• বিশেষ প্রতিবেদন

ইলিশ সংকটে দেনার দায়ে দিশেহারা জেলে পরিবার, নদ-নদীতে মিলছেনা ইলিশ

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ০২ আগস্ট, ২০২১ ১০:৫৭:০৩

ছবিঃ সিএনআই

চরফ্যাশন(ভোলা)প্রতিনিধি:  বৈশাখ থেকে আশ্বিন-এ ছয় মাস ইলিশ মৌসুম। কাগজ-কলমের হিসেবে মৌসুমের অর্ধেক শেষ। কিন্তু দেশের দক্ষিণ উপকূলের নদ-নদীতে ইলিশের দেখা মিলছে না। চিরচেনা অকৃপন সমুদ্র এবার কৃপা করবে এমন আশায় দিন-রাত জীবনের ঝুকি নিয়ে উত্তাল নদীতে ভেসে থেকে দেনার বোঝা ভারী করে শূণ্যহাতে ঘাটে ফিরছে জেলে ট্রলারগুলো। করোনার কঠোর বিধিনিষেধ চলমান থাকায় স্থানীয় শ্রমবাজার গুলো বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সংকটকালে বিকল্প উৎস থেকে আয়ের পথও পাচ্ছে না
জেলেরা। ফলে হতাশায় খেয়ে না খেয়ে উদ্বেগের দিন কাটাচ্ছে প্রায় লক্ষাধিক জেলে পরিবার। মেম্বার ও মৎসজীবীলীগ কমিটির খামখেয়ালীপনা সরকারী সুবিধা না পাওয়ার অভিযোগ জেলেদের।

চরফ্যাশন সিনিয়র মৎস্য অফিস সুত্রে জানাযায়, উপজেলার ঢালচর, সামরাজ, বকসি ঘাট কুকরী-মুকরী, চর নিজাম, বেতুয়া, নতুন ¯øুইজ ঘাটের বে-সরকারী হিসেব অনুযায়ী ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় লক্ষাধিক জেলে রয়েছে। এদের মধ্যে ৩২ ভাগ সার্বক্ষনিক এবং ৬৮ ভাগ খন্ড কালীন ইলিশ আহরণের কাজে নিয়োজিত থাকেন। এছাড়া কেনা-বেচা, পরিবহনসহ সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত থাকে আরো ২০ থেকে ২৫ হাজার লোক। তবে ইলিশ শিকারী জেলের সংখ্যা আরো কয়েকগুন বেশী হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। তবে জেলেদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও মৎস্য অফিসের হিসেব অনুযায়ী উপজেলায় ৬০ হাজার জেলে রয়েছে এর মধ্যে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৪ হাজার ২৮১ জন এবং সুবিধাভোগি জেলের সংখ্যা রয়েছে ৪৫ হাজার জন। অপর জেলেদের পর্যায়ক্রমে সুবিধার আওয়াতায় আনা হবে বলে মৎস্য কর্মকর্তা মারুপ হোসেন মিনার জানিয়েছেন। সামরাজ ঘাটের আনোয়ার মাঝি জানান, ১৭ জেলের ট্রলার নিয়ে টানা ৪দিন নদীতে অবস্থান করে পেয়েছেন ১৫টি ইলিশ মাছ। স্থানীয় বাজার দর অনুযায়ী এর মূল্য দাঁড়াবে সর্বোচ্চ ৮ হাজার
টাকা। তবে ইলিশ কম থাকায় দাম একটু ভাল। এই আয়ের বিপরীতে ৪দিনের খাওয়া-দাওয়া ও জ্বালানি মিলে এই ট্রলারের খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। এভাবেই এবার লোকসান গুনছেন জেলেরা। ধার-দেনা পরিশোধ তো দূরের কথা, নিজেদের তিনবেলা খাবারের অর্থ যোগাড়ই যেন তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। চেয়ারম্যান বাজার এলাকার আলমগীর হোসেন বলেন, মাঝে মধ্যে ইলিশ জালে আটকা পড়ে। কোন রকম সংসার চলাতে পারি।

জলবায়ুর পরিবর্তন এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ইলিশের মৌসুম বদলে গেছে। তাই পুরনো হিসেবে এখন ভরা মৌসুমে ইলিশের আকাল চলছে এবং শীঘ্রই অবস্থার উন্নতি হবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশার কথা শুনালেও জেলেরা বলছে ভিন্ন কথা। জেলেদের দাবী বাংলাদের সমুদ্রসীমায় ভারত ও মিয়ানমারের জেলেরা লাশা-জাল ফেলে মাছ শিকার করছে এতে শুধু ইলিশই নয়, সব ধরনের মাছই ধরা পড়ছে। লাশা-জাল পেরিয়ে কোন মাছ উপকূলে আসতে পারছে না। ফলে ভারতীয় এবং মিয়ানমারের জেলেরা গভীর সমুদ্রে মাছ পেলেও উপকূলীয় নদ নদীতে আমরা পাইনা। ভারত ও মিয়ানমারের জেলেরা লাশা-জালে আটকে গেছে উপকূলের জেলেদের ভাগ্য। সামরাজ ঘাটের সমুদ্রগামী ফিশিং বোটের মাঝি কামাল হোসেন জানান, তার ট্রলারে ২০জন জেলে নিয়ে নদীতে যাত্রায় বাজার খরচ হয়েছে ১ লক্ষ টাকা।

কিন্তু ৫দিন নদীতে থেকে ২০টি ইলিশ মাছ নিয়ে ঘটে ফিরতে হয়েছে। একদিকে করোনার প্রদূর্ভাব অন্যদিকে নদীতে ইলিশ সংকটের কারনে ৫ লাখ টাকা দেনার দায় নিয়ে বিপাকে রয়েছে তার পরিবার। বেতুয়া ঘাটের আকতার মাঝি জানান, করোনার কারনে স্থাল ভাগে কোন কাজ নেই। ৪-৫ মাস ধরে কাজ না থাকায় বেকার হয়ে পরেছি। পরিবারে সদস্যের মুখে ভাত তুলে দেওয়াই এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। কর্মহীন এই সময়ে মহাজন আর এনজিওর কাছে দেনা করেছেন প্রায় ২০ হাজার টাকা। ‘মাছধরায় নিষেধাজ্ঞা চলাকালিন সময়ে এবার সরকার থেকে কোনো ধরনের সহায়তা পাইনি। ভরা মৌসুমে নদীতে ইলিশের সংকটের কারনে মাহজনের দেনা বোঝা ভারি হচ্ছে। দেনার দায়ে দিশেহার হয়ে পরেছেন তিনি। মানবেতর জিবন যাপন করছে উপকুলের জেলেরা।ঢালচর ঘাটের অহিদ বেপারী জানান, বৈশাখের মাঝা-মাঝি মৌসুম শুরু হয় এবং শেষ হয় আশ্বিনের শেষ দিকে।

সাধারনতঃ ৩০ আশ্বিনকে মৌসুমের শেষ দিন ধরে হিসাব-নিকাষ করা হয়ে থাকে। প্রত্যেক যাত্রায় আশানুরুপ মাছ পেতে অর্জিত লাভ থেকে আস্তে আস্তে জেলে, মাঝি এবং ট্রলার মালিক মহাজনের দাদন কেটে দিয়ে কমাতে থাকে। এভাবে দিতে দিতে এক সময় দাদনের টাকা পরিশোধ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্ত এবছরে ইলিশ সংকটের কারনে বেশীর
ভাগ জেলেদের দাদনের দায় পরিশোধ হবেনা । ঢালচর ঘাটের বিসমিলল্লাহ ফিসের মালিক আব্দুস সালাম হাওলাদার জানান, গত মৌসুম শেষে জেলেদের হাতে তার প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫ কোটি টাকার দাদন বকেয়া ছিল। এ মৌসুমে ওই দাদনের সাথে আরো ৫০লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এভাবে নদী-সাগরে ইলিশের সংকটের কারনে দাদনের পরিমান আরো ৫০লাখ বেড়ে যেতে পারে। নদীতে মাছ না থাকায় এভাবে উপকূল জুড়ে জেলেদের দেনার পরিমান বাড়ছেই।

চরফ্যাশন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার জানান, অতিমাত্রায় লবনাক্ত পানির কারনে উপকূলীয় নদ -নদীতে ইলিশ মাছের বিচরণ কমে গেছে। তবে জুলাইয়ের শেষের দিকে জেলেরা আশানুরুপ ইলিশ মাছ পাবে বলে আশা করা যায়। আর পর্যায়ক্রমে প্রত্যেক জেলেকেই সুবিধার আওয়াতায় আনা হবে

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo