• বিশেষ প্রতিবেদন

টাঙ্গাইলের বাসাইলে ক্ষতিগ্রস্ত পাকা রাস্তা মাটি দিয়ে সংস্কার করায় জনদূর্ভোগ চরমে

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ১৩ জুন, ২০২১ ১৬:০৫:৫৬

ছবিঃ সিএনআই

টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের বাসাইলে পাকা রাস্তা কাঁচা মাটি দিয়ে সংস্কার কাজ করায় জনদূর্ভোগ চরম আকার ধারন করেছে। আগে কিছুটা ঝুঁকি নিয়ে হলেও মানুষ ও যান চলাচলের জন্য সচল ছিল রাস্তাটি। সংস্কারের পর থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এ যেন হিতে বিপরীত অবস্থা হয়েছে। টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাশিল ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আইসড়া ভায়া ঝনঝনিয়া একটি জনগুরুত্বপুর্ণ রাস্তা।

এটি উপজেলা সদরের সাথে ফুলকী ইউনিয়নবাসীর যোগাযোগের একমাত্র রাস্তা। গতবারের বন্যায় প্রায় ৫০/৬০ মিটারের মতো জায়গার পিচ ও ইটের খোয়া সরে গিয়ে খাদের সৃষ্টি হয়। তার পর থেকে ঝুঁকি নিয়েই চলছিল যানবাহন ও মানুষের যাতায়াত। সম্প্রতি সড়কের ওই ক্ষতিগ্রস্ত অংশটুকু সংস্কারের জন্য টেষ্ট রিলিফের (টিআর) প্রায় ৭০ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়। উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মলি আক্তার নিজেই ওই প্রকল্পের সভাপতি।

তার স্বামী কাজটি বাস্তবায়ন করেন। এ মাসের প্রথম সপ্তাহে সংস্কার কাজটি শেষ করেন। তার পর থেকেই চলাচলের ক্ষেত্রে জনদূর্ভোগ বেড়ে যায় বহুগুণে। বর্তমানে সড়কটি দিয়ে যোগাযোগ পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জানা যায়, বালি ও খোয়ার সংমিশ্রনে সংস্কার কাজটি করা কথা। কিন্তু এসব উপকরনের পরিবর্তে সড়কের পাশের ধানক্ষেত থেকে এটেল মাটি দিয়ে ভরাট করে রাস্তার খাদ।

আর সেই  মাটির উপর ইটের আধলা ফেলে এক পরত বালু দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। এর উপর বৃষ্টির পানি আর  যান চলাচলের চাপে সংস্কারকৃত অংশটুকুতে হাটু অবদি কাদায় পরিনত হয়। ফলে সড়কটির এমন বেহাল অবস্থা হয়েছে যে, যান চলাচল তো দুরের কথা, পায়ে হেটে চলারও অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে ক্ষোভে ফুসে উঠছে ভুক্তভোগিরা। তারা বলছেন, যে সংস্কারে রাস্তা নিরাপদ যাতায়াতের পরিবর্তে  চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে এমন সংস্কার আমরা চাইনা। নিয়ম বহির্ভূতভাবে পাকা রাস্তায় কাদামাটি দিয়ে দায়সারা সংস্কারে কারণেই বর্তমানে জনদুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে।

বেটারি চালিত অটো চালক  বলেন, সড়কে প্রতিদিন দুই চারটি বেটারী চালিতঅটো রিক্সা উল্টে গিয়ে আঘাত প্রাপ্ত হচ্ছে যাত্রীরা। ভেঙ্গচুড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অটোরিক্সা। এক সিএনজি চালক  বলেন, কাদায় লেপ্টে আটকে যাচ্ছে সিএনজি চালিত অটো রিক্সা, পিকআপ ভ্যান, ট্রাক, ভ্যানরিক্সা ও মটর সাইকেলসহ অন্য ভারি যানবাহন। তৈরি হচ্ছে যানজট। চরম দুর্ভোগে পোহাচ্ছে যাত্রীরা। মাত্র ৫০/৬০ মিটার রাস্তা অপরিবল্পিতভাবে বালু খোয়ার পরিবর্তে কাদামাটি দিয়ে মেরামত করায় চলাচলে অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। এতে ফুলকী ইউনিয়নের মানুষের টাঙ্গাইলের ঘারিন্দা ঘুরে উপজেলা সদরে যেতে হচ্ছে। 

এই কাদামাটি অপসারন করে ইটের খোয়া ও বালি না ফেলা পর্যন্ত এ রাস্তা দিয়ে কোনক্রমেই যাতায়াত সম্ভব না। ময়থা নতুন বাজারের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন,  সাধারন যাত্রীদের পাশাপাশি চরম বিপাকে পড়েছে ময়থা নতুন বাজার, পুরাতন বাজার, ফুলকি পশ্চিম ও দক্ষিন বাজারের ব্যবসায়ীরা। তাদের দোকানের মালামাল আনা নেওয়ার জন্য প্রায় ১৫/২০ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হচ্ছে। ভাড়া গুনতে হচ্ছে দ্বিগুনেরও বেশি। ওই সড়কে যাতায়াতকারী মিনি ট্রাক চালক সোহরাব হোসেন বলেন, সংস্কারের আগে তাও চলাচল করা গেছে। কিন্তু কাদামাটি দিয়ে সড়ক সংস্কারের কারনে এখন আর চলাই যাচ্ছেনা। 

সড়কের সৃষ্ট গর্তে ও কাদা-পানিতে প্রতিদিনই কোনো না কোনো যানবাহনের ফেসে যাচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হচ্ছে।  এ এলাকায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রায় ২০ কিলোমিটার ঘুরে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করতে হচ্ছে। কথা হয় সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চালক শাহদত হোসেনের সাথে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এটেল কাদা মাটি দিয়ে পাকা রাস্তার ভাঙ্গা মেরামত করার এমন অবিবেচকের মতো কাজ আর দেখি নাই। এই রাস্তার হাটু পর্যন্ত কাদায় দেবে অনেক যানবাহন প্রতিদিনই বিকল হয়ে পড়ছে।

ফুলকি ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ডে সদস্য  আব্দুল মান্নান বলেন, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যন নিজেই এ কাজটি করেছেন। কাজের পরিকল্পনায় ভুল আর দায়িত্বহীন ভাবে কাচা কাদামাটি দিয়ে সংস্কারের  কারনেই রাস্তাটির এমন বেহাল অবস্থা। ইটের খোয়া আর বালির সংমিশ্রনে রাস্তাটি মেরামতের কথা থাকলেও ইরি ক্ষেতের এটেল মাটি দিয়ে কাজ করায় বৃস্টিতে মাটি হাটু পর্যন্ত কাদা হয়ে গেছে।এতে  এলাকার হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারন করেছে। এই কাদা সরিয়ে শিগগিরই রাস্তাটি পুনরায় ঠিক করে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য অনুরোধ করছি।

বাসাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যন কাজী অলিদ ইসলাম বলেন, কিছুদিন আগে এই রাস্তাটুকু মেরামতের জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে কিছু টাকা  বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। যে ভাবে কাজ করার কথা ছিল সে নিয়ম অনুযায়ী কাজটি না করায় রাস্তাটির এমন বেহাল অবস্থা হয়েছে। কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব প্রাপ্ত বাসাইল উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মলি আক্তারের সাথে আমার কথা হয়েছে।

দ্রুত সময়ের মধ্যে রাস্তার কাদা অপসারন করে কাজটি পুনরায় করে দেবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাসাইল উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মলি আক্তার বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টি বর্ষনের কারনে রাস্তায় পানি জমে কাদার সৃষ্টি হয়েছে। শিগগিরই কাজটি পুনরায়  করে দেওয়া হবে।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo