• বিশেষ প্রতিবেদন
  • লিড নিউজ

বেহাল অবস্থায় বেদে সম্প্রদায় 

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • লিড নিউজ
  • ০২ আগস্ট, ২০২১ ১৫:৫২:০৯

ছবিঃ সিএনআই

কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ  মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে তাঁবুতে বসেই বেকার দিন কাটাতে হচ্ছে বেদে সম্প্রদায় সদস্যদের। জীবিকা নির্বাহের তাগিদে কয়েকদিন পর পর এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় গিয়ে বসবাস করতে হয় তাদের। কিন্তু করোনা ও কঠোর বিধিনিষেদের কারণে এবার কালিয়াকৈরে আটকে গেছে বেদেদের এই বহর। কাজকর্মহীন বেদেরা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তাঁবুতেই দিন পাড় করছে। জীবিকার টানে কাজে গেলেও ফিরতে হচ্ছে শুন্য হাতে।

গফুরগাঁও থাকতে মেয়র সাহেব আমাদের বেশ সহায়তা করেছিল। কিন্তু এখানে এসে লকডাউনে আটকা পড়ে এখন পর্যন্ত সরকারী কোন সহায়তা বা ত্রাণ পাই নাই। কিছু খাদ্যসামগ্রী ছিল কম করে খেয়েও বেশি দিন নিতে পারিনি। এখন কী খাব আমরা! এভাবেই অসহায়ত্বের কথা জানান গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার শ্রীফলতলী জমিদারবাড়ী সংলগ্ন এলাকায় আশ্রয় নেয়া বেদে সম্প্রদায়ের সরদারের ছোট ভাই বাবুল মোল্লা। 

এই বেদে পল্লীতে সাভার, বিক্রমপুর ও যশোর থেকে আগত ৫০টি পরিবারের এখন বেহাল অবস্থা। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে নারী, শিশুসহ তিন শতাধিক মানুষ।  কোরবানির ঈদ এখানে কাটালেও অনেকের কপালে জোটেনি কোরবানির মাংস। বেদে নারীরা ঈদের দিন পাড়া-মহল্লায় গেলেও অনেকেই মাংস দিয়েছে আবার অনেকেই দেয়নি। করোনার ভয়ে অনেকেই আবার দুর-দুর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। ঈদুল আজহায় অনেকেই খিচুড়ি-টিচুড়ি রান্না করে খেয়েছি। এভাবেই ঈদের দিনের বর্নণা দিচ্ছিলেন বেদে নারী চায়না। করোনার ভ্যাকসিনের কথা জানতে চাইলে বেদেরা বলেন, করোনার টিকার জন্য কি দিয়ে কি করতে হয় আমরা তো জানি না, এসব বুঝিও না। এখন পর্যন্ত আমরা কেউ টিকা নিতে পারি নাই। এ কথা বলতে বলতেই আরেকজন বেঁধে বলেন, আমরা তো এদেশের ভোটার আমাদের প্রায় সকলেরই স্মার্ট কার্ড রয়েছে। কিন্তু আমরা সরকারের কাছ থেকে তেমন কিছু পাই না। আমাদের এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সহযোগিতার আবেদন জানাচ্ছি।

সরদার ছয়ার মোল্লার পরিচালকের চাচা আব্দুল কাদের ভান্ডারী বলেন, একটা ঘটনা হইলো কি জানেন, কারো কিছু জায়গা আছে কারোর নাই। অনেকেরই একটা খুঁটি যে গারবে এরকম জাগাও নাই। আমগরে কইছিল যে সাভারের পশ্চিমপাড়ে তোমাদের গুচ্ছগ্রাম কইরা দিমু কিন্তু জাগোরে জায়গা জমিন আছে তাগোরে দিয়া বইরা থুইয়া দিছে আর আমগরে কুনসুম দিব? আমগোর এইহানে যারা আছে চৌদ্দ আনা মানুষেরি একটা নোক থোবার জাগা নাই। বাজান খাল-বিল মইরা গেছেগা, নদী ভরাট হইছে তাই আমাদের এহন অন্যের জাগায় জাগায় থাকতে অয়। আগে পানিতে নৌকায় বেশি থাকতাম। সরকার থেইকা আগে কিছু অনুদান পাইছিলাম। এহন তো অবস্থা খুব খারাপ আমগরে যদি সরকার এহন কিছু সহযোগিতা করত তাইলে ভালো অইতো।

এই বেদে পল্লীতে শিক্ষার ছোঁয়া নেই বললেই চলে। কথা হয় ছোট মেয়ে অরুনার সাথে সে বলে, ছোটবেলায় ক্লাস ওয়ান পর্যন্ত পড়ছি এখন আর পড়ালেখা করি না। এখনো সাপ ধরতে ও খেলা দেখাইতে পারি না। তাবিজ কবজ, শিঙ্গা লাগানো, দাঁতের পোকা ফালানো ও নাভি কাটা এখনো এ ধরনের কোনো চিকিৎসা শিখি
নাই। বাবা-মার কাছ থেকে পড়ে শিক্ষা নিব। বেদে নাজমা বেগম বলেন, বিভিন্ন গ্রামে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাপ খেলা দেখানো, সিঙ্গা লাগানো, দাঁতের পোকা দূর করা ও নাভিকাটাসহ নানা কাজ করতাম, ওই টাকায় আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ে সহ পাঁচ সদস্যের সংসার মোটামুটি ভালোই চলতো। করোনা আসার পর থেকেই ভাইরাসের ভয়ে অনেকেই এখন সিংগা লাগাতে চায় না। পেটের টানে গ্রামে গেলেও করোনার আতঙ্কে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে মানুষ। এখন আমার আগের মতো আয় নেই তাই সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এখন যদি আমাদেরকে কেউ একটু সাহায্য সহযোগিতা করত তাহলে অনেক ভালো হইতো। এ অবস্থায় আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে সহযোগিতা চাচ্ছি।

এ ব্যাপারে কালিয়াকৈর উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ কামাল উদ্দিন সিকদার বলেন, আমাদের মাসিক সভায় এ বিষয়টি উত্থাপন করবো। উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে তাদের সহযোগিতা করা হবে। কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বলেন, বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। আমরা এ বিষয়ে সচেষ্ট আছি। আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করব।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo