মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: এবার বর্ষা শুরু হবার আগেই শিবালয়ের যমুনার পাড় এলাকায় নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে আরিচা ঘাট সংলগ্ন দক্ষিণ শিবালয়, ছোট আনুলিয়া ও অন্বয়পুর এ তিনটি গ্রাম। ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বিগত কয়েক দিনে এ তিনটি গ্রামের নদী পাড় এলাকার বেশ কিছু অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এবছর ভাঙ্গনের যে ভয়াবহতা দেখা যাচ্ছে, আগে থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এ তিনটি গ্রাম নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন স্থানীয়রা। ইতিমধ্যে নদী ভাঙ্গন রোধে ভুক্তভোগী গ্রামবাসী শিবালয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে একটি লিখিত আবেদন করেছেন।
শনিবার সরজমিনে উক্ত ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে দেখা গেছে, মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার দক্ষিণ শিবালয়, ছোট আনুলিয়া ও অন্বয়পুর গ্রামের নদী পারের প্রায় ৬শ’ থেকে ৭শ’ ফুট এলাকার বাড়ি-ঘর এবং ফসলি জমি এমনিতেই বিগত বর্ষা থেকেই তীব্র নদী ভাঙ্গনে হুমকির মুখে রয়েছে। গত বর্ষায় এ তিনটি গ্রামের নদীর পার এলাকায় বিশাল পাড়ালের সৃষ্টি হয়ে ভয়াবহ অবস্থায় আছে। ফলে গ্রামবাসীরা অনেকই অতংকের মধ্যে রয়েছেন। এবার বর্ষা শুরু হবার আগেই ভাঙ্গতে শুরু করেছে। বর্ষায় নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথে ব্যাপক আকারে নদী ভাঙ্গনের সম্ভাবনা রয়েছে। যা শত চেষ্টা করেও ভাঙ্গন রোধ কর কঠিন হয়ে পড়বে। তাই পূর্বেই ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।
ভাঙ্গন কবলিত এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে , ভাঙ্গন কবলিত এলাকার অদুরে পশ্চিমে ও উত্তরে নদী মাঝে চর পড়ায় পানির ¯্রােত এসব গ্রামের নিকটবর্তী এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে স্থানীয় অনেকেই ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছেন। এ তিনটি গ্রামের অনেকের বাড়ি ঘর ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। আরিচা কাশাদহ সেচ প্রকল্পের পানির পাম্প হাউজটি হুমকির সন্মুখিন হয়ে পড়েছে। নদীর পার এলাকা দীর্ঘ দিন ধরে প্রতিবছরই সীমিত আকারে ভাঙ্গে। কিন্তু গত বছর থেকে এ তিনটি গ্রামের নদী ভাঙ্গন সর্বকালের ভয়াবহন রূপ ধারন করেছে। গত বারের বর্ষায় পানি বাড়ার সময় যেভাবে নদী ভাঙ্গন শুরু হয় তা বিগত ৫০ বছরেও এরকম ভাঙ্গন দেখা যায়নি। এবার বর্ষা শুরু হবার আগেই ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে পানি বৃদ্ধির সময় এ তিনটি গ্রাম নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। নদী ভাঙ্গনের কারণে এ এলাকার লোকজন এখন আতংকের
মধ্যে বসবাস করছেন। নদীর পাড় এলাকা দিয়ে বেড়ীবাঁধ নির্মাণ এবং নদী শাসন করলে হয়তো নদী ভাঙ্গন রোধ করা সম্ভব হবে। তা না হলে পূর্ব পুরুষের ভিটাবাড়ি, জায়গা জমি সব নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। অবশেষে গৃহহীন হয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়ে বসবাস করতে হবে। এমতাবস্থায় আরিচা ঘাট সংলগ্ন নিহালপুর এলাকা হতে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত নদী ভাঙ্গন রোধে জরুরী ভিত্তিতে বেড়ীবাঁধ নির্মান ও নদী শাসনের দাবী জানিয়েছেন তারা।
নদী ভাঙ্গন রোধে ভাঙ্গন কবলিত এলাকাবাসী এবং শিবালয় বন্দর ব্যবসায়ী সমাজ কল্যাণ সমিতি’র পক্ষ থেকে মাননীয় মন্ত্রী পানি সম্পাদ মন্ত্রণালয়, মাননীয় সংসদ সদস্য মানিকগঞ্জ-১, জেলা প্রশাসক মানিকগঞ্জ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিবালয়, নির্বাহী প্রকৌশলী বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং নির্বাহী প্রকৌশলী বিআইডব্লিউটিএ বরাবর একাধিকবার আবেদন করা হয়েছে।
অন্বয়পুর গ্রামের মো. আকতার হোসেন বলেন, নদীর মাঝে চর পড়ার কারণ পানির স্রোত পাড় এলাকা দিয়ে প্রভাহিত হচ্ছে। যে কারণে এবার বর্ষা আসার আগেই আমাদের গ্রামটিতে নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এখন থেকেই ভাঙ্গন রোধে যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয় তাহলে অচিরেই গ্রাম তিনটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। মানিকগঞ্জ-১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য এ,এম নাঈমুর রহমান দূর্জয় ভাইয়ের কাছে আমাদের আকুল আবেদন অতি দ্রæত এই ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
স্থানীয় সুনিল হলদার বলেন, আমার মোটামোটি ৭৫ বছর বয়স। এ বসয়সে ছোট আকারে অনেক ভাঙ্গন দেখেছি। কিন্তুু এবার যে ভাঙ্গনে ধরেছে ভয়ংকর ভাঙ্গন এখন আমরা হতাশায় পড়ে গেছি। আবাদি জমি ও গাছ পালা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিগত ৫০বছরেও এরকম নদী ভাঙ্গন আমরা দেখিনি। মো. সমসের মোল্লা জানান, এই নদীটা ছিল অনেক দুরে। আস্তে আস্তে ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে এ পর্যন্ত এসেছে। এবছ অতিরিক্ত ভাঙ্গছে। এ ভাঙ্গন রোধে কেউ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।
ঠান্ডু পরধান বলেন, কয়েক বছর ধরে কিছু কিছু করে নদী ভাঙ্গে। এছর অনেক ভাঙ্গছে। এভাবে নদী ভাঙ্গতে থাকলে আমাদের থাকাতো অনেক অসুবিধা
হয়ে পড়বে। সন্ধ্যা রানী হলদার বলেন, আমরা হলদার মানুষ নদী ভাঙ্গনের কারণে আমরা বাড়িতে থাকতে পারিনা, ঘুমাতে পারিনা,খাইতে পারিনা। আমরা এক ভাঙ্গা দিয়ে জাফরগঞ্জ থেকে এখানে এসেছি। এখানে এসেও সেই নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়েছি। হলদার মানুষ স্বামী কামাই করতে পারেনা। ছেলেদের লেখা পড়া করাইতে পারি নাই। খুব কষ্টে দিন কাটছে কেউ কোন খোঁজ-খবরও নেয় না।
এব্যাপারে মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন জানান, শিবালয়ের নদী ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় এমপি মহোদয় আমাকে তাগিদ দিয়েছেন। আমরা আমাদের উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি পারমিশন পেলেই কাজ শুরু করবো।
মন্তব্য ( ০)