• আন্তর্জাতিক

ভারতে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে ব্যাংক ধর্মঘট

  • আন্তর্জাতিক
  • ১৬ মার্চ, ২০২১ ১১:৩৫:৩৫

ছবিঃ সংগৃহীত

 

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ভারতে টানা দুইদিনের ব্যাংক ধর্মঘট চলছে। সোমবার (১৫ মার্চ) থেকে এই ধর্মঘট শুরু হয়। গত সপ্তাহে ৯টি ব্যাংক ইউনিয়নের সংগঠন ইউনাইটেড ফোরাম অফ ব্যাংক ইউনিয়নস এই ধর্মঘটের ডাক দেয়। তবে নামে দু’‌দিনের ধর্মঘট হলেও আসলে তা মোট চার দিনের।

সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, গত শনিবার (১৩ মার্চ) ছিল ব্যাংক বন্ধ। পরদিন রোববার সাপ্তাহিক ছুটি। এর সঙ্গে সোমবার এবং মঙ্গলবার সারা ভারতজুড়ে ঘোষণা দেওয়া হয় ব্যাংক ধর্মঘটের। অর্থাৎ দেশটির গ্রাহকরা ব্যাংকিং সেবা পাচ্ছেন না টানা চারদিন ধরে। ব্যাংক বেসরকারিকরণ এবং বিনিয়োগ হ্রাসের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এই ধর্মঘট চলছে।

জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, বিনিয়োগ হ্রাসের বিষয়ে নেওয়া সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ধর্মঘটের মাধ্যমে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নজরে আসতে চাচ্ছেন দেশটির প্রায় ১১ লাখ ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী। ২০১৪ সালে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশটির প্রায় সর্বত্রই বিনিয়োগ হ্রাস হচ্ছে।

এছাড়া চলতি অর্থবছরের কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করার সময়ই দেশটির অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ঘোষণা দিয়েছিলেন, দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক এবং একটি রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থা ২০২১-২২ অর্থবছরেই বেসরকারিখাতে ছেড়ে দেওয়া হবে।

কিন্তু সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, শুধুই দু’টি ব্যাংক এবং একটি বিমা সংস্থা নয়, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কমপক্ষে এক ডজন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার তালিকা তৈরি করেছে, যেগুলো খুব শিগগিরই বেসরকারিখাতে ছেড়ে দেওয়া হবে।

ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বভারতীয় সংগঠন বিইএফআই’র সাধারণ সম্পাদক জয়দেব দাশগুপ্ত বলছেন, ‘‌এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর সংযুক্তিকরণের প্রক্রিয়া প্রবলভাবে শুরু হয়েছে। সংযুক্তিকরণের পর এখন ব্যাংক আছে ১২টি।’

তিনি বলেন, ‘প্রথমে পাঁচটি সহযোগী ব্যাংককে যুক্ত করা হয়েছে স্টেট ব্যাংকের সঙ্গে, তারপর ব্যাংক অফ বারোদার সঙ্গে বিজয়া ব্যাংক, দেনা ব্যাংককে যুক্ত করা হয়েছে। তৃতীয় দফায় ১০টি ব্যাংককে সংযুক্ত করে চারটি ব্যাংকে পরিণত করা হয়েছে। ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সংখ্যা এখন ১২টি।’‌

তাদের আশঙ্কা, এর মধ্যে যে কোনো দু’টি ব্যাংক বেসরকারিখাতে গেলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়াবে ১০টি। কিন্তু সেখানেই শেষ হবে না, কারণ কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সব ক্ষেত্রেই ন্যূনতম এক এবং সর্বোচ্চ চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার দায়িত্ব সরকার বহন করবে। অর্থাৎ, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সংখ্যা ভবিষ্যতে আরও কমবে!

এর পাশাপাশি আরও কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন উঠে আসছে। ছোট ব্যাংকগুলোর সংযুক্তিকরণ হচ্ছে এই যুক্তিতে যে, তাদের কারও কারও অনুৎপাদিত সম্পত্তির পরিমাণ এতই বেড়ে গেছে যে, সেই তুলনায় ভালো ব্যবসা করা ব্যাংকের সঙ্গে তাদের না সংযুক্ত না করলে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

কিন্তু অনাদায়ী ঋণ উদ্ধারে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং দেখা যাচ্ছে, দেশের বড় শিল্পপতিরা, যাদের অনেকেই আবার মোদি সরকারের ঘনিষ্ঠ, ব্যাংকের থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত দিচ্ছেন না।

এই ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধারের বিষয়ে কার্যত সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই। উল্টো ঋণখেলাপিদের নামের তালিকাও প্রকাশ করতে নারাজ মোদি সরকার।

এমন পরিস্থিতিতে ধর্মঘটের মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহককে দুর্ভোগে ফেলে কী সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করা যাবে? জয়দেব দাশগুপ্তের দাবি, ‘‌সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ তো অবশ্যই হচ্ছে। কিছু তো অসুবিধা হচ্ছেই। কিন্তু দুই দিনের অসুবিধা সহ্য করে যদি ৩৬৫ দিনের অসুবিধা কাটানো যায়, সেটাই তো ভালো!’
 

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo