• বিশেষ প্রতিবেদন

কালিয়াকৈরে কষ্টে আছে মুচি সম্প্রদায়, নেই কোন আর্থিক সহায়তা!

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ০৫ জুন, ২০২১ ১৪:৪২:২৭

ছবিঃ সিএনআই

কালিয়াকৈর,গাজীপুর প্রতিনিধিঃ  যুগ যুগ ধরে আমাদের পায়ের জুতা সৌন্দর্যবর্ধক করণ, মেরামত ও তৈরি করার কাজে নিয়োজিত আছে মুচি সম্প্রদায়। করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন সারা বাংলাদেশসহ গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মুচি সম্প্রদায়। সরেজমিনে জানা গেছে, উপজেলার শতাধিক মুচি পরিবার অর্থের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

উপজেলার সফিপুর, মৌচাক, পল্লী বিদ্যুৎ, চন্দ্রা ও কালিয়াকৈর বাজার বিভিন্ন জায়গায় বসে জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন তারা। আবার কেউ কেউ পাড়া-মহল্লায় গিয়ে জুতা মেরামতের কাজ করেন। তবে করোনায় কাজ না থাকায় বেশিরভাগ মুচি ঘরে বসে আছেন। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। কেউ কেউ জীবিকার তাগিদে কাজে বসলেও মিলছে না আশানুরূপ কাষ্টমার।

কালিয়াকৈর বাজার এলাকায় অনেককেই মলিন মুখে বসে অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। কেউ কেউ বসে তাদের সেলাইয়ের কাজে ব্যবহৃত যন্ত্র শান দিচ্ছে। তবে তাদের কারো কাছেই মাস্ক ছাড়া করোনা ভাইরাসের অন্য কোন সুরক্ষা সরঞ্জাম দেখা যায়নি।

উপজেলার কালিয়াকৈর বাজার  এলাকার মুচি  শ্রী বাসুদেব জানান, 'আমার পরিবারে আমার স্ত্রী দুই মেয়ে, দুই ছেলে ও মা সহ মোট ৭জন সদস্য ।ইনকাম না থাকায় পরিবার নিয়ে দুবেলা খাওয়াটাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে সেখানে কীভাবে এসব সুরক্ষা সরঞ্জাম কিনে ব্যবহার করব। ইনকামের অবস্থা খুবই খারাপ। কাজ একদম কম। লকডাউনের কারণে তো আগের মতো মানুষের চলাফেরা নাই। গতকাল সারাদিনে মাত্র একশ বিশ টাকার কাজ করছি। আজ সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেল মাত্র কয়েক টাকার কাজ হয়েছে। তবে লকডাউনের আগে প্রতিদিন ছয়শ থেকে আটশ টাকা পর্যন্ত কাজ করতে পারতাম।'

সফিপুর এলাকার মুচি সম্প্রদায়ের মৃত সত্যেন্দ্রর ছেলে কনাই জানান, ‘আমি সকাল থেকে মাত্র ১০ টাকার কাম করছি আর গতকাল ৮০ টাকার কাম করছিলাম। বর্তমানে এমন ইনকাম দেইখা আমার ছেলে এই কাম করতে রাজি হয় না। সে নাকি গ্যারেজের কাম করব। কি আর করমু। এহন স্কুল বন্ধ তাই গ্যারেজের কাম শিখাইতাছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমার বাপ-দাদার এই পেশা আমি অনেক কষ্টে ধরে রেখেছি। আমার পরিবারে স্ত্রী ও দুই মেয়ে এক ছেলে। এ কাজ করে সংসার চালাতেই কষ্ট হয়ে যায়। তাই ছেলে-মেয়েকে কয়েক ক্লাস পড়িয়ে বিয়ে-সাদী দিয়েছি। ইনকামের এই দূরবস্থা দেখে আমার ছেলে সবুজ বাপ-দাদার এই পেশা ছেড়ে এখন রিকশা চালায়। আমাদের বর্তমানে খুব করুন অবস্থা।’

মুচি ক্ষিতিষ বলেন, ‘করোনা আসার পর থেকে আমাদের কেউ কোনো সহযোগিতা করে নাই। আমরা কিভাবে দিনপাত করি এটা দেখার কেউ নাই। আমরা কি এদেশের নাগরিক না? আমরা কি ভোট দেই না? করোনার কারণে আমাদের ইনকাম নাই বললেই চলে এভাবে আমাদের সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে।

কালিয়াকৈর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, 'প্রান্তিক জনগোষ্ঠী মুচি সম্প্রদায় নিয়ে বর্তমান সরকার কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে। অতি শীঘ্রই তাদেরকে তিন মাস অথবা ছয় মাস করে আলাদা ক্যাটাগরিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। এমনকি তাদেরকে এককালীন আঠারো হাজার টাকা প্রদান করা হবে। করোনাকালীন সময়ে সুরক্ষা জনিত বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে তবে আর্থিক কোনো সহায়তা করা হয়নি।'

কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম আজাদ বলেন,' আমাদের মাসিক সাধারণ সভায় এ সম্প্রদায়ের মানুষের মানবেতর জীবনযাপন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। শীঘ্রই আমাদের উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তাদের আর্থিক প্রণোদনা সহায়তা প্রদান করা হবে।'

 

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo