• সমগ্র বাংলা

আরিচা ঘাটে সিরিয়ালে অব্যবস্থাপনা ক্ষুদ্ধ যানবাহন শ্রমিকরা

  • সমগ্র বাংলা
  • ২২ মে, ২০২২ ১৯:০৪:৪১

ছবিঃ সিএনআই

শাহজাহান বিশ্বাস,মানিকগঞ্জঃ আরিচা ঘাটে চরম অনিয়ম এবং অব্যস্থাপনার মধ্য দিয়ে সিরিয়াল ভঙ্গ করে গাড়ি পারাপারে ক্ষুদ্দ ভুক্তভোগী যানবাহন শ্রমিক ও যাত্রীরা। এ নিয়ে মাঝে-মধ্যেই শ্রমিকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটছে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশংকা করছেন যানবাহন শ্রমিকরা।

আরিচা- কাজিরহাট নৌরুটে ফেরিতে পারাপারে  কোন শৃঙ্খলা নেই বলে অভিযোগ করেছেন যানবাহন শ্রমিকরা। এ নৌপথে ফেরি সংকট, এবং সিরিয়াল ভঙ্গ করে ফেরি লোড-আনলোডে, আরিচাতে দুইবার করে নেওয়া হচ্ছে টার্মিনাল চার্জ এবং পণ্যবাহী ট্রাকগুলো রাখা হচ্ছে রাস্তার উপর।এতে ট্রাক শ্রমিকরা একদিকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন অপরদিকে বিলম্বসহ নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এছাড়া স্থানীয়দের  চলাচলে ও ব্যাবসা-বাণিজ্যে ভীষণ অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। এ থেকে পরিত্রান পেতে চান ভুক্তভোগীরা।

রবিবার সকালে আরিচা ঘাটে টার্মিনাল এলাকা থেকে থানার মোড় পর‌য্ন্ত রাস্তার উপর পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সাড়ি এবং অনুরূপ নদীর ওই পারে পাবনার কাজিরহাটে কাজিরহাট-পাবনা সড়কের তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সাড়ি ছিল বলে ফেরি কর্তৃপক্ষ সুত্রে  জানা গেছে।  

একাধিক ট্রাক শ্রমিকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, আরিচা - কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু হবার পর থেকে যাতায়াতের  সুবিধার জন্য তারা (চালকরা) এ নৌরুট ব্যাবহার করছেন। এক বছর অতিবাহিত হলেও ফেরি সার্ভিসের কোন উন্নতি হয়নি।বরং অবনতিই হয়েছে।২০২১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে বেগম সুফিয়া কামাল ও বেগম রোকেয়া এই দু’টি নতুন ফেরি দিয়ে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটের ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়।খুব অল্প সময়েই পারাপার হওয়া যেতো ওই ফেরি দিয়ে । কিন্তু বেশ কিছু দিন চলার পর কর্তৃপক্ষ কি কারণে ওই ফেরি দু’টিকে অন্যত্র নিয়ে যায় তা তাদের জানা নেই বলে জানান যানবাহন শ্রমিকরা। 

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা কপোতি ও রানিক্ষেত নামের ডাম্ব ফেরিটি যান্ত্রীর ত্রুটির কারণে বন্ধ রয়েছে। মাত্র একটি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।ফলে শুরু থেকেই আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি সংকট রয়েছে।

এরমধ্যে আবার ঘাটে নেই কোন শৃঙখলা। বিধায় এখানে ফেরিতে যানবাহন লোড-আনলোডে কোন সিয়াল মানা হচ্ছে না।এরপর রয়েছে দালালদের উৎপাত।এসব দালালরা চালকদের নিকট থেকে বাড়তি টাকা নিয়ে ফেরি কর্তৃপক্ষের কিছু অসাধু লোকদের যোগসাজসে সিরিয়াল ভঙ্গ করে বুকিং দিয়ে গাড়ি পার করে দিচ্ছে। এতে কেউ আগে এসে সিরিয়ালে বসে থাকছে, আবার কেউ পরে এসে সিরিয়াল ভঙ্গ করে আগে ফেরি পার হয়ে যাচ্ছে।

এছাড়া বিআইডব্লিউটিএ’র টার্মিনালে গাড়ি পার্কিং চার্জ বিড়ম্বনা।আরিচা ঘাটে দুইবার করে দিতে হচ্ছে টার্মিনাল চার্জ।বিআইডব্লিউটিএ’র লোকজন ৭৫ টাকার টার্মিনাল পার্কিং চার্জ নিচ্ছেন 

১শ’ টাকা করে। এটা গাড়ি টার্মিনালে থাকলেও নিচ্ছে না থাকলেও নিচ্ছে।এছাড়া গাড়িগুলো টার্মিনালে রাখলে বিআইডব্লিউটিএ’র দেওয়া ইজাদার কর্তৃপক্ষ টার্মিনাল চার্জ হিসেবে ৫০টাকা করে আদায় করছে।টার্মিনালে রাখা গাড়িগুলোকে পাহারার জন্য দেওয়া হচ্ছে ২০টাকা করে।এসব কারণে ট্রাক চালকরা আরিচা ঘাটে ফেরি পার হতে আসা গাড়িগুলোকে সড়কের উপর রাখছে। এক বিড়ম্বনা এড়াতে গিয়ে পড়তে হচ্ছে আরেক বিড়ম্বনায়।চলাচলের রাস্তা আটকিয়ে সড়কের উপর গাড়ি রাখা ঝুকিপূর্ণ এবং অনিরাপদ।এসময় গাড়ি থেকে মালামাল চুড়ি হয়ে যেতে পারে। গাড়ি চালকদের ঘুমানো, খাবার-দাবার ও পয়ঃনিস্কাশনসহ নানা ধরণের অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।এছাড়া রাস্তার পাশে স্থানীয় দোকানদারদে ব্যাবসা –বাণিজ্য অসুবিধা হচ্ছে।

ট্রাক চালক আক্কাস আলী জানান,আরিচা ঘাটের টার্মিনালে গাড়ি রাখলে দুইবার করে টার্মিনাল পার্কিং চার্জ দিতে হয়। একবার বিআইডব্লিউটিএ’র ৭৫টাকার পার্কিং চার্জ ১শ’টাকা ও ইজাদারের ৫০টাকা দিতে হচ্ছে। ।এছাড়া পাহাদারের জন্য ২০টাক করে দিতে হয়।এছাড়া টার্মিনালে গাড়ি রাখলে সিরিয়ালে বসে থাকতে হয়। এতে দেখা গেছে পরের গাড়ি আগে পার হয়ে যাচ্ছে।এসব কারনে একটু কষ্ট হলেও আমরা গাড়ি রাস্তার উপর রাখি। 

স্থানীয় ব্যবসায়ী অজিত কর্মকার বলেন, রাস্তার উপর গাড়ি রাখাতে আমাদের ব্যাবসা বাণিজ্যে অসুবিধা হচ্ছে।কাস্টমাররা আমাদের দোকানে আসা যাওয়া করতে পারছে না।টার্মিনাল ফাঁকা থাক সত্তেও যে কি কারণে রাস্তার উপর গাড়িগুলো রাখা হয় তা তার বোধগম্য নয়।  

বিআইডব্লিউটিসি’র ডিজিএম শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ বলেন, আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরির সংকট রয়েছে। তাবে জুনের পরে আরো কয়েকটি  ফেরি এ নৌবহরে যুক্ত হবে।

টার্মিনাল ফাকা থাকা সত্তেও রাস্তার উপর গাড়ি রাখার ব্যাপারে তিনি বলেন, ফেরি পারাপার করা হচ্ছে আমাদের কাজ।গাড়ি টার্মিনালে রাখা না রাখা এবং সিরিয়াল মেইনটেন করার দায়ীত্ব বিআইডব্লিউটিএর।

বিআইডব্লিউটিএ’র ভারপ্রাপ্ত পোর্ট অফিসার মো. শাহ আলম বলেন, আমাদের কাজ বন্দরের ব্যাবস্থাপনা করা। রাস্তার উপর গাড়ি থাকলে ওটা দেখাশোনা করবে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ।গাড়ি টার্মিনালে রাখা না রাখা ওটা আমাদের কাজ না। 

দুইবার করে টার্মিনাল চার্জ নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা একটা দৈত সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।  যেহেতু আরিচাতে ফেরি সার্ভস চালু হওযার আগে আমাদের উদ্ধোর্ধতন কর্তৃপক্ষ ইজারা দিয়েছে এটাতো আমি বাতিল করতে পারিনা।

ট্রাফিক ইন্সপেক্টর জুবায়েদ বলেন, রাস্তায় গাড়ি এলোমেলোভাবে রাখছে কি না, শৃঙ্খলা ঠিক রাখা আমাদের দায়িত্ব।গাড়ি কোথায় থাকবে না থাকবে এটা আমাদের দায়ীত্ব না।ওটা দেখাশুনার কাজ বিআইডব্লিউটিএর। 

 

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo