• সমগ্র বাংলা
  • লিড নিউজ

ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন ধর্মপালের গড় স্মৃতি সংরক্ষণের দাবী এলাকাবাসীর

  • সমগ্র বাংলা
  • লিড নিউজ
  • ২৫ মে, ২০২২ ১৯:০৭:২৭

ছবিঃ সিএনআই

মামুনার রশিদ,নীলফামারীঃ ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন নীলফামারীর ধর্মপালের গড়। জেলার জলঢাকা উপজেলার ধর্মপাল ইউনিয়নে গড় ধর্মপাল গ্রামে এটির অবস্থান। গড়টির নাম অনুসারে নামকরণ করা হয় গ্রামটির। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ গড়টির ইতিহাসকে মুছে ফেলতে এক শ্রেণির মানুষ সেখানে গড়ে তুলেছেন নানান স্থাপনা।


জানা যায়, পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপাল পালের (৭৯৫ খ্রিঃ) মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র ধর্মপাল রাজ সিংহাসনে বসেন। রাজ্য পরিচালনায় জলঢাকা উপজেলা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে স্থাপন করেন একটি রাজধানী। ওই রাজধানীকে বহিঃশক্রর হাত থেকে রক্ষার্থে চারপাশে গড়ে তোলেন বিশাল প্রাচীর। প্রাচীরটি প্রায় ১শ’ ফুট মাটির তৈরী যা ৩৯ একর জমি নিয়ে করা হয় সেনানিবাস। গোল আকৃতির প্রাচীর হওয়ায় গ্রামটির নামকরণ করা হয় গড় ধর্মপাল। তবে ধারণা করা হচ্ছে এই স্থানে নিচে রয়েছে রাজবাড়ী। এই গড়টি থেকে প্রায় এক মাইল পূর্বে পাল আমলের ধ্বংসাবশেষ ও প্রায় ৩৩ বিঘা পরিমিত চন্দনপাঠের দীঘি এখনো পাল আমলের স্মৃতি বহন করে চলছে। বর্তমানে এই ধ্বংসাবশেষের কোল ঘেঁষে গড় ধর্মপাল নামে আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে। এছাড়াও গড়ের পাশে একটি প্রাচীন মন্দির পাওয়া যায়।
 প্রত্নতাত্তিক বিভাগ ১৯৯০ সালে এটি খনন কাজ শুরু করলেও তা পুরোপুরি সম্পন্ন করতে পারেনি। এরপর ২০১৬ সালে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পুনঃখননের কাজ শুরু করেন। সেখানে একটি বৌদ্ধ মন্ধির পাওয়া গেছে বলে দাবী খননকারীদের।


এলাকাবাসী জানায়, পাল বংশের রাজা রাজ্য পরিচালনায় একটি প্রশাসনিক দপ্তর গড়ে তুলেন এ গ্রামে। পাল বংশের সমাপ্ত ঘটলে এ অঞ্চলে চালু হয় জমিদার প্রথা। এই অঞ্চলে প্রথম জমিদার ছিলেন নীলধনী রায়। এরপর শেষ জমিদার ছিলেন মোঃ জসিম উদ্দিন আহাম্মদ সরকার। তার পিতা হাজী মোঃ তমিজ উদ্দিন আহাম্মদ সরকারও জমিদার ছিলেন। উত্তরাধিকার স‚ত্রে মোঃ জসিম উদ্দিন সরকার জমিদারি লাভ করেন।
পাল শাসনের অবসান হলে এই অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয় মুসলিম শাসন। সে সময় পাল বংশধর ৩৩ বিঘা পরিমিত চন্দন পাঠ দিঘি জমিদার হাজী মোঃ তমিজ উদ্দিন সরকারের প‚র্ব পুরুষের নিকট বিক্রি করে যান। জমিদারি প্রথা বিলুপ্তর পরেও জমিদার মোঃ জসিম উদ্দিন সরকারের বংশধর এখনও বসবাস করেন ধর্মপাল গ্রামে বলে জানা যায়।


পশ্চিম গড় কালীতলা গ্রামের মৃত.গেচরা চন্দ্র রায়ের ছেলে শতবর্ষী খিতিশ চন্দ্র রায় জানান, পূর্ব পুরুষের কাছে আমি শুনেছিলাম ধর্মপাল রাজার নাম অনুসারে এ গ্রামের নামকরণ করা হয় গড় ধর্মপাল। পাল বংশের রাজার বাড়ি ছিলো নওগায়। এক রাজ্য থেকে যখন অন্য রাজ্য যেতেন, তখন নিরাপত্তার জন্য বা বহিঃশক্রর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এই সেনানিবাস নির্মাণ করেছিলেন। চার দিকে বিশাল বিশাল মাটির তৈরী প্রাচীর নির্মাণ করেন এবং মাটির উচু ডিপি (গোল আক্রিতির উচু মাটি) তৈরী করেছিলেন। সেখানে সেনা সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন।
একই এলাকার মৃত. নুথুরা বর্মনের ছেলে শতবর্ষী সমলা বর্মণ জানান, আমার বাবা-দাদার কাছে শুনেছি গড়ের চার পাশে জলপ্রবাহ ছিল। এরপর বিশাল আকৃতির মাটির তৈরী টিলা বানানো হয়। জলপ্রবাহ তৈরী করার উদ্দেশ্য হলো শক্ররা যাতে রামপালের সেনা নিবাসে আক্রমণ করতে না পারে।


গড় ধর্মপাল গ্রামের মৃত. তাহের উদ্দিনের ছেলে মো. নূর ইসলাম (৭৫) জানান, পাকিস্তান আমলের আগে আমরা এখানে এসেছিলাম। আমার দাদার কাছে শুনেছি এখানে একজন রাজা ছিলেন। রাজা এক রাষ্ট্র থেকে অন্য রাষ্ট্রে যাওয়ার সময় নিরাপত্তার জন্য এখানে একটি দূর্গ তৈরী করেছিলেন। কিন্তু এই গড়ের ওপর গড় ধর্মপাল নামে আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে। তবে রাজার শেষ চিহ্নটুকু স্মৃতি সংরক্ষণের দাবী এলাকাবাসীর।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo