• প্রশাসন

খানসামায় অসহায় গৃহবধূর জীবন বাচালেন দিনাজপুরের এসপি

  • প্রশাসন
  • ২৫ জুলাই, ২০২০ ১০:৫৬:৪২

ছবিঃ সিএনআই

দিনাজপুর প্রতিনিধি: এক মানবতার মহানুভবতার নাম দিনাজপুরের পুলিশ সুপার মোঃ আনোয়ার হোসেন পিপিএম বিপিএম (বার) তার উদারতার দৃষ্টান্ত উজ্জ্বল হয়ে হয়তো জ¦লবে না কিন্তু অহায় নাসরিন বেগমের অবুঝ শিশুর হৃদয়ে আজীবন জ¦ল জ¦ল করে আলো জড়াবে এই পৃথিবীতে । চার বছরের শিশুর মা নাসরিন বেগমকে বাঁচানোর আকুতি হয়তো আল্লাহ শুনতে পেয়ে আল্লাহ পাক অহায় ভ্যান চালক তৌহিদুল ইসলামের স্ত্রী নাসরিন বেগম চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর পথযাত্রী খবর শুনার পর খানাসামা ওসি শেখ কামাল হোসেন নির্দেশ প্রদান করেন যত দ্রুত সম্ভব উন্নত চিকিৎসার জন্য দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল
কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসার জন্য এ্যাম্ভুলেন্স পাঠিয়ে দিয়ে নিয়ে আসেন এবং চিকিৎসার সমস্ত ব্যায় ভার বহনের প্রতিশ্রæতি প্রদান করেন এসপি আনোয়ার হোসেন । জেলার খানসামা উপজেলায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে থাকা এক গৃহবধূর চিকিৎসা নিশ্চিতের মাধ্যমে এক মানবতার পরিচয় দিলেন।

শুক্রবার বেশ কয়েকদিন অনলাইন পোটালে ভূল চিকিৎসায় জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে নাসরিন বেগম শিরোনামে নিউজ প্রকাশ করা হলে বিষয়টি জেলা পুলিশ সুপার মোঃ আনোয়ার হোসেন পিপিএম বিপিএম (বার) এর নজরে আসে। এসপি আনোয়ার হোসেন আরোও জানান, নিউজটি পড়ে আমার খুব খারাপ লেগেছে। ৪ বছর আগে চিকিৎসকের ভুলের কারণে ৪ বছর ধরে বিছানায় কাতর জীবন-যাপন করছেন গৃহবধূ নাসরিন বেগম (২৫)। নিউজটি আমার হৃদয়ে আঘাত করেছে। আমি তাৎক্ষনিক খানসামা থানার ওসিকে ফোন দিয়ে রোগী নাসরিন বেগমের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ খবর নিতে বলি পরে এ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। নাসরিনকে তার বাড়ী থেকে তার পরিবারের লোকজনসহ দিনাজপুরে চিকিৎসার জন্য আনা হয়। দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গৃহবধূ নাসরিন বেগমের চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। গৃহবধূ নাসরিন বেগমের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনে আমি মেডিকেল বোর্ড গঠন করব। আমি তার চিকিৎসার সব ধরনের খরচ চালাব।

খানসামার থানার ওসি শেখ কামাল হোসেন বলেন, এসপি স্যারের নির্দেশ পাওয়ার সাথে সাথে অসুস্থ নাসরিন বেগমের স্বামী তৌহিদুল ইসলামকে ফোন দিয়ে ঠিকানা
নিশ্চিত হওয়ার পর সঙ্গী পুলিশ ফোর্স সাথে নিয়ে নাসরিন বেগমের বাড়ীতে পৌছে যাই । অসুস্থ নাসরিন বেগম আসলেই জটিল রোগ নিয়ে বেড়ার ঘরের বারেন্দায় শুয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন । তার দুচোখের কোনা দিয়ে ঘরিয়ে অশ্রæ জ¦রছে । নাসরিনের শয্যার পাশে বসিয়ে কি হয়েছে আপা বলতেই অযোরে হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে মুর্চ্ছা হচ্ছে নাসরিন বেগম। নাসরিন বলে, স্যার আমার জীবনটা শেষ করে দিল ডাক্তার শামসুদ্দোহা মুকুল । তার অপচিকিৎসার কারনে ধীরে ধেির মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছি । আমার একটাই ইচ্ছা স্যার আমি মরে গেলে আমার অবুঝ শিশুটির কি হবে সে তো এতিম হয়ে যাবে । স্যার আমাকে আরও কিছু দিন বাঁচতে ইচ্ছা করে স্যার । আমার অবুঝ শিশু জন্য বাচাঁর ইচ্ছা করে স্যার । আমার ভ্যান চালক স্বামীর পক্ষে আমার আর চিকিৎসার খরচ চালানো আর সম্ভব নয় । এসপি স্যারের নির্দেশে এ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেওয়া হয়েছে উন্নত চিকিৎসার জন্য এখন দিনাজপুর এম আব্দরি রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার চিকিৎসা শুরু হয়েছে ।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রæয়ারী গর্ভবর্তী নাসরিন বেগমকে খানসামা উপজেলার পাকেরহাটে লাইফ কেয়ার ক্লিনিকে সিজার করানোর জন্য নিয়ে যান। সেখানে খানাসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন ডাঃ শামসুদ্দোহা মুকুল সিজার করেন। সিজার করার ৬দিন পর্যন্ত সেই ক্লিনিকে চলে নাসরিন বেগমের চিকিৎসা। চিকিৎসা শেষে তাকে বাড়ী নিয়ে গেলে গৃহবধূ নাসরিন বেগমের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। শিশু জন্মের ৮ম দিন আবারও সেই ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয় গৃহবধূ নাসরিন বেগমকে। সেখানে আবারও করা হয় তার অস্ত্রপচার। সেখানকার কর্তব্যরত নার্সরা তাকে জানান, সিজার করার জন্য চিকিৎসক ভুল বশতঃ রোগীর পেটের ভিতর তুলা ও গজ রেখে দিয়েছিলেন। তা অপারেশনের মাধ্যমে বের করা হয়। কিন্তু সেই অপারেশনের পর থেকে রোগী আর সুস্থ্য হতে পারেনি। রংপুর, দিনাজপুর, চিরিরবন্দর উপজেলার রানীরবন্দরে অসংখ্য গাইনী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হলেও তিনি আর সুস্থ্য হতে পারেননি। সর্বশেষ চলতি মাসে দিনাজপুর ইসলামী ব্যাংক কমিউনিটি হাসপাতালের গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাঃ মেহেবুন নাহার মিনুর কাছে নিয়ে যাওয়া হয় গৃহবধূকে। তিনি আগামী ৩মাসের জন্য ওষুধ দিয়েছেন। ৩মাসের মধ্যে ওষুধ খেয়ে যদি রোগী সুস্থ্য না হয় তাহলে রোগীর জড়ায়ু কেটে ফলতে হবে। নইলে জড়ায়ুকে ক্যান্সার হবে। ভবিষ্যতে রোগীকে বাচানো সম্ভব হবে না। চিকিৎসক আমাকে জানিয়েছেন যে, প্রথমে রোগীর সিজার করার জন্য ইনফেকশন হয়েছে। সেই ইনফেকশন তার জড়ায়ু পর্যন্ত চলে গেছে।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo