• স্বাস্থ্য
  • লিড নিউজ

দেশে হঠাৎ বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ, তরুণরাই বেশি আক্রান্ত

  • স্বাস্থ্য
  • লিড নিউজ
  • ২৪ মার্চ, ২০২২ ১৮:৫১:৩৬

ছবিঃ সংগৃহীত

নিউজ ডেস্কঃ হঠাৎ করে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় গরমের সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা। ঢাকার আশপাশের জেলাতেও ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ঘণ্টায় ৫০ জনের বেশি রোগী আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) মহাখালী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, রোগীদের সিংহভাগই বয়সে তরুণ। তারা তীব্র পানিশূন্যতা সহ বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালটিতে আসছেন। ২০১৮ সালের এপ্রিলের পর চলতি মাসে এতো রোগী দেখছেন তারা।

চিকিৎসকরা বলছেন, চলমান তাপদাহের কারণে আমাদের শরীরে পানির চাহিদা বেড়েছে। তৃষ্ণা মেটাতে খোলা জায়গায় শরবত ও আখের রস পান করছেন অনেকেই। নোংরা পরিবেশে তৈরি করা এসব পানীয়তে ব্যবহার হচ্ছে দূষিত পানি। এসব পান করার ফলেই তরুণদের মধ্যে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

আইসিডিডিআর,বি সূত্রে জানা গেছে, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসার আগে দুই একজন রোগীর মৃত্যুর হলেও মহাখালীর হাসপাতালটিতে এখন পর্যন্ত কেউ মারা যায়নি।

বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, রোগী বাড়ায় আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালের বাইরে বসানো হয়েছে অস্থায়ী তাবু। অ্যাম্বুলেন্স, সিএনজি করে একের পর এক রোগী আসছেন। কাউকে স্ট্রেচারে করে এনে হাসাপাতালে বিছানায় শোয়ানো হচ্ছে। কেউ বাইরে অপেক্ষা করছেন। হাসপাতালটির কর্মকর্তারা বলছেন, তারা এবার রোগী সামলাতে কিছুটা হিমশিম খাচ্ছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছেন ৫৭৫ জন রোগী। গতকাল বুধবার এক হাজার ২৩৩ জন ও তার আগের দিন মঙ্গলবার এক হাজার ২৭২ জন রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি হন। মার্চের শুরু থেকে ডায়রিয়ার প্রকোপ থাকলেও মধ্য মার্চ থেকে রোগীর সংখ্যা হু-হু করে বাড়ছে। গত ১৬ মার্চ এক হাজার ৫৭ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। ২০ মার্চ এ সংখ্যা ছিল এক হাজার ২১৬ জন। ১৬ থেকে ২৪ মার্চ দুপুর পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার ডায়রিয়া রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

নরসিংদী থেকে আসা মধ্য বয়স্ক কায়কোবাদ সরকার বলেন, দুই দিন ধরে প্রচণ্ড পেট ব্যাথা ও পাতলা পায়খানা হয়। গতকাল বমি শুরু হলে শরীর বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। এরপর এখানে আসি। এখন কিছুটা সুস্থ, রাতের মধ্যেই বাসায় চলে যাবো।

তরুণদের মধ্যে এ বছর ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি। এ বিষয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতিবছরই এই মৌসুমে গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডায়রিয়া রোগী বাড়ে। গত বছর কোভিডের লকডাউনের কারণে মানুষ বাইরে বের হয়নি। তাই বাইরের দূষিত খাবার না খাওয়ায় ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক ছিল। তবে এবার রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে।

আইসিডিডিআর,বির সহযোগী গবেষক ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. লুবাবা শাহরিন বলেন, খাবার ও পানির মাধ্যমে ডায়ারিয়ার জীবাণু সংক্রমিত হয়। গরম বাড়ার কারণে খোলা জায়গার বিভিন্ন ফলের জুস, শরবত খাচ্ছেন পথচারীরা। এই কারণে ডায়ারিয়ার বিস্তারটা এবার ব্যাপক।

তিনি বলেন, মার্চের শুরু থেকে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ১৪ মার্চ থেকে দৈনিক এক হাজারের বেশি রোগী আসছেন। গত কয়েক বছরে এতো রোগী আমরা দেখিনি। এবার ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে শিশুদের তুলনায় তরুণ রোগী বেশি পাচ্ছি।

তরুণ রোগী বাড়ার কারণ হিসেবে ডা. লুবাবা শাহরিন বলেন, তারা হয়তো বাইরের খাবার বেশি খাচ্ছেন। খোলা জায়গার বা মুক্ত পরিবেশের খাবার খাচ্ছেন। এ কারণে ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

এই চিকিৎসক আরও বলেন, এবার অনেক বেশি মাত্রায় রোগী পাচ্ছি। রোগীরা মারাত্মক পানিশূন্যতা নিয়ে আমাদের কাছে আসছেন। তারা সঠিক সময়ে যদি না আসতেন তাহলে অনেকের মৃত্যুর আশঙ্কা থাকতো। ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পেতে নিরাপদ পানি ও খাবারের বিকল্প নাই। সবচেয়ে ভালো ঘরে তৈরি করা খাবার ও ফুটানো পানি খেতে হবে। পাশাপাশি বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে।

কোন এলাকা থেকে বেশি রোগী আসছেন- এমন প্রশ্নে ডা. লুবাবা শাহরিন বলেন, ঢাকার সব যায়গা থেকে রোগী আসছেন। তবে যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, উত্তরখান, মানিকনগর, জুরাইন, মুগদা- এসব এলাকা থেকে বেশি রোগী আসছেন। আর ঢাকার বাইরে নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা থেকে প্রচুর রোগী আসছেন। আসলে যেসব জেলা থেকে ঢাকার সড়ক পথে দূরত্ব কম- সেসব জেলা থেকে রোগী বেশি আসছেন।

কীভাবে সামলাচ্ছে আইসিডিডিআর,বি ?
ডায়রিয়ার চিকিৎসা বিনামূল্যে হওয়ায় আক্রান্তরা সাধারণত আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে বেশি আসেন। তাই এখানে রোগীর চাপও বেশি থাকে। রোগীর চাপ সামলাতে এবার হাসপাতালের বাইরে টানানো হয়েছে অস্থায়ী তাবু। সেখানে শতাধিক বিছানাও বসানো হয়েছে।

ডা. লুবাবা শাহরিন বলেন, আমরা কোনো রোগীকে ফেরত দিচ্ছি না। যারা মারাত্মক পানিশূন্যতা নিয়ে আসছেন তাদের সঙ্গে সঙ্গে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। এতে তারা দ্রুতই সুস্থ হচ্ছেন। আমাদের জায়গা স্বল্পতার কারণে কোনো রোগী মোটামুটি সুস্থ হলেই বাসায় পাঠিয়ে দিচ্ছি। কারণ আরও অনেক রোগী ভর্তির জন্য আসছেন।

যখন বুঝতে পারি রোগী ঝুঁকিমুক্ত, তাদের কাউন্সিলিং করে ওষুধ দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিচ্ছি। তারপরও আমরা বলে দিচ্ছি রোগীরা কী কী নিয়ম মেনে চলবেন, কীভাবে সুস্থ থাকবেন বা কী হলে আবার হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। এই সাজেশনগুলো দিয়ে রোগীদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। সাধারণত রোগীরা একদিন থাকার পরই বাসায় যেতে পারছেন, যোগ করেন আইসিডিডিআর,বির এই সহযোগী গবেষক।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo