• বিশেষ প্রতিবেদন

হুমকির মুখে সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ০৪ আগস্ট, ২০২৩ ১৭:০৭:০৮

ছবিঃ সিএনআই

ক্সবাজার প্রতিনিধিঃ  ভারী বৃষ্টি ও সাগরের জোয়ারের প্রভাবে সাগরের পানির তোড়ে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের আশপাশের জিও ব্যাগ গুলো ফেটে পড়ছে। এতে মাটি সরে মূল পার্কে লবনাক্ত পানি ঢুকে পড়ার উপক্রম হয়েছে। ইতিমধ্যে এর পার্কে যাওয়ার মূল সড়কে ভাঙন ধরেছে। নতুন করে ৩ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভে কমপক্ষে ১০ স্পটে এই ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এতে সাবরাং ট্যুরিজম পার্কেও ব্যাপক ভাংগনের আশংকা করছেন স্হানীয়রা। স্হানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন,' সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের দক্ষিণ ও উত্তর পাশে এখন থেকে পরিকল্পিত রক্ষা বাঁধ জরুরি হয়ে পড়েছে। না হয় সাগরের প্রবল স্রোতের তোড়ে ব্যাপক ভাংগনের কবলে পড়বে পার্কটি। "

বঙ্গোপসাগরের ঢেউ আর বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত ঘেঁষে সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের সাবরাংয়ে ট্যুরিজম পার্কের কাজ শুরু হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের পাশে এই ট্যুরিজম পার্কটি ১ হাজার ৪৭ একর জমির ওপর থাইল্যান্ডের পাতায়ার সৈকতের আদলে গড়ে তোলা হচ্ছে এটি। পার্কটির চলমান কাজ শেষ হলে প্রতিদিন সেখানে ৪০ হাজার পর্যটক যাতায়াত করতে পারবেন। সাবরাং পর্যটন অঞ্চল চালু হলে মাত্র আধা ঘণ্টায় যাওয়া যাবে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে। সমুদ্রসৈকত দেখার পর পর্যটকরা সাবরাং পর্যটন অঞ্চল ও সেন্টমার্টিন অল্প সময়ে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। কক্সবাজারের কলাতলী থেকে টেকনাফের যেখানে মেরিন ড্রাইভ শেষ হয়েছে, তার পাশের জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে সাবরাং পর্যটন অঞ্চল।

সাবরাং পর্যটন অঞ্চল হবে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা পর্যটন অঞ্চল। বিনিয়োগ হবে কয়েক হাজার কোটি টাকা। সেখানে থাকবে পরিবেশবান্ধব শহর, সুন্দরবনের থিম পার্ক ও নাইট সাফারি, রয়্যাল ক্যাসিনো, গলফ ক্লাব, অ্যাকোয়ারিয়াম, জাদুঘর, হেরিটেজ পার্ক, শপিং মল, রেস্টুরেন্ট, ক্লাবসহ অন্যান্য সুবিধা। এছাড়া থাকছে ১০০ শয্যার হাসপাতাল এবং একটি স্কুলও। 

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনটি তারকা হোটেল নির্মাণকাজ শুরুর মধ্য দিয়ে সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। কিন্তু এখনো সেই আনুষ্ঠানিকর মধ্যেই রয়েছে প্রকল্প।

গ্রেট আউটডোর এন্ড অ্যাডভেঞ্চার লিমিটেড, গ্রিন অরচার্ড হোটেল এন্ড রিসোর্টস লিমিটেড এবং সানসেট বে লিমিটেড নামের তিনটি প্রতিষ্ঠান ৫ দশমিক ৫ একর জমিতে ৩২ দশমিক ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২৫৭ কোটি টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে পাঁচ তারকা ও তিন তারকা মানের হোটেলসহ পর্যটনবান্ধব বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের এই কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছে ।

এছাড়া ৯টি পর্যটনবান্ধব প্রতিষ্ঠানের আরো ২১২ দশমিক ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করার কথা রয়েছে। এই বিনিয়োগকারীর তালিকায় নেদারল্যান্ডস ও সিঙ্গাপুরের দুটি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। পাতায়ার আদলেই হচ্ছে সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক। আর এখানে প্রতিদিন যাতায়াত করতে পারবে ৪০ হাজার পর্যটক। বর্তমানে এই পর্যটন অঞ্চলের প্রশাসনিক ভবন ও ভূমি উন্নয়ন, প্রতিরক্ষা বাঁধ, সেতু-কালভার্ট তৈরিসহ বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে।

সম্প্রতি সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় টেকনাফের সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের ভূমি উন্নয়ন বাবদ ১৮০ কোটি ৭৯ লাখ ৯ হাজার ২৪৮ টাকা অনুমোদন করা হয়েছে।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) কর্তৃক ‘সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক’ এর ‘ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্ক ইন সাবরাং পার্ক’ প্যাকেজ নম্বর ডব্লিউ-০৯ এর পূর্ত কাজ যৌথভাবে পেয়েছে টিডিসি এবং জেডএইচইসি ঢাকা। এতে ব্যয় হবে ১৮০ কোটি ৭৯ লাখ ৯ হাজার ২৪৮ টাকা। এর আগে কক্সবাজারের সীমান্ত শহর টেকনাফের সাবরাংয়ে মিঠাপানি সরবরাহের বড় পরিকল্পনা হাতে নেয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আগামী ৩০ বছরে ৬ ধাপে ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে। অতিরিক্ত লবণাক্ত পানিতে তৈরি হওয়া সংকট দূর করে বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরি করতে এমন পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। ওই প্রকল্পের আওতায় ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উখিয়ার পাহাড়ি অঞ্চল থেকে সরবরাহ লাইনের মাধ্যমে মিঠা পানি যাবে।

বেজার নিজস্ব উদ্যোগে নেয়া এই পরিকল্পনা অনুসারে ২০৫০ সাল পর্যন্ত ছয়টি ধাপে বাস্তবায়ন হবে এই প্রকল্প। সব মিলিয়ে সম্ভাব্য খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। প্রথম ধাপের কাজ হবে ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। এতে খরচ হবে ১৪৪ কোটি টাকা। দ্বিতীয় ধাপে খরচ হবে আরো ৮ কোটি টাকা। সেন্টমার্টিনের পাশাপাশি পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা অত্যাধুনিক এই অঞ্চল ব্যাপক পর্যটক আকর্ষণে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে বেশ কিছু বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।  এসব প্রতিষ্ঠানকে অতি দ্রুত নির্মাণকাজ শুরু করার তাগিদ দেন ইউসুফ হারুন। পাশাপাশি এই অঞ্চলের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে রেখে পাঁচ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকত পর্যটকদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে বলেও জানান বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান।

প্রসঙ্গত, গত ২০২২ সালে ২০ নভেম্বর গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে কক্সবাজারের টেকনাফে সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের প্রশাসনিক ভবনসহ ৫০টি শিল্প ও অবকাঠামোর উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

কিন্তু সাগরের প্রবল স্রোতের তোড় পরিকল্পিত ভাবে ব্যবস্হনা করা না গেলে টেকনাফ টু কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়ক ও সাবরাং ট্যুরিজম পার্কটি রক্ষা করা কঠিন হবে বলে মনে করেন স্হানীয় লোকজন। 

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: কামরুজ্জামান বলেন," মেরিন ড্রাইভ সড়কে ভাংগন ও সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের আশপাশের সুরক্ষার বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। দ্রুতই এখানে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করা হবে বলেও জানান তিনি। 

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo