• তথ্য ও প্রযুক্তি
  • লিড নিউজ

ত্বকের যৌবন ধরে রাখার কৌশল আবিষ্কার

  • তথ্য ও প্রযুক্তি
  • লিড নিউজ
  • ২৩ মে, ২০২২ ০২:০৪:৫৯

ছবিঃ সংগৃহীত

নিউজ ডেস্কঃ মানুষের ত্বকের যৌবন ধরে রাখার কৌশল আবিষ্কার করেছেন একদল গবেষক। তারা ৫৩ বছরের এক নারীর ত্বকের কোষগুলো পুনরুজ্জীবিত করেছেন। এরপর ওই নারীকে দেখতে ঠিক ২৩ বছরের তরুণীর মতো দেখাচ্ছিল।

যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক মানুষের ত্বকের পুনরুজ্জীবন নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করেছেন। সম্প্রতি তারা এ বিষয়ে প্রতিদেন প্রকাশ করেছেন। ই-লাইফ জার্নালে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। 

২৫ বছর আগে ভেড়ার ওপর পরিচালিত এক গবেষণার উপর ভিত্তি করে নতুন এই গবেষণা পরিচালনা করেছেন বিজ্ঞানীরা। 

গবেষকদের বিশ্বাস, মানুষের দেহের টিস্যুগুলোর সঙ্গে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এ প্রযুক্তি কাজ করবে। তাদের শেষ লক্ষ্য হলো, বয়স-সম্পর্কিত রোগ যেমন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও স্নায়বিক রোগের জন্য চিকিত্সা তৈরি করা।

এই গবেষক দলের প্রধান ছিলেন ক্যামব্রিজের বাব্রাহার ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক উলফ রেইক। তিনি বিবিসিকে বলেন, “এই কৌশল ব্যবহার করে মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে দীর্ঘকাল ধরে সুস্থ রাখতে ব্যবহার করা যেতে পারে।”

অধ্যাপক উলফ রেইক বলেন, “আমরা এই ধরনের বিষয় সম্পর্কে স্বপ্ন দেখেছি।”

অধ্যাপক উলফ রেইক আরও বলেন, “ল্যাব থেকে ক্লিনিকে যাওয়ার আগে বেশ কয়েকটি বৈজ্ঞানিক সমস্যা অতিক্রম করতে হয়েছিল। কিন্তু কোষের পুনরুজ্জীবন সম্ভব, এটা প্রথমবারের মতো প্রদর্শন করা ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”

চামড়ার কোষের পুনরুজ্জীবনের উৎপত্তি হয় ১৯৯০ সালে। যখন এডিনবার্গের ঠিক বাইরের রোজলিন ইনস্টিটিউটের গবেষকরা একটি ভেড়া থেকে প্রাপ্তবয়স্ক স্তন্যপায়ী গ্রন্থি কোষকে একটি ভ্রূণে পরিণত করেন। এটি ডলি ক্লোন ভেড়া তৈরি করা হয়েছিল। 

রোজলিন দলের লক্ষ্য ছিল ভেড়া বা প্রকৃতপক্ষে মানুষের ক্লোন তৈরি করা নয়। তথাকথিত মানব ভ্রূণের স্টেম সেল তৈরি করার কৌশলটি ব্যবহার করা। গবেষণার মাধ্যমে শরীরের জীর্ণ অংশগুলোকে প্রতিস্থাপন করার জন্য পেশী, তরুণাস্থি এবং স্নায়ু কোষের মতো নির্দিষ্ট টিস্যু জন্মানো তারা আশা করেছিল।

এরপর ২০০৬ সালে ডলি কোষের গবেষণার বিষয় আরও সহজ করেন তৎকালীন কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শিনিয়া ইয়ামানাকা। তিনি নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। যার নাম দেওয়া হয় আইপিএস। প্রাপ্তবয়স্ক কোষগুলো ৫০ দিনের জন্য রাসায়নিক যুক্ত করে রাখা হয়। এর ফলে জেনেটিক পরিবর্তন ঘটে। যা প্রাপ্তবয়স্ক কোষকে স্টেম কোষে পরিণত করে।

অধ্যাপক রেইকের দল ৫৩ বছর বয়সী ত্বকের কোষগুলোতে আইপিএস কৌশল ব্যবহার করেছে। কিন্তু তারা রাসায়নিক স্নানকে ৫০ দিন থেকে কমিয়ে প্রায় ১২ দিন করে। তবে কোষগুলি ভ্রূণীয় স্টেম কোষে পরিণত হয়নি। কিন্তু ত্বকের কোষগুলো পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। যেগুলো দেখতে ২৩ বছরের ত্বকের সমান হয়েছে।

অধ্যাপক রেইক বলেন, “যেদিন আমি ফলাফল পেয়েছি আমি পুরোপুরি বিশ্বাস করিনি। কিছু কোষ ৩০ বছরের কম বয়সে নেমেছে। এটি একটি খুব উত্তেজনাপূর্ণ দিন ছিল।”

এই গবেষণায় আংশিক অর্থায়ন করেন বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস রিসার্চ কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান অধ্যাপক মেলানি ওয়েলহাম। তিনি বলেন, “প্রযুক্তির দীর্ঘস্থায়ী ক্লিনিকাল সুবিধাগুলো খুব বেশি দূরে নয়।”

অধ্যাপক মেলানি ওয়েলহাম মনে করেন, “যদি একই ধরনের পন্থা বা নতুন থেরাপি ইমিউন কোষগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে, যা আমরা জানি বয়সের সঙ্গে কম প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে, তাহলে ভবিষ্যতে টিকাদানের প্রতি মানুষের প্রতিক্রিয়া এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হতে পারে।”

কৌশলটি খুব দ্রুত ক্লিনিকে অনুমোদন দেওয়া হবে না। কারণ আইপিএস পদ্ধতি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

কিন্তু অধ্যাপক রেইক আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। এখন এটি জানা গেছে। কোষগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব। তার দল একটি বিকল্প, নিরাপদ পদ্ধতি খুঁজে পেতে পারে।

রেইক বলেন, “দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হলো মানুষের স্বাস্থ্যের মেয়াদ বৃদ্ধি করা, জীবনকালের পরিবর্তে। যাতে মানুষ স্বাস্থ্যকর উপায়ে বয়স্ক হতে পারেন।”

প্রফেসর রেইক আরও বলেন, “বয়স্ক ব্যক্তিদের শরীরের যে অংশগুলো কাটা বা পুড়ে গেছে সেখানে ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ওষুধ তৈরি করা হতে পারে। দ্রুত নিরাময় করার উপায় হিসেবে প্রথম কিছু প্রয়োগ হতে পারে। গবেষকরা দেখিয়েছেন এটি নীতিগতভাবে সম্ভব হয়েছে।”

পরবর্তী ধাপে দেখতে হবে প্রযুক্তিটি অন্যান্য টিস্যুতে কাজ করে কি না। যেমন পেশী, লিভার এবং রক্তের কোষ।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo