মা নদীকে সংকোচন করে নিয়ে আসার পক্ষে ছিলাম না। ওই সময় পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ছিল ৫ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার। পরে পদ্মার হিসাব নিয়ে এটা ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার নিয়ে মূল সেতু করার সিদ্ধান্ত নেই এবং সেভাবে ডিজাইন করা হয়। প্রথম ডিপিবিতে সেতুর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ঠিক করা হয়েছিল মাত্র তিনটি উঁচু করা হবে এবং সেখান থেকে নৌযান যাবে। কিন্তু পদ্মা নদীতে যারা কখনো লঞ্চ ও স্টিমারে গিয়েছেন, তারা জানেন পদ্মার স্রোত কেমন। এই স্রোত কোনো বাঁধ মানে না। এটি কখন কোন দিকে যাবে, সেটা কেউ কখনো বলতে পারে না। সে কারণে আমার সিদ্ধান্ত ছিল, পুরো নদীর যেকোনো জায়গা থেকে যেন জাহাজ যেতে পারে এবং স্প্যানগুলো যত চওড়া করা যায় সেভাবেই নকশা করা হয়।”

শেখ হাসিনা আরো বলেন, “আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে। আমি যেটা করতে পারব, সেটাই বলি। যেটা বলি, সেটাই করি। শত বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও সেখান থেকে সরে আসি না। সেটার প্রমাণ আমি দিয়েছি।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এত বেশি ষড়যন্ত্র হয়েছে, তা সত্ত্বেও আমরা সফল হয়েছি। এ মুহূর্তে উপদেষ্টা কমিটিতে যারা ছিলেন, তাদের সবাইকে কৃতজ্ঞতা। বিশেষত ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী—যিনি জীবিত থাকলে হয়তো দেখে যেতে পারতেন পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে।”

এর আগে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বন্যায় দেশের দুরবস্থা নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আজ আমার হৃদয় খানিকটা ভারাক্রান্ত। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দুই জেলা সিলেট ও সুনামগঞ্জ। মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জও বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সৃষ্ট ভয়াবহ এ বন্যা পরিস্থিতিতে দুর্গত মানুষের দুর্ভোগ ও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সরকার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছে।”

এ ছাড়া বন্যায় প্লাবিত হয়েছে উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, জামালপুর, শেরপুরসহ ১১টি জেলা। সিলেটে যে বন্যা হয়েছে তা অকল্পনীয়। এটাকে প্রলয়ঙ্করী বললেও ঠিক বোঝানো যায় না বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

আগামী ২৫ জুন সকাল ১০টায় মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশ করে পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন নামফলক উন্মোচন করে টোল দিয়ে পদ্মা সেতু পার হবেন তিনি। এরপর অন্য প্রান্তেও নামফলক উন্মোচন করবেন তিনি। ওই দিন বিকেলে মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo