• বিশেষ প্রতিবেদন

পাবনায় ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে ৩০ পরিবারের জীবিকা নির্বাহ

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১৫:৩৭:৩৪

ছবিঃ সিএনআই

পাবনা প্রতিনিধিঃ পাবনার চাটমোহরে অন্তত ত্রিশটি পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে ঘোড়ার গাড়িকে কেন্দ্র করে। কালক্রমে এ এলাকায় ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়ির সংখ্যা কমে গেছে। তবে, এখনো কিছু মানুষ শখের বশে ঘোড়া পালন করেন। আবার কিছু মানুষ জীবিকা নির্বাহের তাগিদে ঘোড়া পালন করেন। ঘোড়ার গাড়ি চালিয়েই পরিবারের ব্যয়ভার মেটাচ্ছেন তারা।

উপজেলার লাঙ্গলমোড়া গ্রামের কালু মন্ডল (৬০) জানান, তিন বছর পূর্বে সত্তর হাজার টাকায় ঘোড়া এবং ঘোড়ার গাড়িটি কেনেন তিনি। সেই থেকে এই ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়িই তার পরিবারের জীবন-জীবিকার উৎস। মাঘ-ফাল্গুন মাসে কৃষকের জমি থেকে সরিষা বহনের কাজ করেন। চৈত্র-বৈশাখ মাসে রসুন, গম, খেশারি, মশুর, সরিষাসহ অন্যান্য ফসল বহন করেন। জৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে বোরো ধান এবং কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসে বিল থেকে আমন ধান বহনের কাজ করেন। বিভিন্ন হাট-বাজারে মানুষের পণ্য আনা-নেওয়ার কাজ করেন। যখন এলাকায় কাজ থাকে না তখন ঘোড়া গাড়ি নিয়ে চলে যান অন্য জেলায়।

ছাইকোলা ফকিরপাড়া গ্রামের শাহজাহান প্রামাণিকের ছেলে রিফিল হোসেন (২৪) জানান, আট বছর যাবত ঘোড়ার গাড়িতে ভর বহন করে আসছেন তিনি। এ কাজ করে স্ত্রী ও এক মেয়েসহ তার তিনজনের পরিবারটি চালিয়ে আসছেন তিনি। জমাজমি নেই। কাজ পেলে প্রতিদিন গড়ে হাজার খানেক টাকা পান। ছোলা, ধানের গুঁড়াসহ ঘোড়ার অন্যান্য খাবারের পেছনে ব্যয় করতে হয় প্রায় দুইশ টাকা। ফসলের মওসুমে প্রতিদিন আটশ টাকার মতো উপার্জন থাকে তার।

চরনবীন গ্রামের ইবাদ আলী মোল্লা (৫৬) জানান, কয়েক বছর যাবত ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন তিনি। ছেলে কৃষকের কাজ করে কিছু উপার্জন করে। এলাকায় কাজ না থাকলে বগুড়া, কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে ভর বহনের কাজ করেন। ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে সাতজনের পরিবারের ব্যয়ভার বহন করছেন তিনি। তিনি আরও জানান, চাটমোহরের বরদানগর গ্রামে ঘোড়ার গাড়ির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। উপজেলার প্রায় ত্রিশজন ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।

এ ব্যাপারে চাটমোহর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ আব্দুর রহিম কালু জানান, এক সময় চাটমোহরের অনেকেই ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। অনেক শৌখিন মানুষ ঘোড়া পালন করতেন। ঘোড়ায় চড়ে বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করতেন। বাহাজে অংশ নিতেন। এলাকার মানুষ ঘোড়দৌড় উপভোগ করত। এ ঐতিহ্য এখন বিলুপ্তির পথে।

উল্লেখ্য, প্রায় ৪ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে দ্রুত গতির চতুষ্পদ প্রাণী ঘোড়াকে পোষ মানিয়ে মানুষ গৃহে পালন শুরু করেন। এ প্রাণী তার প্রভুকে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছে দিতে সক্ষম। এক সময় যুদ্ধক্ষেত্রে ঘোড়ার ব্যাপক ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়েছে। ঘোড়দৌড় মানুষের মনোরঞ্জনে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo