• সমগ্র বাংলা

আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি এবং ঘাট সংকট, যাত্রী দুর্ভোগ চরমে

  • সমগ্র বাংলা
  • ১২ জুন, ২০২১ ১৮:১৬:৪৮

ছবিঃ সিএনআই

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধিঃ ঘাট এবং ফেরি সংকটের কারণে আরিচায় তিন ধরে আটকে আছে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক। ট্রাক শ্রমিকদের পাশাপাশি যাত্রীদেরকেও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আরিচা-কাজিরহাট নৌ-রুটে ফেরি সংকট হওয়ায় পারাপারে বিলম্ব হচ্ছে। ফেরি পার হওয়ার জন্য ঘাটে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রী এবং যানবাহন শ্রমকদেরকে। নদীতে পানি বৃদ্ধি, ফেরি ও ঘাট সংকট এবং ফেরি লোড-আনলোডে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হওয়ায় এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, দুই পারে ২টি ঘাট নির্মাণ করে গত ২৭ ফেব্রুয়ারী ৪টি ফেরি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফের সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এরপর থেকে পারাপারের উদ্দেশ্যে আসা গাড়ির সংখ্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাবনা ঈশ্বরদীসহ দেশের উত্তর-পশ্চিামাঞ্চলের মানুষের সড়ক পথে সহজ যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে আরিচা- কাজিরহাট নৌ-রুট। এ নৌরুটে একদিকে অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে অন্যদিকে সময় কম লাগছে এবং ফেরিতে উঠার পর যাত্রা বিরতিতে রিলাক্সে যাতায়াতের জন্য অনেকেই এখন এ নৌরুট ব্যাবহার করছেন। তিন মাস যেতে না যেতেই যাত্রী এবং যানবাহনের সংখ্যা অনেকটা বেড়েছে। কিন্তুু ঘাট কর্তৃপক্ষ বিআইডবিøউটিএ এবং ফেরি কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিসি ঘাট এবং ফেরির সংখ্যা বাড়ায়নি। ফলে বিগত  চারদিন ধরে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি পারাপরে এ অচলবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে একটি মাত্র ঘাটের ফেরি পন্টুনের র‌্যাম পানির নীচে ডুবে যাচ্ছে। এতে ফেরি লোড-আনলোডে সমস্যা এবং পারাপারে বিলম্ব হচ্ছে।

এ নৌরুটে চারটি ফেরির মধ্যে ৩টি ফেরিই বিকল হয়ে পড়েছে। এদিকে ফেরি ঘাটের এ্যাপ্রোচ রাস্তা পিচ্ছিল হওয়ায় পথি মধ্যে ট্রাকের চাকা আটকে যাচ্ছে। এতে দফায় দফায় যানবাহন লোড-আনলোড বন্ধ থাকছে। যানবাহনের তুলনায় ফেরি এবং ঘাট কম হওয়াতে ফেরি কর্তৃপক্ষ বাড়তি যানবাহনের চাপ সামাল দিতে হিমসীম খাচ্ছেন। যে কারণে একটি ফেরি ঘাটে ভীড়লেই যানবাহন শ্রমিকরা সিরিয়াল ভঙ্গ করে ফেরিতে উঠার জন্য প্রতিযোগীতা শুরু করে দেয়। এতে ঘাটে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়ে দালাল এবং গারির শ্রমিকদের মধ্যে মারামারির মতো ঘটনাও ঘটছে। সবমিলিয়ে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি পারাপারে হ-য-ব-র-ল’র সৃষ্টি হয়েছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে এ নৌরুটে আরো ফেরি ও ঘাট বাড়ানো দরকার বলে যানবাহন শ্রমিকরা মনে করছেন। শনিবার সকালে আরিচা ঘাট ঘুরে দেখা গেছে, আরিচা ঘাটের টার্মিনালসহ ফেরি লো-আনলোডের এ্যাপ্রোচ রাস্তায় শত শত পণ্যবাহী ট্রাক এবং প্রাইভেটকার এবং মাইক্রোবাস ফেরি পারের জন্য অপেক্ষা করছে।

এর মধ্যে অনেক পণ্যবাহী ট্রাক আছে গত বুধবার থেকে ফেরি পারের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। প্রাইভেটকার চালকরা শনিবার সকালে আসলেও ফেরি সংকট এবং ঘাট সমস্যার কারণে দুপুরেও ফেরি পার হতে পারেননি। ফেরিতে উঠার এ্যাপ্রোচ রাস্তা বৃষ্টির কারণে নরম এবং পিচ্ছিল হওয়ায় দফায় দফায় পণ্যবাহী ট্রাকের চাকা আটকে পড়ছে। এতে ফেরিতে গাড়ি লোড-আনলোড বন্ধ থাকছে এবং ব্যহত হচ্ছে স্বাভাবিক ফেরি চলাচল। এ নৌবহরে চারটি ফেরি মধ্যে তিনটি ফেরিই বিকল রয়েছে। এর মধ্যে ছোট ফেরি কপোতি মেরামতের জন্য নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। গত ১০ জন থেকে বেগম সুফিয়া কামাল এবং ১২ জুন সকাল থেকে কেতোকি বিকল হওয়ায় আরিচা ঘাটেই নোঙর করে রাখা হয়েছে। এ নৌ বহরের একটি মাত্র ফেরি বেগম রোকেয়া সচল রয়েছে। এদিকে ফেরি কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিসি আরিচা ঘাটের যানবাহনের চাপ সামাল দিতে গ শুক্রবার পাটুরিয়া ঘাট থেকে খান জাহান আলী নামের একটি রো-রো ফেরি এনে এ নৌবহরে সংযুক্ত করেছেন। এরপরও শনিবার দুপুরে আরিচা ঘাটে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক ফেরি পারের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। 

ট্রাক চালক মো. শাহিন মিয়া বলেন, আমি বুধবার বেলা ২টায় আরিচা ঘাটে আসি। কিন্তু আজ শনিবার দুপু ১২টাতেও ফেরি পার হতে পারেনি। টাঙ্গাইল রোডে যানজটের কারণে এখান দিয়ে তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য আসলাম কিন্তুু কোন লাভ হলো না। এখানে এসে দেখি ফেরি ও ঘাটের সমস্যা। ট্রাক চালক শহিদুল ইসলাম জানান, সহজে যাতায়াতের জন্য আরিচা ঘাট হয়ে আসি। কিন্তুু এখানে ফেরি ও ঘাটের সমস্যার কারণে পারাপারে দেরী হচ্ছে। ফেরি সংকটের কারণে একটি মাত্র ফেরি ঘাটে ভীড়া মাত্র সকলেই ফেরিতে উঠার জন্য সিরিয়াল ভঙ্গ করে তাড়াহুড়া করতে থাকে। এসময় ফেরি লোড-আনলোডের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়।

ট্রাক চালক আলাউদ্দিন বলেন, ঘাটে কোন নিয়ম-শৃঙ্খলা নেই। দেখা গেছে আমরা আগে এসে সিরিয়ালে বসে আছি। কিন্তুু আমাদের পরে এসে সিরিয়াল ছাড়াই দালালের মাধ্যমে বাড়তি টাকা দিয়ে টিকেট কেটে ফেরিতে উঠে পার হয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে আরো ফেরি বাড়ানো এবং দুই পারেই আরো দু’টি ঘাট নির্মাণ করা দরকার বলে তারা মনে করছেন। এব্যাপারে ফেরি কর্তৃপক্ষ বিআইডবিøউটিসি’র আরিচা ঘাটের ম্যানেজার মো.আবু আব্দুল্লাহ বলেন, এ বিষয়ে আমরা আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আরিচা এবং কাজিরহাটে আরো একটি করে ঘাট নিমার্ণ এবং এ নৌবহরে আরো দু’টি ফেরি সংযোগ করলে হয়তো এসমস্যা থাকবে না বলে তিনি জানান।

ঘাট কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম বলেন, নদীতে পানি বাড়ার কারণে একটু সমস্যা হচ্ছে। আর কাজিরহাট প্রান্তে জায়গার অভাবে নতুন করে ঘাট বানানো সম্ভব হচ্ছে না। তাবে ঘাটগুলো লো-ওয়াটার লেবেল থেকে মিড-ওয়াটার লেবেলে উঠানো কাজ চলছে। আশা করি কাজ শেষ হলে ঘাটে এ সমস্যা থাকবে না বলে তিনি জানান। 

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo