মেজবা রহমান, বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ মামা আমি গরীব মানুষ। ম্যালাগুলো টাকার দেনা আছি। দুইডা সংসার টানা লাগে। আপনাদের গাড়ি চালাই ।আপনাদের যে কোন বিপদেই অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ছুটি আপনাগে সাথে। তারপরেও কেন ছাত্র মামারা আমারে প্রতিবন্ধী বানায় দেছে?”- হাসপাতালের বেডে এমনি প্রলাপ বকছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি চালক বাহারুল ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাশিয়ানী গামী বাস ও একমাত্র অ্যাম্বুলেন্স চালাতেন।
গত ৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বাস চালকের বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানো ও এক শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়ার অভিযোগে শিক্ষার্থী-বাসচালকদের মাঝে সংঘর্ষ হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক শিক্ষার্থীসহ মোট দু’জন বাস চালক আহত হন। পরে একই দিনে সন্ধ্যায় ঐ বিভাগের শিক্ষার্থীরা বাহারুলকে ফোন করে ডেকে নেয়। তার দাবি, ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোর্শেদের নেতৃত্বে কয়েকজন ছাত্র তাকে তুলে নেয় । পরে ছাত্রীদের খেলার মাঠে অপেক্ষমান প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীরা তাকে বেধড়ক মারপিট করে। এসময় তিনি মাথা, মেরুদণ্ড, হাত, উরু, দুই পা ও নাকে মারাত্মক ভাবে আহত হন।
পরে শিক্ষক ও সহকর্মীদের সহায়তায় তাকে গোপালগঞ্জের ২৫০ শয্যাশায়ী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ পরে অবস্থার উন্নতি না ঘটায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তার উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনার সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
এদিকে নিজ চিকিৎসার জন্য অর্থকষ্টে ভুগছেন বাহারুল। বেশ কয়েক বছর ধরে দুই দফায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোট ১৩ লাখ টাকা কর্পোরেট লোন নেয় এই কর্মচারী। মাস শেষে মূল বেতনের প্রায় সবটাই চলে যায় কিস্তি পরিশোধের জন্য। কোনমতে ওভারটাইম করে দিন কাটাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু গত এক মাসের বেশী সময় ধরে শয্যাশায়ী চিকিৎসাধীন থাকায় পরিবার নিয়ে চিকিৎসার বিপাকে পরেছেন বাহারুল । আহত হবার প্রাক্কালে কর্মচারী ফেডারেশনের দেওয়া অর্থ দিয়েই তিনি কোনমতে চিকিৎসাকার্য চালান৷
এ বিষয়ে কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিএম আশিকুর রহমান জানান, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বাহারুলের যাবতীয় চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের আশ্বাস দেয়। পরে আমাদের সভাপতি তরিকুল ইসলাম নিজস্ব টাকা দিয়ে বাহারুলের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন৷ আমরা তার উপর এই ন্যাক্কারজনক হামলার সুষ্ঠু বিচার চাই৷
এ বিষয়ে খুলনার সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আব্দুল কাদের বলেন, বাহারুল আমাদের কাছে ভর্তি ছিল। তার নাক,মাথা, মেরুদণ্ড ও পায়ে প্রচন্ড আঘাতের আলামত পাওয়া গেছে। তার অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে তাকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে৷ আমরা বিশ্রামের পরামর্শ দিয়ে রিলিজ দিয়েছি। উনাকে দেড় মাসের বেড রেস্ট দেওয়া হয়েছে।আশা করি এতে তার পা ও মেরুদণ্ডের আঘাত কাটিয়ে উঠতে পারবে।
এদিকে এই ঘটনার অভিযুক্ত নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থী মের্শেদের সাথে কথা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন।তিনি জানান, আমাকে অযথা এই ঘটনায় জড়ানো হয়েছে। আমাদের কয়েকজনের নামে অভিযোগ উঠলে প্রক্টর অফিসে ডাকা হয়েছিল। সেখানেই বিস্তারিত জানিয়েছি।
এদিকে উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটনায় জড়িত দুই ড্রাইভারকে বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে কর্মচারীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তাদের বহিষ্কার প্রত্যাদেশ তুলে নেওয়াসহ ১০ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়৷
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মোঃ শরাফত আলী বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট অভিযুক্ত বাস চালক ও শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততার নানা প্রমাণাদি আমরা সংগ্রহ করেছি৷ অভিযুক্ত বেশ ক’জনের বিবৃতি নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দোষীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইনের আওতায় আনা হবে ।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য ও প্রক্টর ড. রাজিউর রহমান বলেন, বাহারুলের আহত হাওয়ার বিষয়ে আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের অফিসে ডেকে এনে জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে৷ তদন্ত কমিটির রিপোর্ট সাপেক্ষে আমরা সুষ্ঠু বিচার করবো।
মন্তব্য ( ০)