• স্বাস্থ্য

চিকিৎসায় অনেক পিছিয়ে নওগাঁর সরকারী হাসপাতাল

  • স্বাস্থ্য
  • ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১৫:০৭:৫৮

ছবিঃ সিএনআই

নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর ১১টি উপজেলায় জনসংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। এ জেলাটি চিকিৎসার দিক দিয়ে এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে। কিন্তু তারপরও সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবার মান বেড়েছে। বেসরকারি (প্রাইভেট) ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে রোগীদের সেবার নামে একপ্রকার গলাকেটে টাকা আদায় করার মতো অবস্থা। যদিও কিছু ক্লিনিক ও হাসপাতালে ভাল সেবা দেওয়া হলেও বাঁকীগুলোর অবস্থা হ-য-ব-র-ল। সেখানে স্বাস্থ্যসেবার মান একেবারেই নি¤œমানের। বেশি লাভের আশায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ডাক্তার এর বিপরীতে ওয়ার্ড বয় বা এর সাথে সংশ্লিষ্ট অন্য কাউকে দিয়ে অপারেশন করান।

এতে প্রায় ভুলভাল অপারেশনে রোগী মারা যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জেলার ১১টি উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। চিকিৎসাসেবা প্রদানে ১৯৮৯ সালে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট নওগাঁ সদর হাসপাতাল স্থাপিত হয়। এরপর ২০০৫ সালে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে এপ্রিলে প্রায় ২০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫০ শয্যা বিশিষ্ট ৮ম তলা ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পুরনো ভবনের সাথে নতুন ১৫০শয্যা বিশিষ্ট ভবন যুক্ত হয়ে ২৫০শয্যায় উন্নীত হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ২০২০সালের ৩১ আগষ্টে ২৫০শয্যা জেনারেল হাসপাতালের কার্যক্রম চালানোর জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়া হয়।

তবে পূর্বে যে জনবল দিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হতো ২৫০শয্যার ক্ষেত্রেও তাই রয়েছে। ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল হওয়ার পর থেকে সেবা নিতে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। জেলাবাসীর ভরসার একমাত্র আস্থা এ হাসপাতাল। উপজেলা থেকে সেবা নিতে আসেন রোগীরা। হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বাড়ার পর জেলাবাসীর স্বপ্ন ছিল অন্তত চিকিৎসা সেবার মান বাড়ার পাশাপাশি সেবা পেয়ে উপকৃত হবে। কিন্তু বাস্তবে তার উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। বাস্তবে ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল হলেও কার্যক্রম চলছে ১০০ শয্যার। এই ১০০ শয্যার জন্য যে পরিমাণ চিকিৎসক প্রয়োজন সেটাও নেই।

এতে করে বাড়তি রোগী সামলাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। ২৫০ শয্যার পূর্নাঙ্গ অনুমোদন, জনবল নিয়োগ এবং অবকাঠামোগত সুবিধা দেওয়া হলে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান বাড়ার পাশাপাশি জেলাবাসীদের দূর্ভোগ লাঘব হবে এমনটাই প্রত্যাশা। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১০০শয্যার হাসপাতালে উপ-পরিচালক, শিশু, মেডিসিন, ফরেনসিক মেডিসিন, সার্জারি, চক্ষু, চর্ম ও যৌন, অর্থোপেডিকস, রেডিওলজি ইমেজিং, কার্ডিওলজি, নাক-কান-গলা, গাইনি
এন্ড অবস, প্যাথলজি, নেফ্রোলজি, নিউরোসার্জারি ও মেডিকেল অফিসার মোট ৫৬ জন চিকিৎসকের স্থলে রয়েছে মাত্র ৩৫ জন এর মধ্যে ২৮ নিয়োগ প্রাপ্ত বাকি ৭জন ডেপুটেশন কর্মরত আছেন। নার্স ৮১ এর স্থলে ৮০জন কর্মরত আছেন একটি পদশুন্য হয়েছে। বর্তমানে ১৩ জন মেডিকেল অফিসার দিয়ে ইনডোর ও আউটডোর নিয়ন্ত্রন করা হচ্ছে।

প্রতিদিন আউটডোরে প্রায় ১৫শ থেকে ১৭শ এবং ইনডোরে প্রায় দুই শতাধিক রোগীর চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার সদর উপজেলা ছাড়া বাঁকী ১০টি উপজেলায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। যেখানে ডাক্তারের পদসংখ্যা ৩০৯ জন এর বিপরীতে আছে ১৭৬ জন। অর্থ্যাৎ পদশূণ্য রয়েছে ১৩৩ জন। এছাড়া নার্স/সেবিকা ৩৮৪ জন এর বিপরীতে আছে ৩৫৫ জন। পদশূণ্য রয়েছে ২৯ জন। অসুস্থ ছেলের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। নাজমুল হক বলেন, ডাক্তারের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে হয়ত দিনে ২বার এসে ওয়ার্ডে রোগী দেখে যায়।

এ কারণে হয়ত আমরা ভাল সেবা পাচ্ছি না। যেটুকু সেবা পাচ্ছি তা যথেষ্ট না। ঔষধ কিছুটা পাওয়া গেলেও বাহির থেকে কিনতে হয়। এছাড়া নার্সদেরও কিছুটা অনিহা রয়েছে। নওগাঁ ২৫০শয্যা জেনারেল হাসপাতাল সেবা তত্ত¡াবধায়ক সুফিয়া খাতুন বলেন, নতুন ও পুরাতন মিলে আমাদের হাসপাতালটি ২৫০শয্যা। কিন্তু চিকিৎসক ও নার্স সংকট। আমরা একজনকে চিকিৎসা দিতে আসলে অন্যজনকে অপেক্ষা করতে হয়। আর রোগীদের এতো চাপ যে দাঁড়িয়ে থাকাও কষ্টকর। অনেক সময় তড়িঘড়ি করে দেখে ছেড়ে দিতে হয়। চিকিৎসা সেবাও ঠিকমতো আমরা দিতে পারিনা।

অনেক সময় রোগীর অভিভাবকদের তোপের মুখে পড়তে হয়। নার্সের সংখ্যা বেশি হলে রোগীদের সেবা দিতে সহজ হয়। শুধু জেলাবাসী না বাহিরের জেলা থেকেও এখানে চিকিৎসা নিতে আসে। চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নের দ্রæত জনবল নিয়োগসহ অবকাঠামো প্রদানে দাবী জানান তিনি। জেলায় মোট ক্লিনিক রয়েছে ১০৩টি। এরমধ্যে নিবন্ধনকৃত ৭৫টি এবং নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন ২৮টি। এরমধ্যে সদর উপজেলায় নিবন্ধিত ৩০টি এবং অনিবন্ধিত ১১টি। এছাড়া ডায়গনষ্টিক রয়েছে ১৬২টি। এরমধ্যে নিবন্ধনকৃত ১১৬টি এবং নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন ৪৬টি। এরমধ্যে এরমধ্যে সদর উপজেলায় নিবন্ধিত ৪৫টি এবং অনিবন্ধিত ১৩ টি।

গত ১০ বছরের ব্যবধানে নামে-বেনামে দ্বিগুন গজিয়েছে ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার। জেলা ঔষধ প্রশাসন কার্যালয়ের তথ্যমতে জেলায় প্রায় ৩ হাজার ফার্মেসি রয়েছে। যা সবই চলমান। বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন নওগাঁ শাখার সাবেক সাধারন সম্পাদক মো. আতাউর রহমান খোকা বলেন, জেলায় যে পরিমাণ ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে তার কোন প্রয়োজনই নাই। এরমধ্যে অনেক মানহীন রয়েছে। সংখ্যায় কম হোক সমস্যা নাই, সেবা যেনো ভাল হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সরকার জেলা ও উপজেলায় পর্যায়ে একটা ফি নির্ধারণ করার জন্য আলোচনা হয়েছে।

তারপরও অনেকে নিজেদের মনগড়া ফি ধরে। এটা করা যাবে না। আমরা সময়ে সমিতি থেকে একটা ফি নির্ধারণ করে প্রতিটি ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে দিয়েছি। চিকিৎসাক্ষেত্রে আমরা নওগাঁ এখনো অনেক পিছিয়ে আছি। মেডিকেল কলেজ বা ২৫০ শয্যা হাসপাতাল হয়েছে। কিন্তু কোন সরঞ্জাম ও ডাক্তার দেয়া হয়নি। চিকিৎসকরাও ঝুঁকি নিতে চাননা। জরুরী রোগীদের রেফার্ড করে।

এ কারণে যাদের একটু সামর্থ আছে তারা জেলার বাহিরে বা ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। নওগাঁ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল তত্ত¡াবধায়ক (উপ-পরিচালক) ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী বলেন, ২৫০ শয্যার হাসপাতাল বলা হলেও এখন পর্যন্ত অনুমোদন রয়েছে ১০০ শয্যার। আর এ ১০০ শয্যার হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে এ ১০০ শয্যা হাসপাতাল চালাতে যে পরিমাণ জনবল দরকার তা নেই।

এতে করে চিকিৎসা সেবা ব্যহত হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় থেকে ২৫০শয্যা জেনারেল হাসপাতালের জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেবার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। অনুমোদন পাওয়া গেলে ডাক্তার, সেবিকা ও ঔষধ ও অবকাঠামো সহ সবকিছু দ্বিগুন হবে।

পাশাপাশি চিকিৎসা সেবার মান বাড়বে বলে জানান তিনি। হাসপাতাল থেকে যথেষ্ট পরিমাণ ঔষধ সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, নওগাঁ মেডিকেল কলেজের নিজেস্ব কোন ভৌত অবকাঠামো না থাকায় হাসপাতালের পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ভবন থেকে মেডিকেল কলেজ সরানোর প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo