• সমগ্র বাংলা

মান্দার প্রধান শিক্ষকের ‘স্বেচ্ছাচারিতা’, বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত

  • সমগ্র বাংলা
  • ২৭ মে, ২০২২ ১৬:৪৯:৪৪

ছবিঃ সিএনআই

কাজী কামাল,নওগাঁ: নওগাঁর মান্দা উপজেলার পাঁজরভাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহনাজ বেগমের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। 

বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১৯ মে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ পাঁচ ঘন্টা বিদ্যালয়ে তালাবদ্ধ করে অন্য শিক্ষকদের নিয়ে প্রধান শিক্ষক শাহনাজ বেগম পাশের একটি বিদ্যালয়ে দাওয়াত খেতে যান। ওই ঘটনার পর থেকে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে গেছে। এছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনে ভোটে পরাজিত হওয়ার পরেও পছন্দের লোককে সভাপতি করে কমিটি গঠন সংক্রান্ত রেজুলেশন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে গত বছরের ১৪ ফেব্রæয়ারি বিদ্যালয়ের বিদ্যোৎসাহী সদস্য রইচ উদ্দিন আহম্মেদ নামে এক ব্যক্তি জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন গত ১৪ মাস ধরে ঝুলে রয়েছে। 

রইচ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘বিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটি না থাকার সুযোগে প্রধান শিক্ষক স্কুল সংস্কার, শিক্ষা উপকরণ ক্রয়সহ সরকারি বিভিন্ন বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করেন। এছাড়া তিনি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন। তাঁর স্বেচ্ছাচারী ও আগ্রাসী অনেক অভিভাবক বাধ্য হয়ে তাঁদের সন্তানদের অন্য স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন।’

প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের কারণে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপা কমিটি গঠন ঝুলে আছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘অভিভাক সদস্যের ১১ ভোটের মধ্যে ৮ ভোট পেয়ে আমি নির্বাচিত হয়েছি। আমার প্রতিদ্ব›দ্বী সভাপতি প্রার্থী এনামুল হক পান ৩ ভোট। অথচ প্রধান শিক্ষক গোপনে রেজ্যুলেশন করে এনামুল হককে সভাপতি দেখিয়ে শিক্ষা অফিস সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সেই কমিটি পাঠান। সেই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর আমি লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করি। অভিযোগের পর এক বছরের বেশি সময় পার হলেও সেই অভিযোগের তদন্ত সম্পন্ন হয়নি ও কমিটি গঠনও ঝুলে আছে।’

অভিভাবক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ছেলে নুরুননবী স্কুলে প ম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। গত ১৯ মে তাদের ক্লাসের অন্য ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে সেও প্রায় ৫ ঘন্টা ধরে অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলো। সে দিন বৃহস্পতিবার হওয়ায় হাফ স্কুল ছিল। ১১টায় ক্লাস শুরু হয়ে ২টার মধ্যে স্কুল ছুটি হওয়ার কথা। সেজন্য সে বাড়িতে তেমন কিছু খেয়ে যায়নি। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের দ্বায়িত্বজ্ঞানহীন কাÐে আমার ছিল স্কুলে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত স্কুলে আটকা পড়ে। সে চরমভাবে আতঙ্কিত ও অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমার ছেলে এখন স্কুলেই যেতে চাইছে না। এ ধরণের আচরণের জন্য প্রধান শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।’ 

প্রধান শিক্ষকের কারণে স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে দাবি করে পাঁজরভাঙা গ্রামের আজহার আলী বলেন, ‘২০১৯ সালে শাহনাজ বেগম এই স্কুল প্রধান শিক্ষক হিসেবে আসার পর থেকে বিদ্যালয়ে নানা সমস্যা। অভিভাবকের শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা নিয়ে তাঁর গেছে গেলে তিনি তাঁদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। তাঁর আচরণে সবাই বিরক্ত। গত ১৯ মে স্কুলে শিক্ষার্থীদের অবরুদ্ধ করে শিক্ষকদের দাওয়াত খেতে যাওয়ার ঘটনার পর তাঁর প্রতি এলাকাবাসীর ক্ষোভ আরও বেড়ে গেছে। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকার কোনো মানুষই তাঁকে আর প্রধান শিক্ষক হিসেবে দেখতে চান না।’

অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক শাহনাজ বেগম বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির পদ নিয়ে টানাটানির কারণে প্রায় দুই বছর ধরে কমিটি অনুমোদনের বিষয়টি ঝুলে আছে। বিদ্যালয়ের সভাপতি যেই হোক তাতে আমার কিছু যায় আসে না। স্থানীয় কিছু মানুষ উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমার সম্মানহানি করার চেষ্টা করছে।’ 

ছাত্র-ছাত্রীদের অবরুদ্ধ করে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওই ঘটনার জন্য আমি শিক্ষার্থী ও অভিভাকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। সে দিন পার্শ্ববর্তী শিয়াটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসের আয়োজনে আন্ত:বিদ্যালয় ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা চলছিল। সেই প্রোগ্রামে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমিসহ অন্য শিক্ষকেরা গিয়েছিলাম। তবে প ম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী পর দিন শাপলা কাপ স্কুল প্রতিযোগিতার পরীক্ষা থাকায় স্কুলে রেখে যাওয়া হয়। আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত তাদেরকে স্কুলে থাকতে বলি। কিন্তু আমাদের ফিরে আসতে দেরি হয়ে যায়।’   

এ বিষয়ে জানতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল বাশার মো. সামসুজ্জামান বলেন, ‘বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অবরুদ্ধ করে রেখে সব শিক্ষকদের প্রোগ্রামে যাওয়া চরম দ্বায়িত্বজ্ঞানহীন একটি কাজ। এই ঘটনার জন্য প্রধান শিক্ষক কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না। বিষয়টি আমি নিজে তদন্ত করেছি। সুপারিশমালাসহ তদন্ত প্রতিবেদন দুই-এক দিনের মধ্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকের কাছে পাঠানো হবে। এছাড়া বিদ্যালয়টিতে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন নিয়ে জটিলতা নিরসন ও বিদ্যালয়টি শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে খুব শিঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ’ 

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo