• অর্থনীতি

শ্রীপুরে সরিষার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি 

  • অর্থনীতি
  • ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১৬:১৮:৩৮

ছবিঃ সিএনআই

শ্রীপুর প্রতিনিধিঃ শীতের হাওয়ায় ফুলের সুভাস মোহিত করছে চারিপাশ। চারদিকে সরিষা ফুলের সমারোহে মাঠে ছড়াচ্ছে নান্দনিক সৌন্দর্য, আর সরিষা ফুলকে ঘিরে মধু আহরণে ফুলে ফুলে বসছে মৌমাছি। পড়ন্ত বিকেলের মিষ্টি রোদে সরিষা ফুলগুলো বাতাসে দোল খেতে থাকে। ফুলগুলো তাদের কলি ভেদ করে সুবাস ছড়িয়ে দিচ্ছে চারদিকে। এ যেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের এক হলুদভূমি। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ জুড়ে ফুটে আছে  হলুদ সরিষার ফুল। সকালে সূর্যের কিরণ প্রতিফলিত হবার সঙ্গে সঙ্গেই সরিষা ফুলের সমারোহে হেসে ওঠে চারদিক।

শ্রীপুর উপজেলার মাওনা,তেলিহাটি,বরমী ,কাওরাইদ ,গোসিংগা, রাজাবাড়ি এবং প্রহলাদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সরিষার চাষের এ রকম দৃশ্য দেখা যায়। চলতি মৌসুমে শ্রীপুর উপজেলায় ব্যাপক পরিমাণ সরিষার আবাদ হয়েছে। সরিষা চাষ প্রচুর লাভজনক হওয়ায় এবার অনেক কৃষক যোগ দিয়েছেন। এখন আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো ফলন পাওয়ার আশা করছেন তারা।চলতি বছর  ১৬০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে আবাদ হয়েছে ২১২ হেক্টর জমিতে। মাঠের পর মাঠ চোখ ধাঁধানো হলুদ ফুলের সমাহার। আর এ ফুলের মৌ-মৌ ঘ্রাণ ও মৌমাছির গুনগুন শব্দের নয়নাভিরাম চিরচেনা সেই অপূর্ব নৈসর্গিক দৃশ্য। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার  বিভিন্ন ইউনিয়নের মাঠে এখন শুধু সরিষা ফুলের হলুদ রঙের চোখ ধাঁধানো বর্ণিল সমারোহ।  স্বল্প খরচ আর কম সময়ে সরিষা চাষ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায়। উন্নত জাতের সরিষা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। ফলে প্রতি বছরই বাড়ছে সরিষা চাষ।প্রচলিত দেশি সরিষার চেয়ে বারি-১৪ ও বারি -১৫ ফলন বেশি হওয়ায় চাষিরা আগ্রহী হচ্ছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। অনেকেই আমন ধান সংগ্রহের পর জমি ফেলে না রেখে সরিষা চাষ করেছেন। এরপর আবার ধান রোপণ করবেন কৃষকেরা। তাতে করে একই জমিতে বছরে তিনবার ফসল উৎপাদন হচ্ছে।উপজেলার  বিভিন্ন মাঠে চাষ হয়েছে উন্নত জাতের সরিষা বারি-১৪ ও বারি -১৫। গাছের উচ্চতা হয় দেড় থেকে ২ ফুটের মতো। আগে সরিষা গাছ বড় হলেও ফলন কম হতো। নতুন জাতের ছোট আকারের এ সরিষা গাছের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত ফল আসছে। বীজ বপনের ৭০ দিনের মধ্যেই খেত থেকে সরিষা সংগ্রহ করা যায়। চলতি বছরে উপজেলা সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছে উপজেলা কৃষি সম্পাসারণ অধিদপ্তর।

বিভিন্ন গ্রামের সরিষা চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবার প্রতি বিঘা জমি থেকে ৬-৭ মণ সরিষা উৎপাদনের আশা করছেন। লাভজনক এবং সরিষা চাষের অনুকূল পরিবেশের কারণে এবার চলতি রবি মৌসুমে শ্রীপুরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে।

উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নিজ মাওনা  গ্রামের আকবর আলীর ছেলে  সরিষা চাষি জুলফিকার আলী  বলেন, নিজের প্রয়োজন মেটাতে প্রতি বছর ২ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করি। এবার আড়াই  বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। আশা করছি অন্য বছরের তুলনায় এবার সরিষার ফলন ভালো হবে। নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে ১২-১৫ হাজার টাকার সরিষা বিক্রি করতে পারব।

মাওনা গ্রামের সরিষা চাষি আব্দুল হেকিম জানান, প্রতিবিঘা জমিতে সরিষা চাষে খরচ হয় সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা। প্রতি মণ সরিষা বিক্রি করা যায় ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫শ টাকা দরে। প্রতি বিঘাতে গড়ে সাত মণ সরিষা উৎপাদন হলে বিঘা প্রতি ১৫-১৬ হাজার টাকা লাভ করা যায়। এছাড়া সরিষা আবাদে যেমন সেচের প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া কম সময়ে সরিষা আবাদ করা যায়। সরিষার বড় শত্রু জাব পোকা। এবার জাব পোকার আক্রমণ দেখা যাচ্ছে না।সরিষার তেলের রয়েছে অনেক ওষুধি গুণ। সরিষার খৈল পশুখাদ্য ও জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধিও কাজে ব্যবহার হয়। সরিষার গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া জমিতে সরিষার আবাদ করলে ওই জমিতে সরিষার পাতা পড়ে জমির খাদ্য চাহিদা অনেকাংশে মিটিয়ে থাকে।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন,উন্নত জাত যেমন- বারি- ১৪, বারি-১৫  জাতের সরিষার চাষ হচ্ছে। তৈল জাতীয় ফসলের ৪০ শতাংশ আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে ৩ বছরের বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের মাঝে উন্নত জাতের বীজ বিতরণ ও কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অব্যাহত থাকবে।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo