• শিক্ষা

বৈশ্বিক মহামারিতে অনিশ্চিত এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা

  • শিক্ষা
  • ১২ জুন, ২০২১ ১৬:৫৭:০৭

ছবিঃ সংগৃহীত

নিউজ ডেস্কঃ বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে টালমাটাল সময়ের মাঝে চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নিতে পারছে না সরকার। এরই মধ্যে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য সকল প্রস্তুতি শেষ করলেও সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে এখনও তা অনিশ্চিত। পাবলিক এই পরীক্ষাগুলো নিতে পাঠ্য সিলেবাসও ইতোমধ্যে সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে সংক্ষিপ্ত এই সিলেবাসের উপর ক্লাস নিয়েই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

দিনদিন করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে লকডাউন আর বিধিনিষেধ বাড়ার সাথে সাথে বন্ধ আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বছরের ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি এবং ১ এপ্রিল এইচএসসি পরীক্ষা হওয়ার কথা। কিন্তু এবারে তা হয়নি। এমনকি কখন হবে এ বিষয়েও অবগত নয় কেউ।

এ দিকে, পরীক্ষার সময় নির্ধারণ না হওয়ার কারণে সংশয়ে আছেন শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকেরা। দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন শিক্ষক ও শিক্ষাবিভাগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। কিন্তু কোনোভাবেই কোনো সিদ্ধান্ত দিতে না পারায় উভয় সংকটে পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

সূত্র বলছে, করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও বিকল্প পদ্ধতিতে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ন্যূনতম ৬০ এবং এইচএসসিতে ৮৪ দিন ক্লাসের পর পরীক্ষা নেওয়া হবে। ক্লাস করানো সম্ভব হলেই নির্ধারিত সংখ্যক ক্লাস করিয়ে দুই সপ্তাহ বিরতির পরেই নেওয়া হবে পরীক্ষা।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। শহরের শিক্ষার্থীরা অনলাইন বা বাসায় টিউশনি করে পাঠকাজ এগিয়ে নিলেও পিছিয়ে আছে গ্রামের গরীব ঘরের শিক্ষার্থীরা। তারা দূরশিক্ষণ কিংবা টেলিভিশন পাঠের সুযোগ পায়নি। তাদের কথা মাথায় রেখেই স্বল্প সময়ে লেখাপড়া করিয়ে হলেও পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত যৌক্তিক।

করোনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তিন দফায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও খুলতে পারেনি। এর আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হবে মর্মে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার নির্দেশনা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ গত ২৬ মে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু করোনা সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় এই দিনেও খুলতে পারছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে গতকাল শনিবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়িয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছিল, ৫ শতাংশের কম সংক্রমণ হলেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হবে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেতে থাকে বর্তমানে যা ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ।

এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, আগে বড় শহরে সংক্রমণ বেশি ছিল। বর্তমানে মফস্বলে, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ বেশি।

সংক্রমণের হার ৫-এর নিচে না নামলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে না দেওয়ার বিষয়ে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির পরামর্শ আছে। সে কারণে একটু অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কেননা ছাত্রছাত্রীদের ঝুঁকিতে ফেলা সমীচীন হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জানা গেছে, এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে সরকার উদগ্রীব। চলমান সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যেই অনলাইনে এই পরীক্ষাগুলো নেওয়া যায় কিনা সে ব্যাপারে পরামর্শ চেয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদকে আহ্বায়ক করে কমিটিও গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু এই বিষয়ে মতামত দেননি বিশেষজ্ঞরা। তাদের দাবি প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থীর এভাবে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হবে।

বিষয়টিতে অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া যতটা সহজ ২০ থেকে ২২ লাখ পরীক্ষার্থীর ক্ষেত্রে তত সহজ নয়। এই পরীক্ষাগুলোকে নিতে হলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সবার জন্য বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট বা ওয়াইফাই নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু সেটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তাছাড়া গ্রামের বেশিরভাগেরই কম্পিউটার বা ল্যাপটপ নেই। তাই আমরা অনলাইনে পরীক্ষার কথা ভাবতে পারছি না। তবে যখনই খোলা যাবে তখন ক্লাস করিয়েই তাদের পরীক্ষা নেওয়া হবে।

এ দিকে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেই পরীক্ষা নেওয়া হবে এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ইতোমধ্যে এসএসসি ও দাখিলের প্রশ্ন প্রণয়ন ও পরিশোধন শেষে মুদ্রণ কাজও শেষ করেছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

অন্যদিকে, সংক্রমণ তাণ্ডবের মাঝেই এসএসসি পরীক্ষা নিতে সরকার শতভাগ প্রস্তুত। এখন কাস্টমাইজড (পুনর্বিন্যাসকৃত) সিলেবাসের ওপর শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়ার অপেক্ষায়। করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে এলেই অপেক্ষার পালা শেষ হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ শেষ হয়েছে। এরপরও নানা কারণে যারা ফরম পূরণ করতে পারেনি, তাদেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেউ পরীক্ষা বঞ্চিত হবে না বলেও নিশ্চিত করেছে সূত্রটি।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo